প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাস্তা বানানোর বরাদ্দের অর্থ ব্যয়ে তদারকি বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার অনেক বছর ক্ষমতায় আছে। ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় অনেক রাস্তা তৈরি করে ফেলেছি। ফলে রাস্তা বানানোর জন্য যে বরাদ্দ, সেটার যেন যথাযথ ব্যবহার হয়। এজন্য মনিটরিং বাড়াতে হবে।’ গত মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এ নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী।
যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নকে কোনো দেশের সার্বিক উন্নয়নের চাবিকাঠিও বলা হয়। যোগাযোগ প্রতিবন্ধকতা উন্নয়নকে শুধু ব্যাহতই করে না, দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, যোগাযোগ প্রযুক্তি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ গুরুত্বপূর্ণ সব খাতে দেখা দেয় মন্থরগতি। বর্তমান সরকার তাই যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। অর্থনীতি বিশ্লেষকরা বলেন, সরকার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে অবকাঠামো নির্মাণে জনগুরুত্বপূর্ণ ও মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছে। প্রকল্পগুলো শেষ হলে অর্থনীতিতে ভালো ফল পাওয়া যাবে। তাঁরা বলেন, মেগা প্রকল্পগুলোর মধ্যমেয়াদে পর্যালোচনা করতে হবে। বর্তমান সরকার বড় বড় প্রকল্প নেওয়ার ফলে বিদ্যুতে ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। মেট্রো রেলের কাজ চলছে। এসব প্রকল্প শেষ হলে অর্থনীতিতে বড় প্রভাব পড়বে।
কয়েক বছর ধরে বাজেটে সড়ক যোগাযোগ খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দিয়ে আসছে সরকার। এটি থেকে প্রতীয়মান হয়, যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়নে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু একাধিক আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় গবেষণায় উঠে এসেছে, দেশে আন্তর্জাতিক মানের কোনো সড়ক-মহাসড়কই নেই। অথচ অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম পূর্বশর্তই হলো মানসম্পন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থা। সরকারের এতো উন্নয়ন কার্যক্রমের পরও এক্ষেত্রে আমরা কেন পিছিয়ে আছি, তা অনুমান করা যায় না।
সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, এলজিইডির ৫৩ শতাংশ সড়কই খারাপ, ব্যবহারের অনুপযুক্ত। মূলত নিম্নমানের কাজ ও নির্মাণ উপকরণ, অনিয়ম-দুর্নীতি, অদক্ষ ঠিকাদার, রক্ষণাবেক্ষণের অভাব, নকশার ত্রুটি ও অপ্রতুল বরাদ্দ সড়ক নেটওয়ার্ককে ভঙ্গুর দশায় নিয়ে গেছে বলে বিশেষজ্ঞরা অভিযোগ করছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, সড়কে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগটি আজকের নয়, অনেক পুরনো। নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের কারণে কমছে সড়কের স্থায়িত্ব। মহাসড়কগুলো জোড়াতালি দিয়ে কার্যকর রাখার চেষ্টা চলে এবং সেটিই এখন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। টেকসইভাবে এগুলো মেরামতের উদ্যোগ না থাকায় তাতে শুধু অর্থের অপচয় হয়। বর্ষাপ্রধান বাংলাদেশে বিটুমিন বা পিচের রাস্তার আয়ু এমনিতেই কম। তারপরও প্রতিটি সড়ক নির্মাণ বা সংস্কারের কাজে থাকে শুভঙ্করের ফাঁকি। যে কারণে একটু বেশি করেই বৃষ্টি হলেই রাস্তার পিচ উঠে কঙ্কাল চেহারা ধারণ করে। বলা চলে, সড়ক নির্মাণে পদে পদে অনিয়ম হচ্ছে। এসব অনিয়মের মধ্যে রয়েছে- সড়ক নির্মাণে নিম্নমানের ইট, খোয়া ও বিটুমিন ব্যবহার।
এ কথা না বললে নয় যে দেশকে উন্নতির দ্বারপ্রান্তে নিতে একের পর এক মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নে নেওয়া হয়েছে মেগা প্রকল্প। এসব প্রকল্পের কাজ শেষ হলে ত্বরান্বিত হবে দেশের অর্থনীতি। কর্মসংস্থানের পাশাপাশি বাড়বে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও। অর্থনৈতিক উন্নয়নে যোগাযোগ ও অবকাঠামো উন্নয়নে জোর দিয়েছেন তিনি। করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে অর্থনীতির স্থবিরতার মধ্যেও থেমে নেই উন্নয়ন কাজ। কিন্তু সড়ক সংস্কারে অনিয়ম ও দুর্নীতি সরকারের সমস্ত অর্জনকে ধূলিস্যাৎ করে দিচ্ছে। দেশের সড়কপথগুলো সংস্কারে নৈরাজ্য ও অব্যবস্থাপনা এভাবে দিনের পর দিন চলতে দেয়া যায় না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাস্তা বানানোর বরাদ্দের অর্থ ব্যয়ে তদারকি বাড়ানোর যে নির্দেশ দিয়েছেন, তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে হবে। সড়ক-মহাসড়ক টেকসই করতে হলে সবার আগে অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। সংস্কার ও মেরামতের কাজে যারা গাফিলতি করে, তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী যেভাবে দেখভাল করছেন, তাতে আমরা আশান্বিত না হয়ে পারি না। উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে কিছুটা অসঙ্গতি থাকতে পারে, তাকে মেনে নিয়েও বলতে চাই, তার নিয়ন্ত্রণ জরুরি। তা না হলে সার্বিকভাবে উন্নয়ন প্রক্রিয়া ব্যাহত হতে বাধ্য। উন্নয়নের এই ফাঁকফোকর বন্ধে সরকারকে আরো সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে।