হত্যার রহস্য উদঘাটন

আকবরশাহে নারীর অর্ধগলিত লাশ

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ১ নভেম্বর, ২০২০ at ৫:০৭ পূর্বাহ্ণ

দুই স্ত্রীর মনোমালিন্য এবং নিজের হতাশাজনিত কারণে দ্বিতীয় স্ত্রী জেসমিন বেগমকে খুন করে স্বামী মো. ফরহাদ। গত ২ অক্টোবর বেলা সোয়া ২টার দিকে নগরীর আকবরশাহ থানাধীন হারবাতলী গ্যাস লাইন এলাকায় ঝোপের মধ্যে এক নারীর অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। আকবরশাহ থানার ওসি জহির হোসেনের নেতৃত্বে পরিচালিত অভিযানে ঘটনার রহস্য উদঘাটিত হয়। মূল আসামি ফরহাদ ও তাকে সহায়তাকারী তার মামা মো. সেলিম প্রকাশ মনির প্রকাশ অজিউল্ল্যাহ (৩০) ধরা পড়ে।
আকবরশাহ থানার ওসি জহির হোসেন আজাদীকে জানান, জেসমিন বেগমের সাথে ফোনের সূত্র ধরে ফরহাদের পরিচয় হয়। পরবর্তীতে প্রেমের সম্পর্ক হয় এবং সম্পর্কের একপর্যায়ে তারা বিয়ে করে। এর আগে তার এক স্ত্রী আছে এবং সেই সংসারে এক সন্তান রয়েছে। ফরহাদ দুদিকের সংসার সামলাতে হিমশিম খায় এবং ফরহাদের সাথে ভিকটিমের বিয়ের বিষয়টি তার প্রথম স্ত্রী জেনে যায়। অপরদিকে জেসমিনের সংসারে ২ ছেলে, ১ মেয়ে ছিল। এ নিয়ে ফরহাদ হতাশ হয়ে যায় এবং জেসমিনের ওপর ক্ষিপ্ত হয়। ফরহাদ তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে।
তিনি বলেন, লাশ পাওয়ার পর একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছিল। অপমৃত্যু মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মোহাম্মদ ছায়েম ঘটনাস্থলের ঝোপঝাড় পরিচ্ছন্ন করে চান্দগাঁও থানাধীন মার্ক ফ্যাশন ওয়্যার (প্রা.) লিমিটেডে চাকরির একটি পরিচয়পত্র, এক জোড়া স্যান্ডেল, একটি ভ্যানিটি ব্যাগ ও ব্যাগের মধ্যে থাকা অন্যান্য জিনিসপত্র পান। ১০ অক্টোবর তদন্ত কর্মকর্তা প্রতিষ্ঠানের অ্যাডমিনের সাথে যোগাযোগ করেন। পরবর্তীতে ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া পরিচয়পত্র, জোড়া স্যান্ডেল, ভ্যানিটি ব্যাগ ও ব্যাগের মধ্যে থাকা অন্যান্য জিনিসপত্র দেখে মামলার বাদী জেসমিনের ভাই মনির হোসেন ও ভাগ্নে মো. শাহাদাত হোসেন তা দেখে শনাক্ত করে এটি জেসমিনের লাশ। পরে মনির হোসেন ১৯ অক্টোবর বাদী হয়ে আকবরশাহ থানায় মামলা (নং ২২) করেন।
বাদী মনির হোসেন (২৫) এজাহারে উল্লেখ করেন, তার বড় বোন জেসমিন বেগম প্রতিদিনের ন্যায় গত ২১ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ৭টায় মার্ক ফ্যাশন ওয়্যার (প্রা.) লিমিটেডে চাকরির উদ্দেশ্যে বের হয়ে রাত আটটায় বাসায় ফিরে না এলে ভাগ্নে মো. শাহাদাত হোসেন (১৫) জেসমিনের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হয়। পরদিন দুপুর দেড়টার সময় বাদীকে ফোন করে নিখোঁজের বিষয়টি বলে। বাদী খোঁজ করে না পেয়ে ঢাকায় চলে যান। পরবর্তীতে জেসমিনের কর্মস্থল থেকে গত ১০ অক্টোবর আকবরশাহ থানা পুলিশ বাদীর বোনের বিষয়ে খোঁজ খবর নেওয়ার বিষয়টি বাদীর বড় বোনের কর্মস্থল মার্ক ফ্যাশন ওয়্যার (প্রা.) লিমিটেডের অ্যাডমিন মো. সাইফুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করে জানতে পারেন। বাদী আকবরশাহ থানায় এসে লাশ শনাক্ত করেন। পূর্ব শত্রুতার জের ধরে তার বোনকে হত্যা করা হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।
পরবর্তীতে ২৭ অক্টোবর আকবরশাহ থানা পুলিশ নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার থানাধীন মাউরাদী এলাকা থেকে ফরহাদকে গ্রেপ্তার করে। ফরহাদ জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে এবং তার দেওয়া তথ্য মতে তার সহযোগী মো. সেলিম প্রকাশ মনির প্রকাশ অজিউল্ল্যাহকে (৩০) আকবরশাহ থানাধীন শাপলা গ্যাস লাইন বাবুলের চায়ের দোকানের পিছনে পাহাড়ের উপর তার নিজ বাড়ি থেকে ২৯ অক্টোবর গ্রেপ্তার করে। দুই আসামি জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, ২০ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টার দেকে ফরহাদ তার মামা সেলিমের বাসায় আসে এবং ২১ সেপ্টেম্বর রাত আটটায় ফরহাদ জেসমিনকে তার মামার বাসার নিচে ঘটনাস্থলে নিয়ে যায়। এসময় ফরহাদ তার মামা সেলিমকে ঘটনাস্থলে আসতে বলে। তার মামা ঘটনাস্থলে এসে ফরহাদ এবং জেসমিনের মধ্যে ধস্তাধস্তি দেখতে পায়। পরবর্তীতে ফরহাদ তার মামাকে হত্যাকাণ্ডে সহযোগিতা করার জন্য বলে। এসময় ফরহাদ জেসমিনের গলা টিপে ধরে এবং মামা মুখ চেপে ধরে দুজন মিলে হত্যা করে। লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে দুজন মিলে ঝোপের মধ্যে ঢুকিয়ে রাখে। এ সংক্রান্তে আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করে ২৯ অক্টোবর আদালতে হাজির করলে আদালত দুদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদের গতকাল শনিবার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শফি উদ্দিনের আদালতে হাজির করলে তারা ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসিডিএর সাবেক চেয়ারম্যান ছালামের মায়ের ইন্তেকাল
পরবর্তী নিবন্ধসামাজিক অনুশাসনের সুদিন ফিরিয়ে আনার স্বপ্ন