স্বাধীন ফিলিস্তিনের জন্য ঐক্যবদ্ধ থাকুন : প্রধানমন্ত্রী

| মঙ্গলবার , ৭ নভেম্বর, ২০২৩ at ৫:৪৭ পূর্বাহ্ণ

স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের প্রশ্নে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে ইসরায়েলি হামলায় বিপর্যস্ত গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি এবং অঞ্চলটিতে অবৈধ দখলদারিত্ব বন্ধের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেছেন, আমাদের অবশ্যই একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের জন্য ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আমি আমাদের ফিলিস্তিনি ভাইবোনদের পক্ষে আমার ভূমিকা অব্যাহত রাখব। তিনি বলেন, গাজায় মানবিক সহায়তা নিশ্চিত ও অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির জন্য আমি সকল পক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। আমি এই ভয়াবহ যুদ্ধ, নির্বিচার হত্যাযজ্ঞ ও অবৈধ দখলদারিত্ব বন্ধে ভূমিকা রাখার জন্য বিশ্ব নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। সৌদি আরব সফররত প্রধানমন্ত্রী গতকাল সোমবার জেদ্দার একটি হোটেলে ইসলামে নারী বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বক্তৃতাকালে এ তাগিদ দেন। ইসলামী সহযোগিতা সংস্থাওআইসি এবং সৌদি আরব সরকার এই সম্মেলনের আয়োজন করেছে। তিনি ইসলামে নারীর মর্যাদা ও ক্ষমতায়ন শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন। খবর বাসসের।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের অবশ্যই একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের জন্য ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আমি আমাদের ফিলিস্তিনি ভাইবোনদের পক্ষে আমার ভূমিকা অব্যাহত রাখব। প্রধানমন্ত্রী বলেন, শান্তির জন্য তাদের মুসলিম নারীদের আওয়াজ শুনতে হবে। তিনি বলেন, আমরা গাজায় নিরীহ নারী ও শিশুদের ওপর ইসরায়েলি নৃশংসতার নিন্দা করছি। গাজার এ নৃশংসতা, ১৯৭১ সালে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় অমানবিক নির্যাতনের শিকার দুই লাখ নারীর কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, এ নৃশংস ঘটনাগুলো আমাকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট আমার বাবামা এবং নারী ও শিশুসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। তিনি বলেন, এটি মিয়ানমারের হাজার হাজার নির্যাতিত রোহিঙ্গা নারী ও শিশুর নির্যাতনের দৃশ্যকেই ফুটিয়ে তোলেযারা নৃশংসতার শিকার হলে ২০১৭ সালের আগস্টে আমাদের সীমান্তে আশ্রয় চেয়েছিল।

প্রধানমন্ত্রী মুসলিম নারীদের জন্য এক গুচ্ছ পরামর্শ দিয়েছেন। পরামর্শগুলো হল :

প্রথমত, ফিলিস্তিনে অবিলম্বে সংঘাতের অবসান এবং সেখানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধেরবিশেষ করে নারী ও শিশুদের উপর অপরাধের বিচার।

দ্বিতীয়ত, সমস্ত অপরাধ, সহিংসতা, বৈষম্য ও নারীদের বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান ইসলামোফোবিয়াকে ‘না’ বলুন। তৃতীয়ত, এসডিজি৫ পূরণের লক্ষ্যে লিঙ্গ সমতা অর্জন ও নারীদের ক্ষমতায়নের দিকে যথাযথ মনোযোগ দিন। চতুর্থত, মুসলিম নারীরা যেন ইচ্ছেমতো স্বাধীনভাবে জনসমক্ষে নিজেদের উপস্থাপন করতে পারেনতা নিশ্চিত করুন। পঞ্চমত, নারী ক্ষমতায়ন ও মূল স্রোতে নারীদের ভূমিকার উজ্জ্বল উদাহরণ বাংলাদেশ, বন্ধুপ্রতিম মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর সাথে এ সংক্রান্ত অভিজ্ঞতা বিনিময়ে প্রস্তুত।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওআইসি এমন একটি প্ল্যাটফর্ম, যেখানে এই বহুল প্রতীক্ষিত ইস্যুগুলোতে সংলাপ প্রত্যাসিত।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ নারীর ক্ষমতায়নে এর সম্ভাবনা উপলব্ধি করে খুব তাড়াতাড়ি ওআইসি’র নারী উন্নয়ন সংস্থায় (ডব্লিউডিও) যোগ দেয়। তিনি বলেন, ‘ডব্লিউডিও এর যাত্রা শুরু করেছে এবং আমি আশা করি, ইসলামকে আরও ভালভাবে বোঝার মাধ্যমে আজকের চাহিদাগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য এ ম্যান্ডেটকে প্রসারিত করা যেতে পারে। আর তবেই আমরা একটি বৈষম্যহীন, শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ বিশ্বের স্বপ্ন দেখতে পারি। আমি এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনের সাফল্য কামনা করছি।’

