হরপ্রসাদ শাস্ত্রী: চর্যাপদের আবিষ্কর্তা

| বৃহস্পতিবার , ১৭ নভেম্বর, ২০২২ at ৭:৫৫ পূর্বাহ্ণ

হরপ্রসাদ শাস্ত্রী। সংস্কৃত বিশারদ, সংরক্ষণবিদ ও বাংলা সাহিত্যের আদি নিদর্শন চর্যাপদের আবিষ্কর্তা। হরপ্রসাদ শাস্ত্রী ১৮৫৩ সালের ৬ ডিসেম্বর খুলনা জেলার কুমিরা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার আসল নাম ছিল হরপ্রসাদ ভট্টাচার্য। গ্রামের স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা অর্জনের পর হরপ্রসাদ কলকাতার সংস্কৃত কলেজিয়েট স্কুল ও প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়াশোনা করেন। তিনি ১৮৭১ সালে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৮৭৩ সালে পাস করেন এফ আই এবং ১৮৭৬ সালে বি.এ. ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে এম.এ. পরীক্ষায় পাস করে তিনি ‘শাস্ত্রী’ উপাধি লাভ করেন। ১৮৮৩ সালে তিনি সংস্কৃত কলেজে অধ্যাপনা শুরু করেন। এই সময়ই বাংলা সরকার তাকে সহকারী অনুবাদক নিযুক্ত করে। ১৮৮৬ থেকে ১৮৯৪ সাল পর্যন্ত সংস্কৃত কলেজে অধ্যাপনার পাশাপাশি তিনি বেঙ্গল লাইব্রেরিতে গ্রন্থাগারিকের দায়িত্বও পালন করেন। ১৮৯৫ সালে তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজের সংস্কৃত বিভাগীয় প্রধান হন। এরপর ১৯০০ সালে তিনি সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষ হন। ১৯০৮ সালে সংস্কৃত কলেজ থেকে অবসর নিয়ে তিনি সরকারের তথ্যকেন্দ্রে যোগ দেন। ১৯২১ থেকে ১৯২৪ পর্যন্ত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ও সংস্কৃত বিভাগের অধ্যাপক এবং বিভাগীয় প্রধান। অধ্যাপনা ও সরকারি কাজের পাশাপাশি হরপ্রসাদ শাস্ত্রী দু বছর এশিয়াটিক সোসাইটির সভাপতি, বারো বছর বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সভাপতি এবং লন্ডনের রয়্যাল এশিয়াটিক সোসাইটির সাম্মানিক সদস্য ছিলেন। এশিয়াটিক সোসাইটিতে সংস্কৃত পুঁথি অন্বেষণ বিভাগের পরিচালক হন। অল্প কয়েকজন সহকারী নিয়ে হরপ্রসাদ এশিয়াটিক সোসাইটির দশ হাজার পুঁথির ক্যাটালগ প্রস্তুত করেন। সংস্কৃত পুঁথি নিয়ে চর্চা করতে করতেই হরপ্রসাদ বাংলা পুঁথির বিষয়েও আগ্রহী হয়ে ওঠেন। পুঁথির সন্ধানে তিনি অনেকবার নেপাল গিয়েছিলেন। সেখানেই ১৯০৭ সালে তিনি আবিষ্কার করেন চর্যাগীতি বা চর্যাপদের পুঁথি। এই পুঁথিগুলি নিয়ে গবেষণার মাধ্যমে তিনি প্রমাণ করেন এগুলিই বাংলা সাহিত্যের আদিতম নিদর্শন। ১৯১৬ সালে চর্যাপদের পুঁথি নিয়ে রচিত তার গবেষণাপত্র ‘হাজার বছরের পুরাণ বাঙ্গালা ভাষায় রচিত বৌদ্ধ গান ও দোঁহা’ নামে প্রকাশিত হয়। হরপ্রসাদ অনেক প্রাচীন গ্রন্থ সংগ্রহ করে প্রকাশ করেছিলেন। তিনি বহু গবেষণাপত্রও রচনা করেন। স্বীয় কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ লাভ করেছিলেন বহু পুরস্কার ও সম্মান। তার বিখ্যাত বইগুলি হল ‘বাল্মীকির জয়’, ‘মেঘদূত ব্যাখ্যা’, ‘বেণের মেয়ে’ (উপন্যাস), ‘কাঞ্চনমালা’ (উপন্যাস), ‘সচিত্র রামায়ন’, ‘প্রাচীন বাংলার গৌরব ও বৌদ্ধধর্ম’। তার উল্লেখযোগ্য ইংরেজি রচনাগুলি হল ‘মগধান লিটারেচার’, ‘সংস্কৃত কালচার ইন মডার্ন ইন্ডিয়া’ ও ‘ডিসকভারি অফ লিভিং বুদ্ধিজম ইন বেঙ্গল’। ১৯৩১ সালের ১৭ নভেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএই দিনে
পরবর্তী নিবন্ধদূরপাল্লার গাড়িতে যাত্রীদের সিট বেল্ট পরিধান কার্যকর করা হোক