স্মরণের আবরণে হাসান মাহমুদ চৌধুরী

জিয়া উদ্দিন মানিক চৌধুরী | সোমবার , ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১ at ৬:০৩ পূর্বাহ্ণ

গত ২৮ শে সেপ্টেম্বর ২০২০ ঢাকাস্থ আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে সবাইকে কাঁদিয়ে নীরবে চলে গেলেন হাসান মাহমুদ চৌধুরী। সমাজ সেবক, সকল পেশাজীবী মানুষের প্রিয় ব্যক্তিত্ব, বিশিষ্ট শিল্পপতি, এই পরোপকারী মানুষটি সাদা মনের আলোকিত মানুষ ছিলেন। তিনি সব সময় শুকরিয়া আদায় করে বলতেন আল্লাহ তায়ালা আমাকে অল্প জীবনে সব দিয়েছেন। অপ্রাপ্তির কিছু নেই। তাই আল্লাহ তায়ালার ডাকে সর্বদা প্রস্তুত। সবাই সাক্ষী দিচ্ছে তিনি ইচ্ছেমতো দুহাত খুলে দান করতেন। মহামারী করোনা পরিস্থিতির শুরুর পর থেকে ঢাকায় অবস্থান করে মানবিক সহায়তার তদারকি করছিলেন। চট্টগ্রামের কিছু মানবিক কাজে এবং জাতীয় শোক দিবসে চান্দগাঁও আবাসিক কল্যাণ সমিতির আলোচনা সভা, রক্তদান কর্মসূচি ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণে অংশ নিতে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে আসেন। এ সময় বিভিন্ন সেবামূলক কাজে অংশগ্রহণ করার এক পর্যায়ে হঠাৎ তিনি অসুস্থতাঅনুভব করতে থাকেন। অসুস্থ থাকাকালীন সময়ও চট্টগ্রামে অবস্থানকালে তিনি করোনা আইসোলেশন সেন্টার, চট্টগ্রাম এর জন্য ৫ (পাঁচ) লক্ষ টাকা, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এর তিন হাজার সেবকের নতুন পোশাকের জন্য ২০ (বিশ) লক্ষ টাকা এবং পাহাড়তলী অগ্নিদুর্গতদের জন্য ২ (দুই) লক্ষ টাকাসহ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে নগদ ২২ (বাইশ) লক্ষ টাকার অনুদান দেন। এছাড়াও তিনি দেশে করোনা মহামারীতে নগরী ছাড়াও প্রত্যন্ত অঞ্চলে দেড় লক্ষ মানুষকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছেন। এর মধ্যে চট্টগ্রামের প্রায় ৫০ হাজার মানুষের ঘরে পৌঁছে দিয়েছেন খাদ্য সামগ্রী। তাঁর কর্মজীবনে সফলতার পাশাপাশি সামাজিক ও সেবামূলক কাজেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। তিনি বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষকে কর্মসংস্থান করে দিয়েছেন, বিদেশও পাঠিয়েছেন, ব্যবসা দিয়েছেন, ব্যবসা করার জন্য অর্থও দিয়েছেন। তিনি যা কিছু করেছেন সবই নিঃস্বার্থে যা বর্তমান যুগে বিরল।
তাঁর সামাজিক কর্মকাণ্ডের পরিধি দেশের সীমানা পেরিয়ে বিভিন্ন দেশের প্রবাসীদের মাঝেও প্রসারিত করেছেন। দেশের অর্থনীতি এবং ব্যবসা ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার স্বীকৃতি হিসেবে বাংলাদেশ সরকার তাঁকে আনুষ্ঠানিকভাবে সি,আই,পি মর্যাদা দিয়েছেন। স্কুল-কলেজ-মসজিদ-মাদ্রাসা ও এতিমদের জন্য তিনি ছিলেন উদার দানবীর। এছাড়াও অসংখ্য অসহায়, দরিদ্র পরিবারকে সারা বছর গোপনে আর্থিক সহযােগিতা করতেন যা তাঁর মৃত্যুর পর প্রকাশ পায়। তিনি কাশেম-নুর ফাউন্ডেশন এর কো-চেয়ারম্যান, কেএন-হারবার কনসোর্টিয়াম লিমিটেড এর এম,ডি, চান্দগাঁও আবাসিক এলাকা কল্যাণ সমিতির সভাপতি, ডাচ-বাংলা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি এর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট, জার্মান-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি এর পরিচালক, ল্যাটিন আমেরিকা-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি এর ভাইস প্রেসিডেন্ট, বাংলাদেশ-থাই চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি এর পরিচালক হিসেবেও বেশ সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন।
তিনি চট্টগ্রামের রাউজান, কদলপুরের বীর মুক্তিযোদ্ধা ও দানবীর, ফেনীর সাবেক সিভিল সার্জন মরহুম ডাঃ আবুল কাশেম চৌধুরীর ৩য় পুত্র। ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন তাঁদের পরিবারের অংশগ্রহণ ও সাহায্য সহযোগিতা ছিল অপরিসীম। তাঁর মামা ছিলেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ এর সাবেক সভাপতি প্রখ্যাত মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মরহুম সেকান্দার হায়াত খান। তাঁর ভগ্নিপতি চট্টলার সূর্য সন্তান, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর “বঙ্গবন্ধু” উপাধিদাতা, ৬৯ এর গণআন্দোলনের কিংবদন্তি বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম রেজাউল হক চৌধুরী মুশতাক। তার বড় ভাই ডাকসুর সাবেক জিএস ও সাবেক মন্ত্রী, জাতীয় পার্টির বর্তমান মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু।
করোনা মহামারীর শুরু থেকেই অসহায় মানুষের পাশে থাকা হাজার হাজার পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দানকারী এই করোনা যোদ্ধা নিজেই করোনার সাথে যুদ্ধ করে পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চলে গেলেন।
আগামীকাল ২৮ সেপ্টেম্বর মরহুমের পরিবার ও শুভানুধ্যায়ীদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। মরহুমের রাউজানস্থ কদলপুর নিজ বাড়ী মসজিদ, চান্দগাঁও বি ব্লক মসজিদ, ঢাকা মিরপুর বুদ্ধিজীবী মসজিদে পবিত্র কুরআনখানি ও মিলাদ মাহফিল এবং এছাড়াও বাদ আছর নন্দন কাননস্থ বাওয়া চিলড্রেন হোম এতিমখানায় বিশেষ মোনাজাতের মাধ্যমে মরহুমের রূহের মাগফেরাত কামনা করা হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআব্দুর নুর সওদাগর সড়ক উন্নয়ন ও আলেক্কা ছকানী রোডের নালা পরিষ্কার প্রসঙ্গে
পরবর্তী নিবন্ধশিক্ষাক্ষেত্রে নব দিগন্তের প্রত্যাশা