ইসলামকে শান্তি, সমপ্রীতি ও মানবতার ধর্ম আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) আহ্বানে সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণকারী ছিলেন একজন নারীবিবি খাদিজা। পবিত্র কোরআনের সূরা আননিসা’র আয়াতের উদ্ধৃতি দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আর আল্লাহকে ভয় কর, যার নামে তোমরা পরস্পরের এবং রক্ত সম্পর্কের অধিকার চাও। নিঃসন্দেহে আল্লাহ সর্বদাই তোমাদের উপর পর্যবেক্ষক।’ তিনি বলেন, বাংলাদেশে নারীর অধিকার ও লিঙ্গ সমতা রক্ষায় তাদের গর্বিত ঐতিহ্য রয়েছে। বাংলাদেশের রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের মতো পথপ্রদর্শক আছেন, যিনি ১৯০৫ সালে প্রকাশিত তার ‘সুলতানার স্বপ্ন’ বইতে নারী নেতৃত্বাধীন বিশ্বের কল্পনা করেছিলেন। ইংরেজিতে বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, ‘বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি, চির কল্যাণকর, অর্ধেক তা করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।’

শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশনায় বাংলাদেশের সংবিধানে নারীর সমমর্যাদা নিশ্চিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু ১৯৭৩ সালে প্রথম সংসদে নারীদের জন্য ১৫টি সংরক্ষিত আসনের বিধান করেছিলেন।

তিনি বলেন, যতবার আমি দায়িত্বে এসেছি, সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীদের উন্নীত করার জন্য সমস্ত বাধা দূর করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। প্রশাসন, বিচার বিভাগ, বিশ্ববিদ্যালয়, সশস্ত্র বাহিনী, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাণিজ্য সংস্থায় আমাদের নারীদের শীর্ষ পদে অধিষ্ঠিত হতে দেখে আমি গর্বিত বোধ করি। প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে তাদের মেয়েরা পাবলিক পরীক্ষা, প্রতিযোগিতামূলক নিয়োগ ও জাতীয় পর্যায়ের খেলায় অংশ নিচ্ছে। তিনি বলেন, ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির হোস্ট হিসাবে আমি ওআইসি সদস্য দেশগুলোর তরুণ মহিলাদের এই চমৎকার প্রতিষ্ঠানে পড়ার জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সরকার বর্তমানে নারীদের জন্য সুবিধাসহ সারা দেশে ৫৬৪টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সেন্টার নির্মাণ করছে। বাংলাদেশের সামপ্রতিক আর্থসামাজিক অগ্রগতিও আমাদের নারীদের অর্থপূর্ণ অংশগ্রহণ প্রমাণ।

ওমরাহ পালন করলেন প্রধানমন্ত্রী : তিন দিনের সরকারি সফরে সৌদি আরব অবস্থানরত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল সোমবার সকালে মক্কায় পবিত্র মসজিদ মসজিদুল হারামে ওমরাহ পালন করেছেন। প্রধানমন্ত্রী প্রথমে তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানাকে সাথে নিয়ে কা’বা শরীফের চারদিক ‘তাওয়াফ’ এবং ‘সাফামারওয়া’ সায়ী করেন। শেখ হাসিনা পবিত্র মসজিদে নামাজ আদায় করেন। এসময় তিনি বাংলাদেশ ও এর জনগণের পাশাপাশি সমগ্র মুসলিম উম্মাহর অব্যাহত শান্তি, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি কামনা করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকিডনি রোগী কল্যাণ সংস্থার ত্রিবার্ষিক সভা ও নির্বাচন
পরবর্তী নিবন্ধ৭৮৬