২০১৮ সালের শেষের দিকে অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছিলেন সীতাকুণ্ডের মো. আলাউদ্দিন। আবেদনের তিন মাসের মাথায় শিক্ষানবিস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বৈধ চালক হলেও পাননি ড্রাইভিং লাইসেন্স স্মার্ট কার্ড। ৫ বার মেয়াদ বাড়াতে হয়েছে তাকে। দীর্ঘ সময়ে অস্থায়ী লাইসেন্সটি ছিঁড়ে এক প্রকার ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়ে। সর্বশেষ মঙ্গলবার সকালে তিনি সেই স্মার্ট কার্ড লাইসেন্সটি পান।
মো. আলাউদ্দিন বলেন, ‘দালালের মাধ্যমে ৫ হাজার টাকা কন্ট্রাকে লাইসেন্স বানাতে দিয়েছিলাম। লাইসেন্স দেয়ার কথা বলে আগেই টাকা নিয়ে নেয়। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে লাইসেন্স পাইনি। পরে ওই দালালকেও আর খুঁজে পাইনি। কয়েকদিন আগে ম্যাসেজ পেয়ে বিআরটিএতে এসেছি। লাইসেন্স পেয়ে খুব ভালো লাগছে।’
শুধু আলাউদ্দিন নয়, গত ১৫ দিনে প্রায় কয়েক শত পুরনো গ্রাহককে ড্রাইভিং লাইসেন্স স্মার্ট কার্ড প্রদান করেছে সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মেশিন টুলস্ ফ্যাক্টরি (বিএমটিএফ) লিমিটেড। তবে অর্ধেকেরও বেশি গ্রাহক নির্ধারিত সময়ে এসব স্মার্ট কার্ড নিতে আসছেন না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। গত ৩১ অক্টোবর থেকে লাইসেন্স বিতরণ শুরু হলেও গত ১৬ দিনে কী পরিমাণ লাইসেন্স প্রদান করা হয়েছে, সে বিষয়ে স্পষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে বিএমটিএফ চট্টগ্রামের ম্যানেজার আশরাফুল ইসলাম গতকাল দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘গত ৩১ অক্টোবর থেকে পুরনো ড্রাইভিং লাইসেন্সের স্মার্ট কার্ড বিতরণ শুরু হয়েছে। আশা করছি, নির্ধারিত সময়ে পুরনো গ্রাহকদের হাতে স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান করা সম্ভব হবে।’ তিনি ম্যাসেজ পাওয়ার ৫ দিনের মধ্যে লাইসেন্স সংগ্রহের জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহবান জানান ।
সূত্র জানায়, ২০১৬ সালে স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স সরবরাহের জন্য টাইগার আইটি নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয় বিআরটিএ। ২০২১ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে তাদের ১৫ লাখ কার্ড ছাপানোর চুক্তি হয়। প্রতিষ্ঠানটি ২০১৯ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত চুক্তি তিন বছরের মধ্যেই সাড়ে ১৪ লাখের কাছাকাছি কার্ড ছাপিয়ে বিআরটিএকে সরবরাহ করে। চাহিদার কারণে নির্ধারিত সময়ের আগেই বেশি কার্ড ছাপাতে হয় তাদের। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় পুরনো ঠিকাদার টাইগার আইটির সাথে জটিলতাও তৈরি হয় বিআরটিএ’র। পরবর্তীতে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্স প্রাইভেট লিমিটেডের সাথে গত বছরের ২৯ জুলাই চুক্তিবদ্ধ হয় বিআরটিএ। পাঁচ বছরে ৪০ লাখ ড্রাইভিং লাইসেন্স সরবরাহ করবে প্রতিষ্ঠানটি। চট্টগ্রামেও গত ১৮ মে থেকে কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
বিআরটিএ চট্টগ্রামের মোটরযান লাইসেন্স শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘এখন নতুন-পুরনো সব লাইসেন্সের স্মার্ট কার্ড বিতরণ শুরু হয়েছে।’ এ ব্যাপারে বিআরটিএ চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, ‘টাইগার আইটির পেন্ডিং ১২ লাখ ৪৪ হাজার ড্রাইভিং লাইসেন্সের প্রিন্টিং কার্যক্রম শুরু করেছে বিএমটিএফ। ইতোমধ্যে সারাদেশে তারা প্রিন্ট হওয়া কার্ড বিতরণ শুরু করেছে। আশা করছি, ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়ে সাধারণ মানুষের আর কোন অভিযোগ থাকবে না।’