হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা

গ্রেপ্তার কসাই জিহাদের বাড়ি খুলনা, অবৈধভাবে থাকেন মুম্বাইয়ে

আজাদী ডেস্ক | শনিবার , ২৫ মে, ২০২৪ at ৭:১৫ পূর্বাহ্ণ

ঝিনাইদহ৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জিহাদ হাওলাদার নামের এক কসাইকে গ্রেপ্তার করেছে পশ্চিমবঙ্গের সিআইডি। ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার বনগাঁ থেকে গ্রেপ্তারের পর জিহাদ জেরার মুখে এমপি আনার হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন।

আনন্দবাজার ও এনডিটিভি জানিয়েছে, সিআইডির জিজ্ঞাসাবাদে জিহাদ বলেছেন, প্রথমে আনারকে শ্বাসরোধে খুন করা হয়। তারপর দেহ কাটা হয় টুকরো টুকরো করে। হাড় এবং মাংস আলাদা করা হয়। চামড়া ছাড়িয়ে তাতে হলুদ মাখান অভিযুক্তরা, যাতে বাইরে কেউ জিজ্ঞেস করলে বলা যায়, রান্না করার জন্য মাংস নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সেই দেহাংশ বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা। খবর বিডিনিউজ ও বিবিসি বাংলার।

পশ্চিমবঙ্গের সিআইডির সূত্রের বরাতে আনন্দবাজার জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার গ্রেপ্তারের পর জিহাদকে ভাঙড়ের একটি জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। আনারকে খুনের পর সেখানেই দেহাংশ ফেলা হয়েছে বলে জেরায় উঠে এসেছে। কিন্তু রাতের অন্ধকারে সেখান থেকে কোনো দেহাংশ মেলেনি। তাই জিহাদের ১৪ দিনের রিমান্ড চাওয়া হতে পারে। ২৪ বছর বয়সী জিহাদ হাওলাদার অবৈধভাবে ভারতের মুম্বাইয়ে বাস করতেন। তার আদি বাসস্থান খুলনা জেলার দিঘলিয়া থানার বারাকপুরে। আনারকে ‘খুনে’র প্রায় দুই মাস আগে অভিযুক্তরা জিহাদকে মুম্বাই থেকে কলকাতায় নিয়ে আসেন।

জিহাদ জানিয়েছেন, অভিযুক্ত আখতারুজ্জামানের নির্দেশেই জিহাদ সব কাজ করেছিলেন। জিহাদ ছাড়াও আরও চারজন বাংলাদেশি নাগরিক এই কাজে তাকে সাহায্য করেছিলেন।

সিআইডির আইজি অখিলেশ চতুর্বেদী জানিয়েছেন, ওই ফ্ল্যাটটি সন্দীপ রায় নামের পশ্চিমবঙ্গের শুল্ক বিভাগের এক অফিসারের। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এমপি আজীম কলকাতায় ১২ মে গিয়ে বন্ধু গোপালের বাসায় ছিলেন। পরদিন হত্যাকাণ্ড যারা ঘটায় তাদের সাথে যোগাযোগ হয় তার।

বিভ্রান্ত করতে এমপির ফোন থেকে মেসেজ : কলকাতায় এসে যে বন্ধুর বাড়িতে উঠেছিলেন আনোয়ারুল আজীম, সেই গোপাল বিশ্বাস জানিয়েছিলেন, তার বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পরে এমপির ফোন থেকে একাধিক মেসেজ পেয়েছিলেন তিনি। সেই মেসেজে কখনো বলা হয়েছিল যে তিনি (এমপি) সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরবেন। কখনো জানানো হয় যে তিনি বিশেষ কাজে দিল্লি চলে যাচ্ছেন। আবার দিল্লিতে যে তিনি পৌঁছেছেন আর তার সঙ্গে ‘ভিআইপি’রা আছেন, সে কথাও জানান বন্ধু বিশ্বাসকে।

