ধীরে ধীরে মানুষ স্বাভাবিক জনজীবনে অভ্যস্ত হতে শুরু করেছে। সপ্তাহের ব্যবধানে দ্বিতীয় সপ্তাহের প্রথম দিনের কঠোর লকডাউনে সড়কে ছিল যানবাহনের চাপ আর মানুষের সরব উপস্থিতি। রিকশা ও প্রাইভেট কারের পাশাপাশি বাসের সংখ্যাও ছিল অন্যদিনের চেয়ে বেশি। তবে অফিস আদালত সুনসান।
বৃহস্পতিবার লকডাউনে নগরীর বিভিন্ন মোড় পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, নগরীর ব্যস্ততম সড়কগুলোতে রিকশার রাজত্ব। লকডাউনের কারণে অটোরিকশা চলাচল বন্ধ থাকায় অনেক চালক রাস্তায় রিকশায় নিয়ে নেমেছেন। অন্যদিকে অনেক অবৈধ যানবাহনও রাস্তায় নেমেছে। আবার প্রাইভেট যানবাহনে অনেকে প্রেস ও বিভিন্ন অখ্যাত অনলাইনের নাম দিয়েও রাস্তায় নেমেছেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নগরীর লালখান বাজার এলাকায় কথা হয় এক প্রাইভেট কার চালকের সাথে। তার প্রাইভেট কারেও প্রেস লেখা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই চালক বলেন, ‘আমি প্রাইভেট কারটি দিয়ে উবার চালাই। পরিচিত লোকজনদের নিয়ে রাস্তায় ভাড়া নিচ্ছি। প্রেসলেখা থাকলে পুলিশ গাড়ি থামায় না। কোথাও থামালে যাত্রীদের আগেভাগে বলে রাখা হয়, তারা নিজেদের সাংবাদিক পরিচয় দিলে আর ঝামেলা করে না।’
এদিকে কঠোর লকডাউনের মধ্যেও নগরীর কাপ্তাই রাস্তার মাথা, বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, জিইসি মোড়, ওয়াসার মোড়, দেওয়ানহাট, চৌমুহনী, আগ্রাবাদ, নতুন ব্রিজ, কোতোয়ালী মোড়, নিউ মার্কেট, কাজির দেউড়ি, চকবাজার, আন্দরকিল্লা, লালদীঘি এলাকায় খাদ্যদ্রব্যের পাশাপাশি অন্যান্য পণ্যের দোকানও খুলেছে। ফুটপাতেও হকাররা সবজিসহ নানা পণ্যের পসরা নিয়ে বসছে। তাছাড়া গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন কারখানার শ্রমিক পরিবহনের নামে দিনভর নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে যাত্রী পরিবহন করতে দেখা গেছে অসংখ্য বাসকে। অন্যদিকে বিকেল পাঁচটার দিকে মূল সড়কের দোকানপাট বন্ধ করা হলেও অলিগলির দোকানগুলোতে ক্রেতাবিক্রেতার সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। নগরীর চন্দনপুরা এলাকায় কথা হয় এক দোকানির সাথে। তিনি বলেন, ‘পুলিশ আসতে দেখলে দোকানের গ্রিল টেনে দেওয়া হয়। চলে গেলে আবার খোলা হয়। খোলা থাকলে লোকজন জিনিসপত্র কিনতে আসে।’ কাজির দেউড়ি বাজারের মুদি দোকানি মিজানুর রহমান বলেন, সকাল ৭টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত আমাদের দোকান খোলা থাকে। বিকেল পাঁচটার পর বন্ধ করে দেওয়া হয়। না হলে পুলিশ ডিস্টার্ব করে।’ আগ্রাবাদ মোড়ে কথা হয়, রিকশা চালক কামাল হোসেনের সাথে। তিনি বলেন, ‘রাস্তায় রিকশার সংখ্যা স্বাভাবিক সময়ের চেয়েও বেশি হয়েছে। কর্মহীন অনেক মানুষ এখন পেটের দায়ে রিকশা চালাচ্ছে।’
এদিকে লকডাউনে স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করে চলাফেরা ও দোকান খোলা রাখার অভিযোগে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত ৪৪ মামলায় বিভিন্ন ব্যক্তি ও দোকানকে ১৮ হাজার ৬৫০ টাকা জরিমানা করেছেন। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পৃথকভাবে ১১জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নগরীর বিভিন্ন স্পটে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছেন বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। অভিযানে সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধ মেনে না চলায় বিভিন্ন দোকান, রেস্টুরেন্ট এবং শপিং মলে অভিযান পরিচালনা করে জরিমানার পাশাপাশি সাধারণ মানুষের মাঝে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে সচেতন করা হয়।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাসুমা জান্নাত চকবাজার ও বাকলিয়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৬ মামলায় ১ হাজার ৩শ টাকা, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এহসান মুরাদ চান্দগাঁও এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ৪ মামলায় ২ হাজার ৫০ টাকা, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আতিকুর রহমান সদরঘাট ও কোতোয়ালী এলাকায় অভিযান চালিয়ে ২ মামলায় ৪শ টাকা, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রেজওয়ানা আফরিন পাঁচলাইশ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ৬ মামলায় ২ হাজার ৩শ টাকা, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুরাইয়া ইয়াসমিন চকবাজার এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ১ মামলায় ১ হাজার টাকা, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট গালিব চৌধুরী খুলশী ও বায়েজিদ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ১১ মামলায় ৪ হাজার ২শ টাকা, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নূরজাহান আক্তার সাথী বায়েজিদ এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৫ মামলায় ১ হাজার ৯শ টাকা, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্লাবন কুমার বিশ্বাস চান্দগাঁও এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৪ মামলায় ৩ হাজার ৫শ টাকা, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল্লাহ আল মামুন কোতোয়ালী এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ৩ মামলায় ৬শ টাকা এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হুছাইন মুহাম্মদ পতেঙ্গা ও ইপিজেড এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করে ২ মামলায় ৮শ টাকা জরিমানা করেন।