হলো না হোয়াইটওয়াশ

সান্ত্বনার জয় শ্রীলংকার

ক্রীড়া প্রতিবেদক | শনিবার , ২৯ মে, ২০২১ at ৩:৫০ পূর্বাহ্ণ

প্রথমবারের মতো শ্রীলংকার বিপক্ষে সিরিজ জয়ের তৃপ্তি নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হলো বাংলাদেশকে। শেষ ম্যাচটি জিতে প্রতিপক্ষ লংকানদের হোয়াইটওয়াশের যে স্বপ্ন দেখছিল বাংলাদেশ তা ভেঙে যায় ফিল্ডারদের একের পর এক ক্যাচ মিস এবং ব্যাটসম্যানদের অমার্জনীয় ব্যর্থতায়। অপরদিকে শেষ ম্যাচে সান্ত্বনার জয় নিয়ে ফিরতে পারছে দেশে। তবে শেষ ম্যাচে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যান এবং ফিল্ডারদের ব্যর্থতা দেখে মনে হয়েছে প্রথম দুই ম্যাচ জিতে সিরিজ নিশ্চিত করতে না পারলে হয়তো সিরিজটাই হারতে হতো। আগের দুই ম্যাচের বাংলাদেশ আর গতকালের বাংলাদেশের মধ্যে যেন বিশাল ফারাক। শেষ ম্যাচটিতে যেখানে বাংলাদেশ নিজেদের সেরাটা দিয়ে পুরো পয়েন্ট তুলে নিতে চেয়েছিল সেখানে বড় হারের লজ্জা নিয়ে মাঠ ছাড়তে হলো তামিম-সাকিবদের। পুরো সিরিজে ব্যর্থ হলেন সাকিব। উদ্বোধনী জুটিতে তামিমের সঙ্গী হতে পারলেন না কেউই।
শেষের দিকের ব্যাটসম্যানরাও যথারীতি ব্যর্থতার বলয়ে বন্দী। সব মিলিয়ে শেষ ম্যাচটা বড় একটা ক্ষত হয়ে থাকল বাংলাদেশের জন্য। গতকাল শেষ ম্যাচে টাইগাররা হেরেছে ৯৭ রানে। ব্যাটিং, বোলিং এবং ফিল্ডিং তিন বিভাগেই গতকাল বাংলাদেশকে দাঁড়াতেই দেয়নি লংকানরা। ফলে সিরিজ জয় নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হলো বাংলাদেশকে। টস জিতে ব্যাট করতে নামা শ্রীলংকা দারুণ সূচনা করে কুশল পেরেরা এবং দানুশকা গুনাথিলাকার উদ্বোধনী জুটিতে। পাওয়ার প্লেতে ১০ ওভারে লংকানরা তুলে নেয় ৭৭ রান। তবে ১২ তম ওভারে জোড়া আঘাতে বাংলাদেশকে খেলায় ফেরান তাসকিন। ৩৯ রান করা গুনাথিলাকাকে আউট করে ভাঙে ৮২ রানের জুটি। ওই ওভারের শেষ বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন পাথুম নিসানকা। এরপর হাল ধরেন কুশল পেরেরা এবং কুশল মেন্ডিস। সাথে শুরু হয় বাংলাদেশ দলের ফিল্ডারদের ক্যাচ ছাড়ার প্রতিযোগিতা। ৬৬ রানের মাথায় সাকিবের বলে ক্যাচ ছাড়েন মোস্তাফিজ। ৭৯ রানের মাথায় আবার সাকিবের বলে ক্যাচ ছাড়েন আফিফ হোসেন। তবে পরের ওভারে বোলিং ফিরে প্রথম বলেই ৬৯ রানের জুটি ভাঙেন তাসকিন। এবার তার শিকার কুশল মেন্ডিস। ২২ রান করেন মেন্ডিস। কিন্তু ফেরাতে পারেননি কুশল পেরেরাকে। সেঞ্চুরি পূরণের ঠিক আগে আবার জীবন পান কুসল পেরেরা। ৯৯ রানে মোস্তাফিজের বলে এবার পেরেরার ক্যাচ ছাড়েন মাহমুদউল্লাহ। এর পরপরই সেঞ্চুরি পূরণ করে নেন পেরেরা। তবে রানের গতি বাড়াতে পারেননি তিনি। তবে ধনাঞ্জয়া ডি সিলভার সঙ্গে গড়ে তোলেন ৬৫ রানের আরেকটি ভালো জুটি। শেষ পর্যন্ত শরীফুল এসে থামান পেরেরাকে। ততক্ষণে ১২২ বলে ১২০ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলে ফেলেছেন পেরেরা।
তার অধিনায়কোচিত ইনিংসে ১১টি চারের পাশে ছিল একটি ছক্কা। এরপর নিরোশান ডিকভেলা রান আউট হয়ে ফিরেন দ্রুত। হাসারাঙ্গাকে প্রত্যাশিত ঝড় তুলতে দেননি তাসকিন। তবে দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে এক প্রান্ত আগলে রাখা ধনাঞ্জয়া দলকে নিয়ে যান তিনশ রানের কাছে। ৭০ বলে চারটি চারের সাহায্যে ৫৫ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। তাসকিনই বাংলাদেশের সফলতম বোলার। ৪৬ রানে ৪ উইকেট পেয়েছেন এই পেসার। লঙ্কানদের বিপক্ষে এটা তার সেরা বোলিং। ২০১৭ সালে ডাম্বুলায় ৪ উইকেট নিয়েছিলেন ৪৭ রানে।
জবাবে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশ ওপেনিং জুটিতে পরিবর্তন আনলেও বাস্তবে কোন পরিবর্তন আসেনি। দ্বিতীয় ওভারেই ভাঙে উদ্বোধনী জুটি। ফিরেন লিটনের জায়গায় সুযোগ পাওয়া নাঈম শেখ। ব্যাট হাতে আবারো ব্যর্থ সাকিব। এবার ফিরলেন ৪ রান করে। ৯ রানে ২ উইকেট নেই স্বাগতিকদের। মুশফিককে নিয়ে যখন এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা তামিমের তখন আম্পায়ারের বিতর্কিত সিদ্ধান্তে ফিরতে হলো তামিমকে। ২৮ রানের মাথায় তামিম ফিরেন ১৭ রান করে। এরপর প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা মুশফিক এবং মোসাদ্দেকের। বেশ ভালই এগুচ্ছিলেন দুজন। কিন্তু আগের দুই ম্যাচের মতো এবার আর ত্রাতা হতে পারলেন না মুশফিক।
রামেশ মেন্ডিসকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ফিরলেন ক্যাচ দিয়ে। ভাঙে ৫৬ রানের জুটি। আগের দুই ম্যাচের সফল ব্যাটসম্যান মুশফিক ফিরলেন ২৮ রান করে। বাংলাদেশ তখন এক রকম ধুঁকছে। দারুণ ব্যাট করতে থাকা মোসাদ্দেক এবার হারিয়ে বসলেন ধৈর্য। সেই রামেশ মেন্ডিসের বলে ফার্নান্ডোর হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন হাফ সেঞ্চুরি করা মোসাদ্দেক। তার ৭২ বলে ৫১ রানের ইনিংসটিতে ৩টি চারের পাশাপাশি রয়েছে একটি ছক্কার মার। এরপর মাহমুদউল্লাহ-আফিফের লড়াইও টেকেনি বেশিক্ষণ। ৩৩ রানের জুটিটা ভাঙে আফিফের বিদায়ে। এরপর একপ্রান্তে দাঁড়িয়ে মাহমুদউল্লাহ কেবলই চেয়ে চেয়ে দেখেছেন মিরাজ-তাসকিনদের আসা যাওয়া। শেষ পর্যন্ত তিনিও দিলেন রণে ভঙ। যদিও তার আগে নিজের হাফ সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন মাহমুদ উল্লাহ। ৬৩ বলে ৫৩ রান করে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে মাহমুদ উল্লাহ যখন ফিরেন তখন বাংলাদেশ থেমেছে ১৮৯ রানে। শ্রীলংকার বিপক্ষে দুশমন্ত চামিরা ৫ উইকেট নিয়ে ধ্বসিয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশকে। ২টি করে উইকেট নিয়েছেন মেন্ডিস এবং হাসারাঙ্গা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআমের ‘নতুন রাজধানী’
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে আরো ৪ জনের মৃত্যু