হাতাহাতিতে পণ্ড বিএনপির সদস্য সংগ্রহ অভিযান

পুলিশ দেখে দায়িত্বপ্রাপ্তদের চম্পট

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ২৪ এপ্রিল, ২০২২ at ৫:২৪ পূর্বাহ্ণ

দুই গ্রুপের হাতাহাতিতে পণ্ড হয়েছে নগরের দক্ষিণ কাট্টলী ওয়ার্ডে বিএনপির সাংগঠনিক টিমের সদস্য সংগ্রহ অভিযান। গতকাল শনিবার দুপুর আড়াইটার দিকে ওয়ার্ডটির বশির শাহ মাজার সংলগ্ন ছদু চৌধুরী বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছালে সাংগঠনিক টিমের সদস্য কমান্ডার শাহাব উদ্দিন, নুরুল্লাহ বাহার ও ইকবাল চৌধুরী পালিয়ে যান বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। এছাড়া টিম প্রধান এস এম সাইফুল আলম উপস্থিতই হননি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক পুনর্গঠন টিমের (হালিশহর, খুলশী ও পাহাড়তলী) উদ্যোগে সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু হয় দুপর দুইটার দিকে। এসময় স্থানীয় বিএনপির দুই গ্রুপ পরস্পরের বিরুদ্ধে দলীয় কর্মকাণ্ডে সক্রিয় নন এমন ব্যক্তি ও অন্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্তদের সদস্য করার চেষ্টা এবং ওয়ার্ড বিএনপির সিনিয়র নেতাদের দাওয়াত না দেয়াসহ একাধিক অভিযোগ এনে কথা কাটাকাটিতে জড়িয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে তা হাতাহাতিতে রূপ নেয়। এসময় ব্যানার নিয়ে টানা হেঁচড়া এবং চেয়ার ছুঁড়ে মারার ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছালে সাংগঠনিক টিমের সদস্যরা পালিয়ে যাওয়ায় পুরো কর্মসূচি পণ্ড হয়ে যায়।

বিএনপি নেতারা জানান, ওয়ার্ড বিএনপি নেতা সেলিম বাঙালি, হারুন এবং জাফর দলীয় কর্মসূচিতে ছিল না এমন ব্যক্তিদের দিয়ে সদস্য ফরম পূরণ করার অভিযোগ তুলে তার প্রতিবাদ করেন শ্রমিক দলের সৈয়দ আলমগীর ও তার অনুসারীরা। এসময় তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে দুই পক্ষের অনুসারীরা হাতহাতিতে জড়িয়ে পড়েন। তবে এদের কয়েকজনের দাবি, প্রোগ্রামে ওয়ার্ড বিএনপির সবাইকে দাওয়াত না দেয়াকে কেন্দ্র করে ঘটনার সূত্রপাত হয়েছে।

ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য নূর সেলিম বাঙালি দৈনিক আজাদীকে বলেন, তেমন কিছু হয়নি। কমিটির অনেক যুগ্ম আহ্বায়ককে বলা হয়নি, তারা এসে কেন দাওয়াত দেয়া হয়নি তা জানতে চেয়েছেন। যুগ্ম আহ্বায়ক জাফর আহমদ সফিউল্লাহর (সদস্য সচিব) কাছে জানতে চেয়েছেন- আমরা যারা কমিটিতে আছি তাদের একটু জানালে কী হয়। না বলায় আমরা তো সদস্য সংগ্রহ করতে পারি নাই। জাস্ট এতটুকু, আর কিছু না। তিনি বলেন, কোনো চেয়ার মারামারি হয়নি। মৌখিক বাড়াবাড়ি হয়েছে। আর কিছু না। ওয়ার্ডের প্রোগ্রামের নিয়ম হচ্ছে সবাইকে বলা। কিন্তু এখানে না বলাতে সমস্যাটা হয়েছে।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত শ্রমিকদল নেতা সৈয়দ আলমগীর আজাদীকে বলেন, যারা কোনোদিন রাজপথে ছিল না তাদের এবং আওয়ামী-যুবলীগের অনেককে দিয়ে সদস্য ফরম পূরণ করা হচ্ছিল। আমি বাধা দিয়েছি। বলেছি এসব করিও না। তখন আমাকে সেলিম বাঙালি ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। জানতে চাইলে সাংগঠনিক টিমের সদস্য কমান্ডার শাহাব উদ্দিন বলেন, তেমন কোনো সমস্যা হয়নি। চেয়ার মারামারিও হয়নি। দাওয়াত নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। এক গ্রুপ বলেছে দাওয়াত দেয়া হয়েছে, আরেক গ্রুপ বলেছে দাওয়াত পায়নি। এটা নিয়ে স্বাভাবিক কিছু তর্ক-বিতর্ক হয়েছে আহ্বায়ক ও যুগ্ম আহ্বায়কদের মধ্যে। তবে সেটা সমাধান হয়ে যায়। কয়েকজন বলেছে তাদের লোক আসতে পারেনি। আমি বলেছি রমজানে আর ঝামেলা করার দরকার নাই। ঈদের পরে আরেকটা ডেট দিয়ে সদস্য সংগ্রহ করা হবে।
ওয়ার্ড বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল আলম বলেন, কয়েকজন যাদের সদস্য করবেন তাদের না এনে জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে আসে। এটা হয় নাকি, এভাবে কী সদস্য করা যায়? এখন সময় ভালো হচ্ছে তো তাই আওয়ামী লীগের লোকদের কার্ড নিয়ে আসছে। কিন্তু লোক না আনলে আমরা তো সদস্য করব না। সেলিম, হারুন জাফর এ ধরনের ভোটার কার্ড নিয়ে আসে বলে জানান তিনি।

কিন্তু তাদের বক্তব্য হচ্ছে আপনারা দাওয়াত দেননি? এ অভিযোগ প্রসঙ্গে সাইফুল আলম বলেন, এখানে তিনটা ইউনিট। দুইটা হয়েছে। যখন যে ইউনিটে হয়েছিল তখন সে ইউনিটের লোকদের বলা হয়েছে। এ বিষয়ে সাংগঠনিক টিমের প্রধান ও নগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এস এম সাইফুল আজাদীকে বলেন, কোনো ঝামেলা হয়নি। সদস্য পদ পূরণ নিয়ে তো টুক-টাক বাকবিতণ্ডা হয়। যেমন কেউ সদস্য পদ নিতে আসলে তাকে না চিনলে নেতৃবৃন্দ হস্তক্ষেপ করেন। অনুপ্রবেশকারী, অসৎ মানসিকতা নিয়ে কেউ এলে তাকে আমরা মেম্বার করি না। ক্লিন ইমেজ, সৎ এবং ভালো লোকদের করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ওই ওয়ার্ডে আগে দুই দফা সদস্য সংগ্রহ অভিযান হয়েছে। প্রথম দুইবার আমি ছিলাম। ইতোমধ্যে ২০০ ফরম পূরণ হয়ে গেছে। সামনে ওয়ার্ড কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে নিজেদের পছন্দে লোকদের সদস্য করার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের কোনো চয়েস নাই। নিরপেক্ষভাবে করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে পাহাড়তলী থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান আজাদীকে বলেন, ঘটনাটা আমার নলেজে নাই। আমি খবর নিয়ে দেখছি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদুই আ. লীগ নেতাকে মারধর করলেন সাবেক এমপি বদি
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানোয় গুরুত্ব