হতাশার পরাজয়ে বড় প্রাপ্তি লিটনের সেঞ্চুরি

ক্রীড়া প্রতিবেদক | বুধবার , ১২ জানুয়ারি, ২০২২ at ৬:১১ পূর্বাহ্ণ

ক্রাইস্টচার্চ টেস্টের প্রথম দিনেই এক রকম নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল ম্যাচের গতি পথ। আর দ্বিতীয় দিনে সেটা একেবারেই পরিস্কার হয়ে যায়। তৃতীয় দিন অপেক্ষা ছিল কেবলই বড় পরাজয় এড়ানোর। তেমনই হতাশার চিত্র ফুটে উঠেছে বাংলাদেশের এই টেস্ট ম্যাচটিতে। শেষ পর্যন্ত তিন দিনেই টেস্ট ম্যাচটি জিতে নিল স্বাগতিক নিউজিল্যান্ড। তাও এক ইনিংস এবং ১১৭ রানের বিশাল ব্যবধানে।
দু দলের জন্য ম্যাচের প্রথম ইনিংসটা ছিল একেবারে বিপরীত মুখী। প্রথম দিনেই হতশ্রী বোলিং বাংলাদেশ দলের বোলারদের। আর দ্বিতীয় দিনে ব্যাটিংতো একেবারে পাড়া-গাঁয়ের কোন দলের মত। তাই ম্যাচের দ্বিতীয় দিনেই হার নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল টাইগারদের। তারপরও একটু আশা নিভু নিভু করে জ্বলছিল। যদি দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটসম্যানরা জ্বলে উঠতে পারে তাহলে হয়তো বড় লজ্জার হাত থেকে বাঁচা যাবে। কিন্তু সেটা আর হয়নি। যদিও বাংলাদেশ দলের দ্বিতীয় ইনিংসের স্কোর কার্ডটা দেখলে হয়তো মনে হতে পারে আরো ভাল করার সুযোগ ছিল টাইগারদের। দলের প্রথম পাঁচ ব্যাটসম্যানের সবাই করেছে ২০ এর উপরে রান। আর একজন লিটন দাশতো চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন এই উইকেট এবং এই বোলিংয়ের মুখেও ভাল ব্যাটিং করা যায়। পাহাড় সম চাপ মাথায় নিয়ে লিটন করেছেন দারুণ এক সেঞ্চুরি। আর সেটাই হতাশার এই ম্যাচে সবচাইতে বড় প্রাপ্তি। ইনিংসে লিটনই যেন বুক চিতিয়ে লড়াই করেছে। আর ফলও পেয়েছেন সেঞ্চুরি তুলে নিয়ে। টিম সাউদি, ট্রেন্ট বোল্ট, জেমিসন, ওয়াগনারদের বাউন্স আর সুইং এর মোকাবেলা করেছেন লিটন শক্ত হাতে। নান্দনিকতা ও নিয়ন্ত্রণ, কর্তৃত্ব আর কাব্যিক শটের মহড়া, সবকিছুই ফুটে উঠল একটি ইনিংসে। দল বড় হারের পথে। ম্যাচ তিন দিনেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। সে সাথে প্রতিপক্ষের পেসারদের আগুন ঝরানো বোলিং।
কোন কিছুই থামাতে পারেনি লিটনকে। দারুণ সব শট খেলে হ্যাগলি ওভালের সবুজ ক্যানভাসে আঁকলেন তুলি আঁচড়। তুলে নিলেন ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্ট সেঞ্চুরি। অন্যদের যেন দেখিয়ে দিলেন এই উইকেটেও বড় ইনিংস খেলা যায়। ভয় ডরহীণ ক্রিকেট খেলা যায়। তাইতো হেরে যাওয়া ম্যাচে সবচাইতে বড় অর্জন লিটনের ব্যাটিং। প্রথম টেস্টের অর্জনটাকে ধরে রাখতে পারল না বাংলাদেশ। ফলে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট সিরিজ জিতে ইতিহাস সৃষ্টি করা হলো না। তারপরও প্রথমবারের মতো নিউজ্যিলান্ডের বিপক্ষে টেস্ট জয় এবং সিরিজ ড্র সব মিলিয়ে অর্জনটা নিতান্তই কম নয়।
