স্যান্ডরের ডায়ালাইসিস সেন্টারে প্রতিদিনই বিলম্বে সেবা

কাঁচামাল সংকট

আজাদী প্রতিবেদন ম | বৃহস্পতিবার , ২৬ জানুয়ারি, ২০২৩ at ৮:০৬ পূর্বাহ্ণ

ঢাকার জাতীয় কিডনি ইনস্টিটিউট (নিকডো) ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে একযোগে কিডনি ডায়ালাইসিস সেবা বন্ধে আগেই আল্টিমেটাম দিয়ে রেখেছে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান স্যান্ডর মেডিকেইডস (প্রা.) লিমিটেড। সরকারের কাছ থেকে বকেয়া পাওনা না পাওয়ায় গত ১৭ জানুয়ারি প্রদত্ত এক চিঠিতে প্রতিষ্ঠানটি এ আল্টিমেটাম দেয়।

কাঁচামাল সংকটে যেকোনো মুহূর্তে এ সেবা বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে চিঠিতে জানায় প্রতিষ্ঠানটি। স্যান্ডরের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রাজীব সিন্ধীর স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত একটি চিঠি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব, পিপিপির প্রধান নির্বাহী, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল) এবং নিকডো ও চমেক হাসপাতালের পরিচালক বরাবর পাঠানো হয়। তবে ১৭ জানুয়ারি চিঠি দেয়ার পরও বকেয়া পাওনা বাবদ সরকারের কাছ থেকে কোনো টাকা পাওয়া যায়নি বলে দাবি করেছেন স্যান্ডর সংশ্লিষ্টরা।

ফলে কাঁচামাল সংকটে এখন প্রতিদিনই ডায়ালাইসিস সেবা শুরুতে বিলম্ব হচ্ছে। চমেক হাসপাতালের স্যান্ডরের সেন্টারে প্রতিদিনই অন্তত কয়েক ঘণ্টা করে ডায়ালাইসিস সেবা বন্ধ থাকছে। এতে করে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে রোগীদের। দূরদূরান্ত থেকে আগত এসব রোগীকে সেবা নিতে দীর্ঘক্ষণ ধরে অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে। গত ৪/৫ দিন ধরে এমন চিত্রই যেন স্বাভাবিক হয়ে পড়েছে।

স্যান্ডরের সেন্টারে দায়িত্বরতরা বলছেন, ডায়ালাইসিস সেবা প্রদানে যে কাঁচামাল প্রয়োজন, তা বেশ কিছুদিন আগেই শেষ হয়ে গেছে। এখন প্রতিদিন অল্প অল্প করে কিনে এনে সেবা দেয়া হচ্ছে। অর্থ সংকটে কাঁচামাল কেনা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে সেবা দিতে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে।

এর আগে গত ১৫ অক্টোবর একইরকম এক চিঠি দিয়ে সেবা বন্ধের আল্টিমেটাম দেয় স্যান্ডর। পাশাপাশি স্যান্ডরের সেন্টারের প্রবেশমুখেও নোটিশ সাঁটিয়ে দেয়া হয়। ওই সময় সরকারের কাছে ২২ কোটি টাকার বেশি পাওনা বকেয়া থাকার কথা জানিয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি। অবশ্য, মন্ত্রণালয় ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে পরে সেবা চালিয়ে নিতে সম্মত হয় সেবাদানকারী এ প্রতিষ্ঠান।

তবে আশ্বাস পেলেও এখনো পর্যন্ত বকেয়া পাওনা বাবদ কোনো টাকা সরকারের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি দাবি করে ডায়ালাইসিস সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান স্যান্ডর মেডিকেইডস (প্রা.) লিমিটেডএর ম্যানেজার (হিসাব) নাজমুল হাসান গতকাল আজাদীকে বলেন, ওই সময় থেকে বকেয়া বেড়ে এখন ৩১ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। আমরা আশ্বাস পেয়ে যাচ্ছি। কিন্তু পাওনা বুঝে পাচ্ছি না। কোথায় যেন আটকে যাচ্ছে। অর্থাভাবে স্টাফদের বেতনভাতা বন্ধের পাশাপাশি সাপ্লাইয়ারদের (সরবরাহকারী) টাকাও পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না।

তারাও (সাপ্লাইয়াররা) আমাদের আর বিশ্বাস করছে না। ফলে ডায়ালাইসিস সেবা প্রদানে যে কাঁচামাল দরকার আমরা সেগুলো পাচ্ছি না। যা আছে, তা দিয়ে বড়জোর দুইএকদিন চলতে পারে। এরপর সেবা বন্ধ করা ছাড়া কোন উপায় থাকবে না। যদিও সেবা বন্ধ হোক, আমরা তা কোনভাবেই চাই না। কিন্তু আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে।

আর কাঁচামাল সংকটের কারণে নির্দিষ্ট সময়ে সেশন শুরু করা সম্ভব হচ্ছে না জানিয়ে স্যান্ডর মেডিকেইডস (প্রা.) লিমিটেডএর ম্যানেজার (হিসাব) নাজমুল হাসান বলেন, ১২টায় সেশন শুরুর কথা থাকলেও তা শুরু করতে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। ওই কাঁচামালটি কিনে আনতে যে সময়টুকু লাগে, ওই সময়ের জন্য সেবা বন্ধ থাকছে। কাঁচামালটি কিনে আনার পর ডায়ালাইসিস শুরু করা হচ্ছে। এখানে নিজেদের পক্ষে আর কিছু করা সম্ভব হচ্ছে না বলেও মন্তব্য করেন স্যান্ডরের এই কর্মকর্তা।

এদিকে, গরীব রোগীদের ভোগান্তি কমাতে সরকারি পর্যায়ে ডায়ালাইসিস সেবার পরিসর বাড়িয়েছে চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কয়েকদিন আগেই নতুন করে দশটি মেশিনে ডায়ালাইসিস সেবা চালু করা হয় হাসপাতালের কিডনি ওয়ার্ডে। যেখানে মাত্র ৪১৭ টাকায় প্রতি সেশন ডায়ালাইসিস সেবা গ্রহণের সুযোগ রয়েছে। স্যান্ডরের তালিকাভুক্ত রোগীরা এখানে সেবা গ্রহণের সুযোগ পাচ্ছেন।

স্যান্ডরের সেবা বন্ধ সংক্রান্ত চিঠি পাওয়ার তথ্য নিশ্চিত করে চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান আজাদীকে বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এ বিষয়ে অবহিত রয়েছে। তারা (মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর) এটি নিয়ে কাজ করছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরূপালী ব্যাংকের সাবেক দুই কর্মকর্তাসহ তিনজনের সাজা
পরবর্তী নিবন্ধকাপ্তাইয়ের দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় দুই পক্ষের গোলাগুলি, ১ জনের মৃত্যু