প্রত্যেকেই নিজ নিজ পেশা থেকে মানবিক কর্মকাণ্ড করা অসম্ভব কিছু নয়, ডাক্তারির মতন মহান পেশা থেকে খুব সহজেই মানবতার সেবা করা খুব সহজ। কারণ, এই পেশা থেকে সাধারণ মানুষের খুব কাছাকাছি যাওয়া যায়, তাদের কষ্টগুলো শেয়ার করা যায়, তাদের সুখ–দুঃখের কথা শুনা যায়। আপনার কাছে কোন হতদরিদ্র রোগী আসলে তাকে সম্পূর্ণ ভিজিট ফ্রি অথবা আংশিক ফ্রি অথবা ইনভেস্টিগেশনসমূহে অধিকাংশ ছাড় দেওয়ার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করা যায়। অথবা নিজস্ব যাকাত তহবিল থেকে সহযোগিতা করা যায়। আর এই কাজ সম্পাদনের মাধ্যমে দুনিয়া ও আখেরাতে কল্যাণ অর্জিত হয় আর এই কাজটি সমগ্র চিকিৎসকমন্ডলীর পক্ষে খুবই সহজ। সার্জনদের ক্ষেত্রে অপারেশন চার্জ কমানো যায় অথবা হতদরিদ্রেদের জন্য সম্পূর্ণ ফ্রি করা যায়। যেহেতু আল্লাহতায়ালা তাঁর পবিত্র কালামে নেক আমলের কথা বার বার বলেছেন, ‘সময়ে শপথ, মানুষ অবশ্যই ক্ষতির মধ্যে নিমজ্জিত আছে, সে লোকগুলো বাদে যারা আল্লাহতায়ালার উপর ঈমান এনেছে, নেক কাজ করেছে এবং একে অপরকে নেক কাজের তাগিদ দিয়েছে’–সূরা আসর– ১,২,৩। চিকিৎসা পেশা এমন একটি মহৎ পেশা যার মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর খুব কাছাকাছি যাওয়া যায়। তাদের মধ্যে যারা নিতান্তই গরীব তাদেরকে স্বল্পমূল্যে কিংবা বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারেন। কাল কেয়ামতের কঠিন ময়দানে ফরজ/নফল ইবাদতের ঘাটতি দেখা গেলে এই নেক আমলই আপনাকে কঠিন পরিণতি থেকে রক্ষা করবে। নেক আমল জান্নাতে প্রবেশ করার অন্যতম প্রধান শর্ত। তবে শুধু নেক আমলই যথেষ্ট না। আল্লাহর রহমত না থাকলে শুধু নেক আমলই কোন কাজে আসবে না। অনেকেই চিন্তা করেন– আমি নেক আমল না করে আল্লাহর রহমত কামনা করি, নেক আমল না করে ও গুণাহ না ছেড়ে, তওবা না করে পরকালের মুক্তির জন্য কেবল আল্লাহর রহমতের আশায় বসে থাকা বোকামি। আবার অনেকেই নেক আমল করে তা নিয়ে অহংকার করা আরও বড় বোকামি। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সাঃ) বলেছেন, ‘যার অন্তরে সরিষার দানা পরিমাণও অহংকার আছে, সে প্রথম পর্যায়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। যার অন্তরে সরিষার দানা পরিমাণ ঈমান আছে সে জাহান্নামে স্থায়ীভাবে প্রবেশ করবে না’– (ইবনে মাজাহ –৫৯)। অতএব নেক আমল করতে হবে খুব বেশি বেশি। কোন ছোট গুণাহকে হালকা মনে না করা। কোন ছোট আমলকেও না ছাড়া কারণ মহান আল্লাহতায়ালা কাকে কোন উছিলায় নাজাত দিবেন তা একমাত্র তিনিই জানেন। পৃথিবীতে ডাক্তারি পেশা এমন একটি মহৎ পেশা যেটি আপনাকে সৎ কর্ম করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। অজপাড়াগাঁয়ে কিংবা বন্যা দূর্গত অঞ্চলে মেডিকেল টিম স্থাপন করে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদানের মাধ্যমে গরীব ও দুস্থ মানুষদের যে ভালবাসা পাওয়া যায় তা যেন এক অকৃত্রিম, ছন্দময় ভালবাসার এক দুর্ভেদ্য দুর্গ। অতএব এই পেশাটি সংরক্ষণের মাধ্যমে নিজের ইচ্ছা শক্তির সাহায্যে মানবিক কর্মকান্ড সম্পাদন করা খুব একটা কঠিন কাজ নয়। ও দিকে প্রকৌশল পেশায় যারা জড়িত রয়েছেন তারাও বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করে মানবতার সেবা করতে পারেন। যেমন: মধ্যবিত্ত কিংবা কোরআনের হাফেজ, আলেমে দ্বীন কিংবা নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারকে বিনামূল্যে নকশা প্রণয়ন করে সেই সুযোগটি লাভ করা যায়। এতে করে প্রকৌশলী ভাই–বোনদের তহবিলে নেক আমলের পাল্লা ভারী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। আর এটি সহজেই সম্পাদন করা যায় যদি ইচ্ছাশক্তি এবং মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি