পরকীয়ার কথা জেনে যাওয়ায় ভাড়াটে খুনী দিয়ে স্বামীকে খুন করেছে স্ত্রী। ভাড়াটে খুনী গলা কেটে স্বামীকে হত্যার সময় ঘটনাস্থল থেকে মাত্র ৬০ গজ দূরে দাঁড়িয়ে তা প্রত্যক্ষও করেছেন স্ত্রী। হত্যাকাণ্ডের পরে খুনীর হাতে তুলে দেন ত্রিশ হাজার টাকা। পরে আবার ওই খুনের বিচার চেয়ে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে হত্যা মামলার বাদীও হন স্ত্রী। এমন কৌশলী ভূমিকার কারণে হত্যা মামলাটি দীর্ঘসময় ক্লু-লেস ছিল। তবে শেষমেষ পিবিআইয়ের হাতে ধরা পড়লেন উম্মি ছালমা (৩০) নামে ওই পাষণ্ড নারী।
২০১৯ সালের ৪ ডিসেম্বর সীতাকুণ্ড থানাধীন ভাটিয়ারী এলাকায় রেলওয়ে ওভারব্রিজের কাছে একটি ক্ষেত থেকে রফিকুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তির গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তবে হত্যাকান্ডের আট মাসেও খুনের কোনো ক্লু বের করতে পারেনি পুলিশ। শেষমষ সীতাকুণ্ড থানা পুলিশ মামলাটির তদন্ত পরিচালনায় অপরাগতা প্রকাশ করে পুলিশ সদর দপ্তরে চিঠি পাঠায়। পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে হত্যা মামলাটি পরে পিবিআই এর হাতে আসে। তদন্ত হাতে পাওয়ার তিন মাসের মধ্যেই পিবিআই ওই হত্যা মামলাটির রহস্য উদঘাটনের পাশাপাশি রফিকুল ইসলাম খুনের ঘটনায় তার স্ত্রীসহ তিনজন জড়িত থাকার প্রমাণ পায়। এরা হলেন নিহতের স্ত্রী উম্মি ছালমা, তার প্রেমিক সাকিবুল ইসলাম ও ভাড়াটে খুনী এমরান। গত রোববার বগুড়ার আনন্দ নগর থানা এলাকা থেকে নিহতের স্ত্রী উম্মি ছালমাকে গ্রেপ্তারের পর এ হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটিত হয়েছে বলে দাবি করছে পিবিআই। এর আগে গত ২৪ ও ২৬ অক্টোবর সাকিবুল ইসলাম ও এমরানকে গ্রেপ্তারের পাশাপাশি হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ছুরিটি উদ্ধার করা হয়েছে। ওই দু’জনই আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে সাকিব ও এমরান হত্যাকান্ডের বিস্তারিত তুলে ধরেন।
মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা এসআই কামাল আব্বাস গতকাল আজাদীকে বলেন, মূলত পরকীয়ার কথা জেনে যাওয়ায় প্রেমিকের সাথে মিলে পরিকল্পনা করে ভাড়াটে খুনী দিয়ে স্বামী রফিকুলকে হত্যা করে উম্মি ছালমা। তিনি বলেন, নিহত রফিকুলের সাথে পরিচয়ের সুবাদে বিভিন্ন সময় তার বাসায় যাওয়া-আসা করত সাকিবুল। এ সময় রফিকুলের স্ত্রী উম্মি সালমার সাথে পরকীয়ার সম্পর্ক গড়ে উঠে সাকিবের। এটা পরবর্তীতে জেনে যায় রফিকুল। ওই ঘটনা নিয়ে স্ত্রীকে বকাঝকা করার পাশাপাশি মারধরও করে স্বামী। পরে প্রমিক সাকিবুলকে নিয়ে স্বামী রফিকুলকে খুনের পরিকল্পনা করে স্ত্রী। এজন্য ত্রিশ হাজার টাকা দিয়ে এমরান নামে এক খুনীকে ভাড়া করা হয়।
পরিকল্পনা অনুযায়ী হত্যাকান্ডের আগে সাকিব ফোন করে রফিকুলকে সীতাকুণ্ড-হাটহাজারী সড়কের রেলওয়ে ওভারব্রিজের কাছে ডেকে আনে। সেখানে সালমা নিজেও ছিলেন, তবে আড়ালে। মাত্র ৬০ গজ দূরে থেকে স্বামী হত্যার পুরো ঘটনাটি প্রত্যক্ষ করেন তিনি । খুনের পর এমরানের হাতে উম্মি সালমা ত্রিশ হাজার টাকা তুলে দেন। পরে তারা যার যার মতো চলে আসে। স্থানীয়দের কাছে খবর পেয়ে পুুলিশ লাশ উদ্ধার করে। পরে উম্মি সালমা লাশটি তার স্বামী রফিকুলের বলে শনাক্ত করেন। এর পরদিন সীতাকুণ্ড থানায় বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে একটি হত্যা মামলাও করেন সালমা। ওই সময় সালমা পুলিশকে জানিয়েছিল তার স্বামী ৩ ডিসেম্বর রাতে ঘর থেকে বেরিয়ে আর বাসায় ফিরেনি।
একটি মোবাইল নাম্বারে রহস্য উদঘাটন ঃ
সীতাকুণ্ড থানা পুলিশ দীর্ঘ আট মাসেও যখন মামলাটির কোনো রহস্য উদঘাটন করতে পারছিলেন না তখন আশীর্বাদ হয়ে উঠে একটি মোবাইল নাম্বার। তদন্ত কর্মকর্তা কামাল আব্বাস বলেন, তদন্ত হাতে পাওয়ার পর নিহত ব্যক্তির ব্যবহৃত মুঠোফোন যাচাই করা শুরু হয়। খুনের আগে কোন কোন নাম্বার থেকে ফোন এসেছিল সেটা দেখতে গিয়ে একটি সন্দেহজনক মোবাইল নাম্বার উঠে আসে। মোবাইল নাম্বারটি কখনো ফেনী, কখনো ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় লোকেশন দেখায়। রফিকুল মারা যাওয়ার ১০/১৫ মিনিট আগে ওই নাম্বার থেকে তার মোবাইলে ফোন আসে। পরে মোবাইল নাম্বারের সূত্র ধরে এর ব্যবহারকারী সাকিবুলকে শনাক্ত করা হয়। সবকিছু নিশ্চিত হয়ে সাকিবুলকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সব খোলাসা হয়ে যায়।