সড়কে চাঁদের গাড়ির দাপট

প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা ইট বালি কাঠ পরিবহনে বেশি ব্যবহৃত হয় এ গাড়ি.

রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি | শনিবার , ১৩ মে, ২০২৩ at ৬:৪৮ পূর্বাহ্ণ

রাঙ্গুনিয়ার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে দাপিয়ে চলছে অবৈধ চাঁদের গাড়ি নামে খ্যাত জিপ। লাইসেন্সবিহীন এসব গাড়ি মূলত ইটভাটায় জ্বালানি কাঠ ও ইট বালি কাঠ পরিবহনের কাজে বেশি ব্যবহার হয়। বেপরোয়া গতির কারণে নিত্য নানা দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ও অঙ্গহানির কারণ হলেও এসব গাড়ির ব্যাপারে মাথাব্যথা নেই সংশ্লিষ্টদের।

সরেজমিনে দেখা গেছে, অন্যান্য গাড়িকে কোনো পরোয়া না করেই অবৈধ চাঁদের গাড়িগুলো সড়কে মূলত অবৈধ মালামাল বহন কাজেই বেশি ব্যবহৃত হয়। শুধু যাত্রী বা পথচারী নয় অন্যান্য গাড়ির চালকেরাও আতঙ্কিত এসব গাড়ি নিয়ে। কার আগে কে যাবে এমন এক অসুস্থ প্রতিযোগিতায় লিপ্ত থাকে চাঁদের গাড়ির চালেকেরা। সড়কপথে যেন বিমানের গতি নিতে চাই তারা। এদিকে রাঙ্গুনিয়ার সড়কে আইনশৃঙ্খলা ও ট্রাফিক কর্তৃপক্ষের কোনো নিয়ন্ত্রণ না থাকায় লাইসেন্স বিহীন যে কেউ চালাচ্ছে এসব গাড়ি। ফলে নিত্য দুর্ঘটনায় ঘটছে প্রাণহানির মতো ঘটনা।

জানা যায়, চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি রাতে উপজেলার পদুয়া ইউনিয়নের গার্লস স্কুলের সামনে মোটরসাইকেল আরোহী ওবাইদুল হক জাহেদ (২৫) নামে এক ছাত্রলীগ নেতা নিহত হয়েছেন। এর আগে ২১ জানুয়ারি রাঙামাটি সড়কের রাঙ্গুনিয়ার কাউখালী রাস্তার মাথা এলাকায় বেপরোয়া চাঁদের গাড়ির সাথে মোটর সাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে মো. মিজান (২২) নামে এক বাইক আরোহী নিহত ও মো. আবদুল্লাহ (১৮) নামে আরও এক আরোহী আহত হন। এর দুদিন আগে ১৯ জানুয়ারি পদুয়া ইউনিয়নের রাজারহাট মহাজন পাড়া এলাকায় দুর্ঘটনায় মো. রাজা মিয়া (৫২) নামের এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। গত বছরের ২ অক্টোবর দ্রুতগামী চাঁদের গাড়ির সাথে শ্যামলী পরিবহন বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে স্যং প্রো মারমা (২৫) নামে চাঁদের গাড়ির হেলপারের মৃত্যু হয় এবং আহত হয় বাসের অন্তত ১৫ জন যাত্রী। ১২ ফেব্রুয়ারি উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের সাহেবনগর এলাকায় সড়কে বেপরোয়া ইটবোঝায় চাঁদের গাড়ির চাপায় মো. মাসুদ (৪০) নামের এক ব্যবসায়ীর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। সবচেয়ে মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি ঘটে ২০১৯ সালে। ভোরের দিকে ইটভাটা শ্রমিকেরা রাস্তার পাশে অস্থায়ী ঘর করে ঘুমাচ্ছিলেন। একটি চাঁদের গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ওই ঘরে ঢুকে চাপা দেয় তাদের। এতে চারজন ঘুমন্ত অবস্থাতেই মারা যান।

অনুসন্ধানে উঠে আসে, রাঙ্গুনিয়ায় সড়কগুলোতে প্রায় ১ হাজার চাঁদের গাড়ি চলাচল করে। মূলত ইট আর কাঠ বোঝাইয়ের কাজে এই গাড়ি ব্যবহৃত হয়। ইট ভাটার মৌসুমে এসব গাড়ি অবৈধ জ্বালানি কাঠ নিতেই বেশি চলতে দেখা যায়। চাঁদের গাড়ি রাস্তায় চলাচলে নিষিদ্ধ হলেও তা যেন থোড়াই কেয়ার করেন তারা। প্রশাসন থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের ম্যানেজ করে চলে এসব গাড়ি। পুলিশের কোনো কোনো অভিযানে আটক হলেও বিভিন্ন তদবিরে এসব গাড়ি বেরিয়ে আসার অভিযোগ রয়েছে। অথচ তাদের চালকদের নেই কোনো লাইসেন্স, নেই সড়ক সম্পর্কে সচেতনতা। অপ্রাপ্তবয়স্ক চালকের সংখ্যাও কম নয়। এছাড়াও গাড়ি চালানো হয় হেলপার দিয়ে। ফলে চাঁদের গাড়ির দৌরাত্ম্য হয়ে উঠছে অলিখিত নিয়ম। প্রশাসনের নাকের ডগায় অবাধে চষে বেড়াচ্ছে এসব গাড়ি। চোখে দেখলেও এদের থামানোর যেন কেউ নেই।

এই বিষয়ে রাঙ্গুনিয়া থানার ওসি মো. মাহবুব মিলকী বলেন, চাঁদের গাড়ির চলাচল বন্ধে বিভিন্ন সময় অভিযান চালানো হয়েছে। এবার এসব অবৈধ গাড়ি স্থায়ীভাবে বন্ধে পদক্ষেপ নেয়া হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপরিবেশ ধ্বংস করে রাঙ্গুনিয়ায় চলছে চার ইটভাটা
পরবর্তী নিবন্ধআপসে বিরোধ নিষ্পত্তি