ঢাকার ডিবি প্রধান জানিয়েছেন, টোটাল উদ্দেশ্য ছিল একদিকে লাশ গুম করা, অস্তিত্ব যেন কখনো পাওয়া না যায়। অন্যদিকে তদন্তকারীরা যেন কোনো ডিভাইস খুঁজে না পায়। আবার ইন্ডিয়ান পুলিশের নজর যেন বাংলাদেশে না আসে।

ঝিনাইদহ৪ আসনের তিনবারের সংসদ সদস্য আনার কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। ১১ মে তিনি চিকিৎসার জন্য ভারতে যান। প্রথমে কলকাতার বরাহনগরে তার বন্ধু স্বর্ণ ব্যবসায়ী গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে উঠেন। কিন্তু সেখান থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হন।

এরপর স্থানীয় থানায় জিডি করেন গোপাল বিশ্বাস। তদন্ত শুরু হয় দুই দেশে। বুধবার সকালে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে খবর আসে, নিউ টাউনের এক বাড়িতে খুন হয়েছেন এমপি আনার। এর পরেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ভারতের পুলিশের বরাত দিয়ে হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

তার মৃত্যু হয়ে যাক : জিহাদের বাবা

বাংলানিউজ জানায়, জিহাদের বাড়ি খুলনা জেলার দিঘলিয়া উপজেলার বারাকপুর ইউনিয়নে। এলাকায় তিনি রং মিস্ত্রি হিসেবে পরিচিত ছিলেন। চেয়ারম্যানের সঙ্গে দ্বন্দ্বের জেরে হত্যা প্রচেষ্টা মামলাসহ, মারামারি, ডাকাতিসহ একাধিক মামলার আসামি তিনি।

গতকাল এলাকাবাসী জানান, আনসার হত্যা মামলাসহ ফুলতলা ও যশোরে তার নামে একাধিক মামলা আছে। ছোটবেলা থেকে ভালো ছেলে ছিল জিহাদ। গ্রামের চেয়ারম্যানের সঙ্গে এক দ্বন্দ্বের কারণে মামলায় জড়ায়। এরপর ঢাকায় একটি মামলা হওয়ার পর এলাকায় তাকে দেখা যায়নি। জিহাদের পরিবারের সদস্যরা সবাই ভালো। বছরখানেক জিহাদ এলাকায় নেই। চার ভাই এবং এক বোন। জিহাদের ভাইয়েরা স্কুল ও মাদরাসায় চাকরি করেন। বাবা রং মিস্ত্রির কাজ করতেন। এখন বয়স হয়ে গেছে।

জিহাদ হাওলাদারের বাবা জয়নাল আবেদীন হাওলাদার বলেন, জিহাদের সঙ্গে বহুদিন ধরে আমার কথা হয়নি। ঢাকায় একটি ঝামেলার পর জেলে ছিল। তার কারণে আমার পরিবার শেষ হয়ে গেছে। তার এ কর্মকাণ্ডে আমরা হতাশ। তার মৃত্যু হয়ে যাক। এমন ছেলে আমার দরকার নেই।

জিহাদ হাওলাদার স্ত্রী মুন্নী বেগম বলেন, ২০১৯ সালে প্রেমের সম্পর্কের মাধ্যমে জিহাদের সঙ্গে বিয়ে হয়। সেই সময় জিহাদ রং মিস্ত্রির কাজ করত। ২০২১ সালের ২৬ অক্টোবর একটা ছেলে হয়। সর্বশেষ সাড়ে ৯ মাস আগে জিহাদের সঙ্গে কথা হয় তার। এখানে তার বিরুদ্ধে দুটি মামলা ছিল। ঢাকার একটি মামলায় বাড়িতে কয়েকবার ডিবি পুলিশ এসেছিল। শুনেছি ঢাকায় একটি ডাকাতি মামলা ছিল। প্রায় ১ বছর আগে জিহাদ এখান থেকে চলে গেছে। কোনোদিন টাকাও পাঠায়নি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধগ্রেপ্তার তিনজন ৮ দিনের রিমান্ডে
পরবর্তী নিবন্ধনেতানিয়াহুকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে আইসিসির দাবির প্রতি বাংলাদেশের পূর্ণ সমর্থন : পররাষ্ট্রমন্ত্রী