জিপিএইচ ইস্পাত প্রিমিয়ার ফুটবল লিগে গতকাল শনিবার দুটো ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আর দুটো ম্যাচই ছিল হাইভোল্টেজ ম্যাচ। চারটি দলই ছিল অনেকটা সমান শক্তির। সে ম্যাচ দুটো জিতে শিরোপা যুদ্ধে ঠিকভাবেই শামিল আছে কোয়ালিটি স্পোর্টস ক্লাব এবং মাদারবাড়ী উদয়ন সংঘ। গতকাল এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত প্রতিদ্বন্দ্বিতাময় প্রথম খেলায় কোয়ালিটি স্পোর্টস ক্লাব ২-১ গোলে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্রকে পরাজিত করে। এটি মুক্তিযোদ্ধার প্রথম পরাজয়। একই ভেন্যুতে দিনের দ্বিতীয় খেলায় মাদারবাড়ী উদয়ন সংঘ ৩-০ গোলে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ক্রীড়া সমিতিকে পরাজিত করে।
গতকাল দুপুর দেড়টায় কড়া রোদের মধ্যে অনুষ্ঠিত প্রথম খেলায় মুক্তিযোদ্ধার আক্রমণই ছিল বেশি। তবে কোয়ালিটি মাঝে মাঝে আক্রমন করলেও তাতে ধার ছিল বেশি। আক্রমন প্রতি আক্রমনে জমে উঠা খেলায় ৩৮ মিনিটে প্রথম গোল পায় কোয়ালিটি স্পোর্টস ক্লাব। ডানদিক দিয়ে ঢুকে আফরোজ আলী মাইনাস করেন। বক্সের সামনে পড়ে বল। মুক্তিযোদ্ধার রক্ষণভাগের একজনের গায়ে লেগে বল যায় মো. রোমানের কাছে। রোমান কোনাকুনি নিখুঁত প্লেসিং শটে গোল করলে কোয়ালিটি ১-০ গোলে এগিয়ে যায়। এই গোলে এগিয়ে থাকা কোয়ালিটি দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই মুক্তিযোদ্ধার আক্রমনের মুখোমুখি হয়। তবে মুক্তিযোদ্ধা সম্ভাবনাগুলো নষ্ট করে নানাভাবে। কোয়ালিটি কিপার নাইম মিয়াও অনেকগুলো আক্রমণ ঠেকিয়ে দেন। ৬৪ মিনিটে খেলায় সমতা আনতে সক্ষম হয় মুক্তিযোদ্ধা। কোয়ালিটির ডিফেন্সের ভুলে মুক্তিযোদ্ধার হেফাজউদ্দিন হাসান মাটি কামড়ানো শট নেন। কোয়ালিটি কিপার নাইমের হাত ছুঁয়ে বল জালে চলে যায় (১-১)। সমতা আসার পর কোয়ালিটিও তাদের আক্রমন বাড়িয়ে দেয়। একবার বল সাইড বার ঘেঁষে বাইরে চলে যায় আরেকবার শাকিল আলির শট মুক্তিযোদ্ধার কিপার আনিছ শুয়ে রক্ষা করেন। ৮৩ মিনিটে এগিয়ে যেতে সক্ষম হয় কোয়ালিটি। শাকিল চমৎকার সেন্টার করেন। আর তাতে পা লাগিয়ে মুক্তিযোদ্ধার রক্ষণ দুর্বলতায় আফরোজ গোল করেন (২-১)। এরপর আবারো গোল করার সুযোগ পেয়েছিল কোয়ালিটি কিন্তু তা কাজে লাগাতে পারেনি তারা। ৩ খেলা শেষে কোয়ালিটি পেয়েছে ৭ পয়েন্ট। অন্যদিকে মুক্তিযোদ্ধা সমান খেলায় পেয়েছে ৪ পয়েন্ট। গতকালের এ খেলায় ম্যান অব দ্যা ম্যাচ নির্বাচিত হন কোয়ালিটি স্পোর্টস ক্লাবের শাকিল আলি। তার হাতে ক্রেস্ট ও নগদ এক হাজার টাকা প্রাইজমানি তুলে দেন সিডিএফএ নির্বাহী সদস্য প্রকৌশলী বিজয় কিষাণ চৌধুরী।
দিনের দ্বিতীয় খেলায় মাদারবাড়ী উদয়ন সংঘ আরো বেশি গোলে বন্দর কর্তৃপক্ষ ক্রীড়া সমিতিকে হারালে অবাক হওয়ার কিছু ছিল না। তিন গোলের পর আরো দুটি নিশ্চিত গোল উদয়নের খেলোয়াড়রা মিস না করলে গোল সংখ্যা আরো বেড়ে যেত। বন্দরের গতকাল ছিল হতাশার দিন। খেলার প্রথমার্ধে এক গোলে এগিয়ে ছিল উদয়ন সংঘ। ১৬ মিনিটে এ গোলটি হয়। সংঘবদ্ধ আক্রমণ থেকে বল আসে উপরে উঠে যাওয়া নাফিজ ইকবালের কাছে। তার পায়ে লেগে বন্দর কিপার শিমুলের মাথার উপর দিয়ে বল জালে যায়। উদয়ন এগিয়ে থাকে ১-০ গোলে। আক্রমণ পাল্টা আক্রমনে বাকি সময় খেলা জমে উঠে। দ্বিতীয়ার্ধে খেলার ৪৯ মিনিটে উদয়ন কর্ণার লাভ করে। নাফিজ ইকবালের কর্ণার থেকে আসা বল বন্দর রক্ষণভাগ ক্লিয়ার করতে ব্যর্থ হলে সাকিব চৌধুরী গোল সংখ্যা দ্বিগুন করেন (২-০)। ৭০ মিনিটে দারুন গোল পান টিটু চন্দ্র মন্ডল। বাম প্রান্ত দিয়ে এককভাবে বল নিয়ে এগিয়ে যান তিনি। রক্ষণভাগের খেলোয়াড় এবং কিপারকে ফাঁকি দিয়ে প্রথম বারের কাছ ঘেঁষে বল জালে জড়িয়ে দেন। উদয়ন সংঘ ৩-০ গোলে এগিয়ে যায়। এরপর দুটি ন্যাক্কারজনক মিস করে উদয়ন সংঘ। বদলি পরিমল বৈদ্য এবং আমিন হাকিম বাপ্পি সামনাসামনি কিপারকে পেয়েও বল জালে দিতে ব্যর্থ হন। ফলে আর গোলসংখ্যা বাড়াতে পারেনি তারা। বন্দর মাঝে মাঝে সুযোগ সৃষ্টি করলেও ফিনিশিং দিতে ব্যর্থ হয়। গতকাল উদয়ন গোলরক্ষক ইছহাক আকন্দও চমৎকার কিপিং করেন। ৩ খেলা শেষে মাদারবাড়ী উদয়ন সংঘ ৭ পয়েন্ট পেয়েছে। বন্দর সমান খেলায় পেয়েছে ৩ পয়েন্ট।
গতকালের এ খেলায় ম্যান অব দ্যা ম্যাচ নির্বাচিত হন মাদারবাড়ী উদয়ন সংঘের নাফিজ ইকবাল। তাকে ক্রেস্ট ও নগদ এক হাজার টাকা প্রাইজমানি তুলে দেন সিজেকেএস নির্বাহী সদস্য গোলাম মহিউদ্দিন হাসান। প্রিমিয়ার ফুটবল লিগে আজ বিকাল ৩.৩০ টায় কাস্টমস এস.সি. বনাম শতদল পরস্পরের মোকাবেলা করবে।