হাজী মোহাম্মদ দানেশ : তেভাগা আন্দোলনের অন্যতম নেতা

| মঙ্গলবার , ২৮ জুন, ২০২২ at ৬:০৩ পূর্বাহ্ণ

হাজী মোহাম্মদ দানেশ। কৃষকনেতা ও রাজনীতিক। তেভাগা আন্দোলনের অন্যতম নেতা। দিনাজপুর জেলার সুলতানপুর গ্রামে ১৯০০ সালে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৩১ সালে ইতিহাসে এম.এ এবং ১৯৩২ সালে বি.এল ডিগ্রি লাভ করে হাজী দানেশ দিনাজপুরে আইনব্যবসা শুরু করেন।

হাজী দানেশ ১৯৩৮ সালে বঙ্গীয় প্রাদেশিক কমিউনিস্ট পার্টির অঙ্গসংগঠন কৃষক সমিতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন এবং উত্তরবঙ্গে কৃষক আন্দোলন সংগঠিত করেন। তাঁর নেতৃত্বে দিনাজপুর জেলায় টোল আদায় বন্ধ ও জমিদারি উচ্ছেদের দাবিতে কৃষক আন্দোলন জোরদার হয়। নীলফামারি জেলার ডোমারে ১৯৪২ সালে অনুষ্ঠিত বঙ্গীয় কৃষক সম্মেলনের অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন হাজী দানেশ। সম্মেলনের পরপরই তিনি গ্রেফতার হন এবং দীর্ঘদিন কারাভোগ করেন।

বর্গাচাষীদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে তিনি উত্তরবঙ্গে তেভাগা আন্দোলন সংগঠিত করেন। হাজী দানেশ ১৯৪৫ সালে মুসলিম লীগে যোগ দেন। ১৯৪৬ সালে মুসলিম লীগ থেকে বহিষ্কৃত হন। ঐ বছরই তিনি বঙ্গীয় সরকার কর্তৃক গ্রেফতার হন এবং ১৯৪৭ সালে মুক্তিলাভ করেন। এরপরই তিনি দিনাজপুর সুরেন্দ্রনাথ কলেজে ইতিহাসের অধ্যাপক পদে যোগ দেন। হাজী দানেশ ১৯৫২ সালে গণতন্ত্রী দল নামে একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেন। ১৯৫৩ সালের ডিসেম্বরে গণতন্ত্রী দল যুক্তফ্রন্টে যোগ দেয়। যুক্তফ্রণ্ট মনোনীত প্রার্থী হিসেবে হাজী দানেশ ১৯৫৪ সালে দিনাজপুর থেকে পূর্ববঙ্গ আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।

কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক পূর্ববঙ্গে যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভা ভেঙে দেওয়ার পর তিনি গ্রেফতার হন এবং ১৯৫৬ সালে মুক্তিলাভ করেন। ১৯৫৭ সালে গণতন্ত্রী দল বিলোপ করে তিনি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে গঠিত ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে যোগ দেন এবং দলের সহসভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৫৮ সালে দেশে সামরিক শাসন জারি হলে তিনি কারারুদ্ধ হন। হাজী দানেশ ১৯৬৪ সালে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির পূর্ব পাকিস্তান শাখার সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৬৫ সালে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭১ সালে তিনি ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি থেকে পদত্যাগ করেন।

হাজী দানেশ মুজিবনগরে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কাজ করেন। হাজী দানেশ ১৯৭৩ সালের ডিসেম্বর মাসে জাতীয় গণমুক্তি ইউনিয়ন নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন এবং দলের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭৫ সালের ফেব্রুুয়ারি মাসে তিনি বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগে (বাকশাল) যোগ দেন এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নিযুক্ত হন। ১৯৮৬ সালের ২৮ জুন তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএই দিনে
পরবর্তী নিবন্ধশাটল ট্রেনে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির অবসান হোক