সড়ক ব্যবস্থাপনায় নিতে হবে সমন্বিত পদক্ষেপ

| বৃহস্পতিবার , ২৩ মার্চ, ২০২৩ at ৬:২৫ পূর্বাহ্ণ

সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করা যাচ্ছে না কোনোভাবেই। মহাসড়কে দুর্ঘটনা কমানোর পরিবর্তে বেড়েই চলেছে। দেশে গত রোববার আরেকটি বড়ধরনের সড়ক দুর্ঘটনা ঘটল। মৃত্যু হলো ১৯ জনের। এরপর জানা গেল, দুর্ঘটনায় পড়া বাসটির চালক সর্বশেষ ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ৩০ ঘণ্টার বেশি বাস চালিয়ে ক্লান্ত ছিলেন।

 

বাসটি চালানোর অনুমোদন ছিল না, ফিটনেস সনদের মেয়াদও পেরিয়ে গেছে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, এক্সপ্রেসওয়ের মাদারীপুরের শিবচর এলাকায় ইমাদ পরিবহন দুর্ঘটনায় ১৯ জনের মৃত্যুর পর মহাসড়কে দ্রুতগতির যান নিয়ন্ত্রণ বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসে। হাইওয়ে পুলিশের দাবি, অতিরিক্ত

গতির বাহনগুলোকে মামলা দিয়েও দমানো যাচ্ছে না। সড়কে যানবাহনের গতি কমাতে আইন প্রয়োগের পাশাপাশি ব্যাপক জনসচেতনতা গড়ে তোলার বিকল্প নেই বলে জানান তাঁরা। তাঁদের দাবি, পদ্মা সেতু চালুর পর প্রায় সব সড়কেই যানবাহন চলাচল তিন থেকে পাঁচগুণ বৃদ্ধি পেলেও সেই অনুপাতে বাড়েনি

জনবলসহ অন্যান্য সাপোর্ট। ফলে পুরোনো কাঠামোর জনবল দিয়েই বাড়তি সড়ক সামলাতে হচ্ছে হাইওয়ে পুলিশকে। এভাবে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটার পর

বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, হয় সংশ্লিষ্ট বাহনের চলাচলের অনুমোদন বা রুট পারমিট নেই, নয়তো ফিটনেস সনদ নেই। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় চালকের

ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা পত্রিকান্তরে বলছেন, সড়কে এই নৈরাজ্য চলছে বহু বছর ধরে। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় নৈরাজ্য দূর করার ক্ষেত্রে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারছে না। মন্ত্রণালয়টি শুধু এ ক্ষেত্রেই নয়, বাস ও অটোরিকশায় নির্ধারিত ভাড়া কার্যকর করা, অধীন সংস্থা বাংলাদেশ সড়ক

পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) সেবা সহজ করা ও দুর্নীতি কমানো, সড়কের মান উন্নত করা এবং সময়মতো ও নির্ধারিত ব্যয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করাএসব ক্ষেত্রেও কোনো পরিবর্তন আনতে পারেনি। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে দেশে ভাড়া নিয়ে বচসার কারণে যাত্রীকে মার খেতে হচ্ছে, বাসচাপায় মরতে হচ্ছে।

বাংলাদেশের গণপরিবহন ব্যবস্থাকে গুছিয়ে একটি কাঠামোর মধ্যে আনার জন্য ২০০৫ সালে একটি পরিকল্পনাও তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু সেটি বাস্তবায়নের কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলেন, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মনোযোগের অভাবে সেই পরিকল্পনা এখনও বাস্তবায়ন হয়নি। তাঁরা বলেন, সংশ্লিষ্ট

বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানগুলো, যাদের কাছে সেই কৌশলপত্র পাঠানো হয়েছিল, তাদের নজরদারির অভাবের কারণে সেটি হয়নি। পাশাপাশি আমাদের দাতাগোষ্ঠীগুলোও মেগা প্রজেক্টের মধ্যে চলে আসছে। ফলে পথচারীবান্ধব ও গণপরিবহনকে সুশৃঙ্খল করে সেবা খাতে পরিণত করা যায়নি। এখনকার আলাদা আলাদা মালিক নির্ভর গণপরিবহন ব্যবস্থা বিশৃঙ্খল এবং সেটি নিয়ন্ত্রণের অসাধ্য বলে তাঁরা উল্লেখ করেন।

প্রস্তাবিত আইনে গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার করা যাবে না। ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া কেউ গাড়ি চালাতে পারবেন না। এসব অপরাধের জন্য বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি রাখা হয়েছে। নীতিগত অনুমোদিত খসড়া অনুযায়ী ফিটনেসবিহীন গাড়ি চালালে এক বছর কারাদণ্ড বা এক লাখ টাকা জরিমানা গুনতে

হবে। আর সড়কে দুটি গাড়ি যদি পাল্লা দিয়ে (রেসিং) চালানোর সময় দুর্ঘটনা ঘটে, সে ক্ষেত্রে তিন বছরের কারাদণ্ড অথবা ২৫ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। বাসে নারী, শিশু ও প্রতিবন্ধীদের সংরক্ষিত আসনে কেউ বসলে বা তাদের না বসতে দিলে এক মাসের কারাদণ্ড অথবা পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করার বিধান রাখা হয়েছে।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণ মতে সড়ক দুর্ঘটনার কারণ সমূহ : বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালনা, বিপজ্জনক ওভারটেকিং, রাস্তাঘাটের নির্মাণ ক্রুটি, ফিটনেস বিহীন যানবাহন, যাত্রী ও পথচারীদের অসতর্কতা, চলন্ত অবস্থায় মোবাইল বা হেড ফোন ব্যবহার, মাদক সেবন করে যানবাহন চালানো,

মহাসড়ক ও রেলক্রসিংয়ে ফিডার রোডের যানবাহন উঠে পরা, রাস্তায় ফুটপাত না থাকা বা ফুটপাত বেদখলে থাকায় রাস্তার মাঝ পথে পথচারীদের যাতায়াত।

সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষের মৃত্যুর মিছিল থামাতে হলে সড়কে শৃঙ্খলা আনতে হবে। সড়ক ব্যবস্থাপনায় সরকারকে সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে