হাট বাড়লেও কমেছে রাজস্ব আদায়

চসিকের ব্যবস্থাপনায় কোরবানির পশুর হাট ।। দুটির দরপত্রে অংশ নেয়নি কেউ ।। যততত্র হাট বসানোকে দুষলেন মেয়র

মোরশেদ তালুকদার | সোমবার , ১৯ জুন, ২০২৩ at ৫:১৩ পূর্বাহ্ণ

আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে নগরে অস্থায়ী সাতটি পশুর হাট বসবে; যা গতবারের চেয়ে চারটি বেশি। হাটগুলো বসবে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) ব্যবস্থাপনায়। তবে এবার হাটের সংখ্যা বাড়লেও ইজারা দিয়ে গতবারের চেয়ে রাজস্ব আদায় কমেছে সংস্থাটির। টাকার অংকে যা ১ কোটি ৭৯ লাখ ৭৪ হজার টাকা। এছাড়া চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ৯টি পশুর হাট বসানোর অনুমতি দিলেও চসিকের আহূত দরপত্রে দুটি বাজারের বিপরীতে কেউ অংশ নেয়নি। ফলে এ দুই বাজার থেকেও চসিক কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব পায়নি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিগত সময়ে অনুমোদিত পশুর হাটের বাইরেও অনুমোদনহীন অনেক বাজার বসে নগরে; যার প্রভাব পড়ে অনুমোদিত হাটে। আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন ইজারাদাররা। ফলে এবার পশুর হাট নিয়ে আগ্রহ হারান তারা। তাছাড়া এবার জেলা প্রশাসন বাজার বসানোর অনুমতি দিয়েছে শেষ মুহূর্তে। ফলে সময় বেশি না থাকায় কাঙ্ক্ষিত দর না পেলেও পুনরায় দরপত্র আহ্বানের সময় পায়নি চসিক। তাই সরকারি মূল্যের চেয়ে কম দর পেলেও ইজারাদার নিয়োগে বাধ্য হয় সংস্থাটি।

চসিকের রাজস্ব বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ১৪ জুন ৯টি বাজারের জন্য দরপত্র আহ্বান করে চসিক। গতকাল দরপত্র বাক্স খোলা হয়। এতে সাতটি বাজারের বিপরীতে ২২টি দরপত্র জমা পড়ে। পরে সর্বোচ্চ দরদাতাকে ইজারাদার হিসেবে চূড়ান্ত করা হয়। ইজারাদার নিয়োগ করা বাজারগুলোর বিপরীতে চসিক ৩ কোটি ১৩ লাখ ৯৬ হাজার টাকা রাজস্ব পাবে। অথচ গতবার শুধুমাত্র তিনটি অস্থায়ী বাজার দিয়ে রাজস্ব পায় ৪ কোটি ৯৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা। এ প্রসঙ্গে সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী আজাদীকে বলেন, মুরগির হাটের মতো যেখানে সেখানে কোরবানির পশুর হাট বসে যায়। অলিগলি যেখানে সেখানে কোরবানি পশু বিক্রি হয়। ক্রেতারাও হাতের কাছে পেয়ে সেখান থেকে পশু কিনে নেয়। এতে যারা বাজার ইজারা নেয় তাদের লোকসান দিতে হয়। গত বছর যারা ইজারা নিয়েছিল তাদের বেশিরভাগই লোকসান দেয়। ফলে বাজার ইজারা নিয়ে তারা আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। বিবিরহাট বাজার থেকে একসময় প্রচুর রাজস্ব আসত। বাজারটা প্রায় শেষ হয়ে গেছে। সাগরিকার মতো বড় বাজারেরও একই অবস্থা হওয়ার পথে।

তিনি বলেন, যেখানে সেখানে বসা বাজারের বাইরে অনেক এগ্রো ফার্ম রয়েছে। এর মধ্যে ভুয়া এগ্রো ফার্মও থাকে। যাদের নিজেদের ১০১২টি গরু থাকলেও কোরবানের সময় বিভিন্ন জায়গা থেকে গরু সংগ্রহ করে নিজেদের বলে চালিয়ে দেয়। এটারও প্রভাব পড়ে ইজারা দেওয়া বাজারে। কর্ণফুলী পশুর হাট ইজারা দিলাম। অথচ তার কাছেই ফিরিঙ্গি বাজারে একটা এগ্রো ফার্মকে অনুমতি দিয়েছে জেলা প্রশাসন। সেখান থেকে আমরা কোনো রাজস্ব পাব না।

ভবিষ্যতে চসিকের ব্যবস্থাপনায় বসা বাজারের প্রতি ইজারাদারদের আগ্রহ না হারানোর জন্য এবার যত্রতত্র বসা অনুমোদনহীন বাজারের বিরুদ্ধে অ্যাকশন নেয়া হবে বলে জানান মেয়র। তিনি বলেন, আমাদের ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে অভিযান চালানো হবে।

কোন বাজারের বিপরীতে কত রাজস্ব : চসিক সূত্রে জানা গেছে, ইজারাদার নিয়োগ করা বাজারগুলোর মধ্যে কর্ণফুলী পশুর বাজার (নূর নগর হাউজিং এস্টেট অথবা বহদ্দারহাট এক কিলোমিটার হতে শাহ আমানত ব্রিজের উত্তর পাশ পর্যন্ত) থেকে চসিকের রাজস্ব আদায় হবে ১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। গতবার (২০২২) এ বাজার ইজারা দিয়ে চসিক ৩ কোটি ৭৭ লাখ টাকা রাজস্ব পায়। এর আগে ২০২১ সালে ২ কোটি ২০ হাজার টাকা এবং ২০২০ সালে ২ কোটি ৩৭৭ টাকা রাজস্ব পায়। তাছাড়া এবার এ বাজারের সরকারি মূল্য (বিগত তিন বছরের গড় মূল্যের উপর ৬ শতাংশ বৃদ্ধি করে) ধরা হয় ২ কোটি ৭৪ লাখ ৬১ হাজার ৩৩৩ টাকা। অর্থাৎ এবার কর্ণফুলী পশুর বাজার ইজারা দিয়ে সরকারি মূল্যের চেয়েও কম রাজস্ব পাচ্ছে চসিক।

এছাড়া ৪১ নং দক্ষিণ পতেঙ্গা ওয়ার্ডের বাটারফ্লাই পার্কের দক্ষিণে টি কে গ্রুপের খালি মাঠেও পশুর হাট বসবে এবার। বাজারটি ইজারা দিয়ে এবার চসিক রাজস্ব পাচ্ছে মাত্র ১৫ লাখ টাকা। অথচ সরকারি মূল্য ছিল ৩৭ লাখ সাড়ে ৮৯ হাজার টাকা। গতবার বাজারটি ইজারা দেওয়া হয়নি। এর আগে ২০২১ সালে এ বাজার ইজারা দিয়ে ২৬ লাখ টাকা রাজস্ব পায় চসিক।

কর্ণফুলী ও পতেঙ্গাস্থ বাজার দুটির বাইরে বাকি পাঁচটি বাজারে এবারই প্রথম ইজারাদার নিয়োগ দেয়া হয়। বাজারগুলোর মধ্যে ৪০ নং উত্তর পতেঙ্গা ওয়ার্ডের পূর্ব হোসেন আহম্মদ পাড়া সাইলো রোডের পাশে টিএসপি মাঠে বসা হাটের বিপরীতে ১১ লাখ ৫১ হাজার টাকা, একই ওয়ার্ডের মুসলিমাবাদ রোডের সিআইপি জসিমের খালি মাঠে বসা হাটের বিপরীতে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা, ২৬ নং ওয়ার্ডের বড়পোল সংলগ্ন গোডাউনের পরিত্যক্ত মাঠে বসা হাট ইজারা দিয়ে ৪ লাখ টাকা, ৩ নং পাঁচলাইশ ওয়ার্ডের ওয়াজেদিয়া মোড়ে হাট ইজারা দিয়ে ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা এবং ৩৯ নং দক্ষিণ হালিশহর ওয়ার্ডের আউটার রিং রোডস্থ সিডিএ বালুর মাঠে বসা হাট ইজারা দিয়ে ৮৫ লাখ টাকা রাজস্ব পায় চসিক।

গতবার খেজুরতলা বেড়িবাঁধ সংলগ্ন খালি মাঠে বসা পশুর হাট ইজারা দিয়ে চসিকের ৫০ লাখ ৫০৯ হাজার টাকা রাজস্ব আদায় হয়। এবারও দরপত্র আহ্বান করা হয় বাজারটির। তবে এতে কেউ অংশ নেয়নি। এছাড়া প্রথবারের মতো ৪০ নং পতেঙ্গা ওয়ার্ডের মুসলিমাবাদ টি কে গ্রুপের খালি মাঠে বাজার বসানোর জন্য দরপত্র আহ্বান করলেও কেউ অংশ নেয়নি।

চসিকের স্টেট অফিসার রেজাউল করিম আজাদীকে বলেন, কাঙ্ক্ষিত দর না পেলেও সর্বোচ্চ দরদাতাকে ইজারাদার নিয়োগ করা হয়। কারণ সময় না থাকায় পুনঃবিজ্ঞপ্তি প্রচার করারও সুযোগ নেই।

চসিকের রাজস্ব শাখার তথ্য অনুযায়ী, চসিক এবার ২৩টি অস্থায়ী হাট বসানোর উদ্যোগ নেয়। এজন্য ১১ মে জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করে চসিক। পরে জেলা প্রশাসন সিএমপির মতামত নিয়ে ৯টি হাট বসানোর জন্য ১৪ জুন অনুমতি দেয় চসিককে। বাজার শুরুর আগে ইজারাদার নিয়োগের জন্য চসিক সময় পায় মাত্র ৫ দিন।

জানা গেছে, অস্থায়ী হাটগুলোর বাইরে চসিকের ব্যবস্থাপনায় ৩টি স্থায়ী পশুর হাট আছে নগরে। এগুলো হচ্ছে সাগরিকা পশুর বাজার, বিবিরহাট গরুর হাট ও পোস্তারপাড় ছাগলের বাজার। সাগরিকা ও পোস্তার পাড়ে ইজারাদার নিয়োগ করা হয়েছে। বিবিরহাটে দুইবার দরপত্র আহ্বান করলেও কেউ সাড়া দেয়নি। বর্তমানে সেখানে খাস কালেকশনের মাধ্যমে রাজস্ব আদায় করে চসিক। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ২০ জুন থেকে ২৯ জুন পর্যন্ত স্থায়ীঅস্থায়ী সবগুলো হাটে প্রতিদিন পশু বিকিকিনি হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঈদের ছুটি বাড়ছে কিনা জানা যাবে আজ
পরবর্তী নিবন্ধমাছ ধরতে গিয়ে স্রোতে ভেসে যাওয়ার ১৭ ঘণ্টা পর যুবকের লাশ উদ্ধার