সড়ক দুর্ঘটনা রোধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নাগরিক সচেতনতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি নিরাপদ সড়ক নিশ্চিতে যত্রতত্র রাস্তা পারাপার বন্ধের আহ্বান জানিয়ে ট্রাফিক আইন মেনে চলারও পরামর্শ দেন। প্রধানমন্ত্রী গত ২৩ অক্টোবর জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস-২০২০ উদ্্যাপনের অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ে এসব বক্তব্য রাখেন। মাদকাসক্ত অবস্থায় গাড়ি চালানো বন্ধে চালকদের ডোপ টেস্ট করানোর ব্যবস্থা নিতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। চালকদের জন্য সড়কের পাশে বিশ্রামাগার তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা তাদের ভালোমন্দ দেখতে মালিকদেরও প্রতি অনুরোধ রাখেন। তিনি বলেন, প্রাইভেট সেক্টর বা সরকারি- সবাইকে বলব আপনারা যদি স্পট ঠিক করে রাখেন, এই ড্রাইভারটা এত মাইল চলবে, তারপর সে সেখানে বিশ্রাম নেবে। ওখানে অলটারনেটিভ ড্রাইভার থাকবে। এইভাবে যদি আমরা ব্যবস্থা করতে পারি আমাদের দুর্ঘটনা আরও কমে যাবে। যারা গাড়ি চালাচ্ছে তারা মাদক সেবন করেন কিনা সেদিকে নজর রেখে তাদের ডোপ টেস্টের পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রত্যেকটা ড্রাইভারের এই পরীক্ষাটা একান্তভাবে অপরিহার্য। সেটাও আপনাদের করতে হবে। চালকদের ওভারটেক করার প্রবণতাও বন্ধের আহ্বান জানান তিনি।
আসলে পরিবহন চালকদের জন্য জরুরি ডোপ টেস্ট। এই পরীক্ষার মাধ্যমে চালকেরা মাদকাসক্ত কি না, তা রাস্তায়ই পরীক্ষা করার পদ্ধতি। পরীক্ষায় কোনো চালক ধরা পড়লে তাঁকে সরাসরি জেলে পাঠানো হবে। এই কার্যক্রমের অংশ হিসেবে দেশের বিভিন্ন স্থানে ভ্রাম্যমাণ আদালত থাকবে। সেখানে ভ্রাম্যমাণ টয়লেটও থাকবে। টয়লেটে নিয়ে চালকদের মূত্র পরীক্ষা করা হবে।
সড়ক-মহাসড়কে বেঘোরে মৃত্যু কারোরই কাম্য নয়। একটি মৃত্যু একটি পরিবারের কাছে সারাজীবনের জন্য গভীর ক্ষতির কারণ হয়ে থাকে। দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানের প্রক্রিয়া দীর্ঘদিন ধরে জারি রয়েছে, বেরও হয়েছে অনেক কিছু। তবু বছর বছর দুর্ঘটনা নতুনরূপে হাজির হচ্ছে, এটা কাম্য নয়। এ বিষয়ে দায়িত্বশীলদের দ্রুত সক্রিয়তা জরুরি।
লক্ষ্যণীয় জাতিসংঘের যেসব সদস্য রাষ্ট্র ২০২০ সালের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনা কমিয়ে আনার অঙ্গীকার করেছিল তার একটি বাংলাদেশ। অঙ্গীকার পূরণ দূরে থাক, বরং যতই দিন যাচ্ছে, বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েই চলেছে। এটা শুধু ফাঁপা অঙ্গীকার ছিল। দুর্ঘটনা রোধে বা কমিয়ে আনতে সত্যিকার অর্থে সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্তৃপক্ষগুলো আদৌ কোনো কার্যকর পরিকল্পনা ও কৌশলই গ্রহণ করেনি। এটা জাতি হিসেবে আমাদের দায়িত্বহীনতার আরেকটি বড় প্রমাণ। আমাদের দেশে কী কী কারণে এত বেশি দুর্ঘটনা ঘটে, কী পদক্ষেপ নিলে দুর্ঘটনার হার কমিয়ে আনা সম্ভব-সেসব বহুল আলোচিত বিষয়। এ নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে, সড়ক দুর্ঘটনার জন্য মোটা দাগে কিছু কারণ বিদ্যমান। এগুলো হলো, চালকের অসতর্কতা, অসচেতনতা, বেপরোয়া বা অনিয়ন্ত্রিত গতিতে গাড়ি চালানো, ত্রুটিপূর্ণ রাস্তা, ফিটনেসবিহীন ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন ইত্যাদি।
সড়ক দুর্ঘটনার আরেকটি কারণ হলো, ত্রুটিপূর্ণ সড়ক ব্যবস্থা। মহাসড়ক গুলোয় বাঁক থাকার কারণে সামনের দিক থেকে আসা গাড়ি দেখতে না পেয়ে অনেক চালক দুর্ঘটনার কবলে পড়েন। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা দেশের সড়ক ব্যবস্থায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ব্ল্যাক স্পট চিহ্নিত করেছেন। সেগুলো সংশোধন করতে হবে। এছাড়া রাস্তার পাশে হাটবাজার স্থাপন ও ওভারব্রীজ না থাকাও দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। সঠিক প্রকৌশলগত জ্ঞানের ভিত্তিতে এসব ত্রুটি দূর করা গেলে দুর্ঘটনা অনেকাংশে হ্রাস পাবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
চালকদের সতর্কতার সঙ্গে গাড়ি চালানোর পাশাপাশি তাদের ব্যাপারে সংবেদনশীল থাকতে হবে। চালকদের ওপর হাত না দেওয়ার অনুরোধ করে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, কেউ গাড়ি আক্রমণ করবেন না। যদি ড্রাইভাবের দোষ হয়, আইন আছে। আইন তার ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু আইন কেউ হাতে তুলে নেবেন না। এই আইন হাতে তুলে নেবার কারণে অনেক মানুষ কিন্তু মারা যায়। নিরাপদ সড়ক নিয়ে যারা আন্দোলন করেন তাদের এই ব্যাপারে জনসচেতনতা তৈরির আহ্বানও জানান তিনি।
আবার এ কথা অস্বীকার করা যাবে না যে হেলপার সহকারী হিসেবে কিছুদিন কাজ করতে না করতেই অনেকে চালক বনে যান। চালকেরাও আনাড়ি সহকারীর হাতে তুলে দিচ্ছেন গাড়ির চাবি। গাড়ির মালিকেরাও বিষয়টি নিয়ে মাথা ঘামান না। তাঁরা একটুও ভাবেন না, এসব আনাড়ি লোকজনের হাতে গাড়ির চাবি তুলে দেওয়ার পরিণতি কী হতে পারে? এসব সহকারীর না আছে গাড়ি চালানোর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা, না আছে ড্রাইভিং লাইসেন্স। গাড়ির কলকবজা সম্পর্কেও তাঁদের পুরোপুরি ধারণা নেই। এসব ছাড়াই তাঁরা মহাদাপটের সঙ্গে সড়ক-মহাসড়কে বাস-ট্রাক চালিয়ে যাচ্ছেন। এদের প্রতিরোধ করা দরকার।