হ্যাগলি ওভালের উইকেট তৃতীয় দিনে ছিল ব্যাটিংয়ের জন্য আদর্শ। সেই উইকেটে সাবধানী শুরু এনে দেন দুই ওপেনার নাঈম শেখ ও সাদমান ইসলাম। দিনের প্রথম ঘণ্টা নির্বিঘ্নে পার করার পর ফিরেন সাদমান। ৪৮ বলে ২১ রান করে জেমিসনের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন সাদমান। বেশ ভাল খেলতে থাকা শান্তও পারলেননা ২০ এর ঘরের উপরে যেতে। ৩৬ বলে ৫টি চার এবং একটি ছক্কার সাহায্যে ২৯ রান করে ফিরেন ওয়াগনারের বলে। লড়াই করার চেষ্টা করেন নাঈম। কিন্তু তিনিও আঠকা পড়লেন সেই ২০ এর ঘরে গিয়ে। লাঞ্চের পর টিম সাউদির অনেক বাইরের বল তাড়া করতে গিয়ে দ্বিতীয় স্লিপে টম ল্যাথামের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন নাঈম। ৯৮ বল খেলে ২৪ রানে শেষ হয় নাঈমের অভিষেক পর্ব।
অধিনায়ক মোমিনুল এবং লিটন দাশ যখন উইকেটে তখন হয়তো আশায় বুক বেধেছিল টাইগার শিবির। কিন্তু সে আশা মিলিয়ে যেতে বেশি সময় লাগল না। বাংলাদেশ অধিনায়কের পথচলা দীর্ঘ হয়নি। শরীর থেকে দূরে ব্যাট চালিয়ে প্রথম স্লিপে রস টেইলরের হাতে সহজ ক্যাচ দিয়ে মোমিনুল ফিরেন ৬৩ বলে ৩৭ রান করে। প্রথম ইনিংসের হাফ সেঞ্চুরিয়ান রাব্বি স্থায়ী ছিলেন মাত্র ৯ বল। ১২৮ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে প্রথম ইনিংসের পুনরাবৃত্তি দেখছিল বাংলাদেশ। কিন্তু আস্থায় অবিচল ছিলেন লিটন। নুরুল হাসান সোহান এসে কিছুটা সঙ্গ দিয়েছিলেন লিটনকে। কিন্তু জুটিটা ভাঙল ১০১ রানে। ৫৪ বলে ৩৬ রান করে মিচেলের শিকার হয়ে ফিরেন সোহান। এরপর একাই লড়ে গেছেন লিটন। তিনি তখন বুঝে গেছেন অপর প্রান্তে কাউকে পাওয়া যাবে না। তাই একলা চলোরে নীতিতে চলতে থাকেন লিটন। ১০৬ বলে সেঞ্চুরি তুলে নেন লিটন। শেষ পর্যন্ত ১১৪ বলে ১৪টি চার এবং একটি ছক্কার সাহায্যে ১০২ রান করে ফিরেন লিটন। ততক্ষণে বাংলাদেশের স্কোর দাঁড়িয়েছে ২৬৯। ক্যারিয়ারের প্রথম ২৫ টেস্টে সেঞ্চুরি ছিল না তার। এখন চার টেস্টের মধ্যে করে ফেললেন দুটি সেঞ্চুরি। টানা ১০ ইনিংসে রান না পাওয়া ইবাদত হোসেন অবশেষে রানের মুখ দেখলেন। তাকে শিকার বানিয়ে ম্যাচ আর নিজের ক্যারিয়ারের ইতি টানেন টেইলর। বাংলাদেশ থামল ২৭৮ রানে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশামীম ওসমান কীভাবে মাঠে থাকবেন, প্রশ্ন আইভীর
পরবর্তী নিবন্ধনাইক্ষ্যংছড়িতে সিএনজি উল্টে নিহত ১