নির্মোহ ও দুনিয়াবিমুখ থাকে। পরহেজগার প্রকৌশলীরা এই কাজটি করে থাকেন। কাল কেয়ামতের কঠিন ময়দানে এই নেক আমল হয়ত তাদের নাজাতের উছিলা হিসাবে দেখা দিতে পারে। আইনজীবী মহল বিনামূল্যে আইনী পরামর্শ প্রদানের মাধ্যমে দুস্থ ও গরীব জনগোষ্ঠীর খুব কাছাকাছি যেতে পারেন। অনেক দরিদ্র কৃষক প্রভাবশালী মহলের খপ্পরে পড়ে সহায়সম্বলহীন হয়ে যায় আর তাদেরকে রক্ষার জন্যে সৎ ও নির্লোভ আইনজীবীরা নামমাত্র মূল্যে কিংবা বিনামূল্যে আইনী পেশায় সহযোগিতা করতে পারেন। মামলার খরচটি যৎসামান্য নিলে সেই দরিদ্র মানুষের মুখের হাসি ফুটতে বাধ্য আর এই মানুষটি কাল কেয়ামতের মাঠে সেই সৎ পরহেজগার নিরহংকার আইনজীবীর পক্ষে আল্লাহতায়ালার সামনে সাক্ষী দিবে। এটাই হয়তো তার জন্য হতে পারে বড় ধরনের পাওনা ও ছওয়াব। স্থপতি মহলকেও এই কাজে এগিয়ে আসা দরকার। তারাও নেক আমল অর্জনের জন্যে বিনামূল্যে নকশা প্রণয়ন করে দিতে পারেন। সেটি তার জন্যে নাজাতের উছিলা হতে পারে কঠিন কেয়ামতের মাঠে। পুলিশ বাহিনী নিয়ে সমাজে তিক্ততা রয়েছে সবচেয়ে বেশি। দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য বলে খ্যাত পুলিশ বাহিনী আজ সাধারণ মানুষের জন্যে মূর্তিমান আতঙ্ক হিসাবে দাঁড়িয়েছে। তারা অন্যায়ভাবে সৎ ও নিরীহ মানুষকে হয়রানি ও মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে সাধারণ মানুষের জীবনকে দূর্বিসহ করে তুলে কিন্তু ব্যতিক্রম কিছু দেখা যায়– এখনও কিছু সৎ পুলিশ অফিসার রয়েছেন যারা মানবিক কর্মকাণ্ডকে প্রাধান্য দিয়ে নিরীহ মানুষদের কাছাকাছি থাকেন। সুন্দর ব্যবহার ও বিভিন্ন পুলিশী পরামর্শ প্রদান করে মামলায় জর্জরিত মানুষদের সেবা করতে পারেন পুলিশ ভাইয়েরা আর এতে করে নেক আমলের পাল্লা হয়ত তাদের ঝুড়িতে বৃদ্ধি পেতে পারে। পুলিশী অত্যাচারে অতিষ্ঠ এই ভূ–খন্ডে যদি কিছু পুলিশ অফিসার এই যৎ সামান্য মহৎ কাজটুকু করতে পারেন তবে তিনি আল্লাহর কাছে সেই বিনিময়টুকুন পাবেন এবং দুনিয়া ও আখেরাতে সেই পুলিশ ভাইটি সার্বিক কল্যাণ লাভ করতে পারে– আল্লাহতায়ালা তাঁর কালামে পাকে বলেন, ‘আজ প্রত্যেককে তার কৃতকর্মের প্রতিফল দেওয়া হবে। আজ কারও প্রতি জুলুম করা হবে না। আল্লাহ হিসাব গ্রহণে তৎপর’– সূরা আল্ মুমিন – ১৭। অন্য আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘কেউ অনুপরিমাণ সৎকর্ম করলে তা দেখবে এবং কেউ অনুপরিমাণ অসৎকর্ম করলে তাও দেখতে পারবে’– সূরা আয যিলযাল– ৭,৮। দুনিয়ায় নেক আমলকারীদের পুরস্কার হল জান্নাত। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যারা ঈমান আনে ও নেক কাজ করে তাদের জন্য আছে নেয়ামতে ভরা জান্নাত, সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে’– সূরা লোকমান–৮, ৯। আল্লাহতায়ালা আরেকটি আয়াতে বলেন, ‘ নিশ্চয়ই যারা ঈমান এনেছে এবং নেক আমল করেছে, তাদের মেহমানদারীর জন্য রয়েছে জান্নাতুল ফেরদৌস’ – সূরা কাহাফ – ১০৭। ব্যাংকারদের তাঁর সেবা প্রদানেরর মাধ্যমে নেক আমল অর্জন করতে পারেন কিন্তু অধিকাংশ ব্যাংকের কর্মকর্তা–কর্মচারীরা গ্রাহকদের সাথে রূঢ় ব্যবহার করেন, এতে করে তাঁর অর্জিত নেক আমলসমূহ নিমিষেই নষ্ট হয়ে যায়। সুন্দর ব্যবহার ও পরিচ্ছন্ন ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে গ্রাহকদের আস্থা অর্জন করা খুব সহজ। প্রতিটি ব্যাংকার এই কাজটি অতি সহজেই করতে পারেন। গ্রাহকদের খুব কাছাকাছি আসতে পারেন। এর মাধ্যামে কাল কেয়ামতের কঠিন মাঠে তাঁর এই পরিচ্ছন্ন সেবা হয়ত নাজাতের উছিলা হয়ে দেখা দিতে পারে।
লেখক: সভাপতি, রাউজান ক্লাব, সিনিয়র কনসালটেন্ট (ইএনটি), রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতাল