আগামী ডিসেম্বরে বঙ্গবন্ধু টানেল প্রকল্প উদ্বোধনের কথা মাথায় রেখে টানেল সংযোগ সড়ক নিয়ে চলছে দিন-রাত ব্যস্ততা। ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় ৬ লেনের এই সড়কের কাজ বিলম্বিত হওয়ায় ডিসেম্বরের মধ্যে অন্তত ৪ লেনের কাজ শেষ করে টানেলের চাপ সামাল দেওয়ার চিন্তায় আছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। ৪ লেইন সড়কের ৫৫ শতাংশ কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে।
তবে সংযোগ সড়কের শতভাগ ব্যবহার নিশ্চিত করতে নতুন করে সংযোজন হচ্ছে ৩টি উড়াল সেতু। আনোয়ারার চাতরী, দৌলতপুরের কেইপিজেড ও শাহমীরপুরের ফকিরনীরহাট পয়েন্টে উড়াল সেতুর মাধ্যমে এলাকাভিত্তিক সড়কগুলোকে মূল সড়কের সাথে যুক্ত করা হবে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ৬ লেনের কাজ পুরোপুরি শেষ করার সাথে সাথে ভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে উড়াল সেতুর কাজ শুরু করা হবে বলে জানা গেছে। ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর ডিও লেটারে ভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে নির্মিত হবে ৩টি উড়াল সেতু।
দোহাজারী সড়ক বিভাগ (সওজ) ৪০৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে এ সড়কটি ৬ লেনে উন্নীত করার প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। বর্তমানে এ সড়কের বৈদ্যুতিক খুঁটি সরানোর কাজে ধীরগতির কারণে উন্নয়ন কাজ ব্যাহত হচ্ছে বলে জানা গেছে।
দোহাজারী সড়ক বিভাগ (সওজ) সূত্রে জানা যায়, পিএবি সড়কের শিকলবাহা ওয়াই জংশন থেকে কালাবিবি দিঘির মোড় পর্যন্ত ৮.১ কিলোমিটার বঙ্গবন্ধু টানেল (সংযোগ) সড়ক ৬ লেনে উন্নীত করার প্রকল্প ৪০৭ কোটি টাকা ব্যয়ে কাজ শুরু হয় ২০২০ সালের ১৪ জানুয়ারি। দোহাজারী সড়ক বিভাগ (সওজ) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল। ২০২০ সালের ১৪ জানুয়ারি থেকে এই প্রকল্পের ৪ লেনের কাজ শুরু হয়।
ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতার কারণে ৬ লেনের কাজ শুরু করতে না পারায় প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর বাড়িয়ে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়েছে। আগামী ডিসেম্বরে টানেল উদ্বোধন মাথায় রেখে সড়কের ৪ লেনে উন্নীত করার কাজ এগিয়ে চলছে। ইতোমধ্যে ৫৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। ফকিরনীরহাট থেকে কালাবিবি দিঘির মোড় পর্যন্ত বিভিন্ন অংশে মূল সড়কের ওপর বিদ্যুতের খুঁটি থাকায় চলমান উন্নয়ন কাজ ব্যাহত হচ্ছে। তবে সওজ বলছে, এক বছর আগে সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ বিভাগে ক্ষতিপূরণের টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। তারপরও রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ মেগা প্রকল্পের কাজে বিদ্যুৎ বিভাগের ভূমিকা নিয়ে অনেকের মাঝে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তবে সওজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বঙ্গবন্ধু টানেল যেহেতু ৪ লেন। সে কথা মাথায় রেখে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে এ সড়কের ৪ লেনের কাজ শেষ করা সম্ভব হবে।
সড়কের ওপর থেকে খুঁটি সরানোর কাজে ধীর গতির বিষয়ে আনোয়ারা পল্লী বিদ্যুতের ডিজিএম জসীম উদ্দীন বলেন, বঙ্গবন্ধু টানেল সড়কের চলমান উন্নয়ন কাজ দ্রুত শেষ করতে সড়কের ওপর থেকে বিদ্যুতের খুঁটি সরানোর কাজ চলমান আছে। বিদ্যুতের লাইন চালু রেখে খুঁটি সরানো যায় না। তাই গ্রাহকের যাতে বেশি ভোগান্তিতে পড়তে না হয় সে কথা বিবেচনা করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশক্রমে বিদ্যুৎ লাইন শাটডাউন (বন্ধ) করে খুঁটি সরানোর কাজে সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি।
নির্বাহী প্রকৌশলী (সওজ) দোহাজারী সড়ক বিভাগ এবং কর্ণফুলী টানেল সংযোগ সড়ক প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক সুমন সিংহ বলেন, শিকলবাহা ওয়াই জংশন থেকে কালাবিবি দিঘির মোড় পর্যন্ত ৮.১ কিলোমিটার বঙ্গবন্ধু টানেল সড়ক ৪০৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬ লেনে উন্নীত করার কাজ এগিয়ে চলছে। এ প্রকল্পের নতুন সংযোজন মাননীয় ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জমান চৌধুরী জাবেদের ডিও লেটারে আনোয়ারা চাতরি চৌমুহনী বাজার, দৌলতপুরের কেইপিজেড় গেট ও ফকিরনীরহাটে ৩টি উড়াল সেতু নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করা হবে। তবে এসব উড়াল সেতু চলমান প্যাকেজে করা সম্ভব হবে না। এটি ভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে করা হবে।
তিনি জানান, বঙ্গবন্ধু টানেল যেহেতু ৪ লেনের তাই ডিসেম্বর মাসে টানেল উদ্বোধন মাথায় রেখে ৪ লেনের কাজ এগিয়ে চলছে। বর্তমানে ৪ লেন প্রকল্পের ৫৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আশা করছি ডিসেম্বরের মধ্যে চার লেনের পুরো কাজ শেষ হবে। কিছু ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতার কারণে ৬ লেনের উন্নীত করার কাজ শুরু করা যায়নি। তাই প্রকল্প মেয়াদ ১ বছর বাড়ানো হয়েছে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে ৬ লেনের কাজ শেষ হবে।
তিনি আরও বলেন, সড়কের ওপর বৈদ্যুতিক খুঁটি থাকায় উন্নয়কাজ কিছু ব্যাহত হলেও বিদ্যুতের খুঁটি সরানোর কাজ চলছে। খুঁটিগুলো দ্রুত সরাতে বিভাগীয় কমিশনার আশরাফ উদ্দিন মহোদয়ের মাধ্যমে গত ১৬ আগস্ট দুই বিদ্যুৎ বিভাগের সাথে বৈঠক হয়। দ্রুত খুঁটি সরানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।