স্বাধীনতার প্রেক্ষাপট আমরা ভুলে যাচ্ছি : খসরু

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ২৮ মার্চ, ২০২৩ at ৫:৫০ পূর্বাহ্ণ

ক্ষমতাসীন দলের প্রতি ইঙ্গিত করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আজকে দেশের স্বাধীনতা এক ব্যক্তি, এক পরিবার, গোষ্ঠী ও একটি দলের হাতে। দেশের স্বাধীনতাকে একটি পরিবার নিজেদের মূলধন করে ফেলেছে। এ সময় তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধ ইনক্লুসিভ বিষয়। এটি কোনো একটি নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর হতে পারে না। এটি সমস্ত জাতির গর্ব। এই মূলধন সমস্ত জাতির মূলধন। এ গর্ব সমস্ত জাতির গর্ব। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে এসব বিষয় দেখা হবে। যারা প্রাণ দিয়েছেন প্রত্যেকের নাম বাংলাদেশের মানুষের কাছে তুলে ধরা হবে। গত রোববার নগরের একটি কমিউনিটি সেন্টারে স্বাধীনতা দিবস উদযাপন উপলক্ষে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ চট্টগ্রামের উদ্যোগে আয়োজিত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা ও ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক জাহিদুল করিম কচির সভাপতিত্বে এবং ডা. শামীম আল মামুন ও ডা. ঈসা চৌধুরীর সঞ্চালনায় প্রধান বক্তা ছিলেন সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক প্রফেসর ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন। সংবর্ধিত অতিথি ছিলেন বিএনপির উপদেষ্টা এস এম ফজলুল হক। বিশেষ অতিথি ছিলেন নগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সচিব কাদের গণি চৌধুরী, নগর বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সুফিয়ান। বক্তব্য রাখেন পরিষদের সদস্য সচিব ডা. খুরশিদ জামিল চৌধুরী।

আমীর খসরু বলেন, কোনো জায়গায় কোনো নেতৃত্বে এমনকি স্বাধীনতা যুদ্ধে একজন জাতির পিতা বা ফাউন্ডার ফাদার অথবা কোনো একজনের ব্যক্তিত্বে স্বাধীনতা আসেনি। এটা যদি করা হয়ে থাকে অর্থাৎ একজনকে সামনে রেখে সমস্ত স্বাধীনতার যুদ্ধ তাহলে এটা কিন্তু মনোপলি হয়। যখন স্বাধীনতা মনোপলি হবে তখন এটা ক্ষতিকর জিনিস। বাজার যেরকম একচেটিয়া হলে ক্ষতিকর হয়, খদ্দেররা ক্ষতিগ্রস্থ হয়, মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপারেও মনোপলি করতে গিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস নিয়ে একটি বিভ্রান্তির সৃষ্টি করা হয়েছে।

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে দেশের প্রথম মুক্তিযোদ্ধা দাবি করে আমীর খসরু বলেন, আমি যা বলেছি এসব তাজ উদ্দীনের মেয়ের বইতে লেখা আছে। যে ফাদার অফ দ্যা নেশন ঠিক আছে, আমেরিকায় তো ফাদার অফ নেশন আছে, ফাউন্ডিং ফাদারও আছে। যে লোকগুলোর কথা আমি বলেছি এর বাইরেও অনেকেই আছেন। যাদের নাম ফাউন্ডিং ফাদার হিসেবে আমাদেরকে স্বীকৃতি দিতে হবে। তারা সবাই ফাউন্ডিং ফাদার্স। কারো ভূমিকা কম নয়। একেকজনের ভূমিকা একেক দিকে। জিয়াউর রহমানের ভূমিকা হচ্ছে প্রথম স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি দেশের প্রথম মুক্তিযোদ্ধা। উনি কি ফাউন্ডিং ফাদার হতে পারেন না? আমীর খসরু বলেন, জেনারেল ওসমানি সাহেব মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছেন। উনি কি ফাউন্ডিং ফাদার হতে পারেন না? তাজ উদ্দিন সাহেব স্বাধীনতাকালীন মন্ত্রীসভার নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি কি ফাউন্ডিং ফাদার হতে পারেন না।

এসময় স্বাধীনতার প্রেক্ষাপট দেশের মানুষ ভুলে যাচ্ছে উল্লেখ করে খসরু বলেন, এ প্রেক্ষাপটের মধ্যে মৌলানা ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেরে বাংলা একে ফজলুল হক, কর্নেল ওসমানি, জিয়াউর রহমান আছেন। আরো অনেকের অবদান আছে। বাংলাদেশের রাজনীতি যে পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে স্বাধীনতা দিবসের গর্বিত দিনটিকে, গর্বিত কাজটিকে গর্হিত করা হচ্ছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রেক্ষাপটটা আমরা ভুলে যাচ্ছি।

প্রফেসর ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, আজকে আমরা লড়াই করছি গণতন্ত্র ও সার্বভৌমত্বের রক্ষার জন্য। অর্থনৈতিক যে বৈষম্য যেটা ৭১ এ ছিল সেটা এখন আরো বেশী হয়েছে। মানবাধিকার ও মানুষের মুক্তির যে লড়াই সেটা অব্যাহত আছে। কাজেই আমাদের আজ শপথ নিতে হবে গণতন্ত্র রক্ষার লড়াইয়ে সকল শ্রেণী পেশার মানুষকে এক হয়ে শেখ হাসিনার পতন ঘটাতে হবে।

এস এম ফজলুল হক বলেন, স্বাধীনতা কোনো পণ্য নয়। স্বাধীনতার ইতিহাস নিয়ে অনেক কথা থাকতে পারে। কিন্তু যে গণতন্ত্রের জন্য স্বাধীনতা, সে গণতন্ত্র ছাড়া দেশের মানুষ ভাবতে পারেনা।

ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং জিয়াউর রহমানের নাম সমার্থক। মুক্তিকামী জনতা সেদিন স্বাধীনতার ঘোষণা আশা করেছিল রাজনৈতিক নেতাদের কাছ থেকে। কিন্তু তাদের ব্যর্থতার কারণে সেদিন জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। সরকার মুক্তিযোদ্ধার তালিকা করতে ব্যর্থ হয়েছে।

কাদের গণি চৌধুরী বলেন, এই চট্টগ্রাম থেকে শহীদ জিয়া স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। এই সত্যটিকে ইতিহাস থেকে মুছে দেয়ার জন্য নানাভাবে চেষ্টা করছে সরকার। আওয়ামী লীগ সব সময় মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে কাজ করেছে। জাহিদুল করিম কচি বলেন, আজ দেশে সুশাসন নেই। এ থেকে উদ্ধারের জন্য নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া বিকল্প নেই। ডা. খুরশিদ জামিল চৌধুরী বলেন, সরকার মানুষের সমস্ত মৌলিক অধিকার হরণ করেছে। তাই এই সরকারকে পতন ঘটিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

সংবর্ধিত মুক্তিযোদ্ধারা হচ্ছেনবীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ডা. মাহফুজুর রহমান, বীর মুক্তিযোদ্ধা এস এম ফজলুল হক, ডা. মো. গোফরানুল হক, একরামুল করিম, ডা. জাহিদ হোসেন শরীফ, এড. মফিজুল হক ভুঁইয়া, কমান্ডার শাহাবুদ্দিন ও মো. হারুনুর রশিদ।

সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পরিষদের সদস্য সচিব ডা. খুরশিদ জামিল চৌধুরী, বার কাউন্সিলের সদস্য অ্যাড. এ এস এম বদরুল আনোয়ার, চবি অধ্যাপক এস এম নছরুল কদির, চমেক ড্যাব সভাপতি অধ্যাপক ডা. জসিম উদ্দিন, আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাড. নাজিম উদ্দীন চৌধুরী, সাবেক সভাপতি অ্যাড এনামুল হক, জেলা ড্যাবের সভাপতি অধ্যাপক ডা. তমিজ উদ্দিন আহমেদ মানিক, মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. শাহনেওয়াজ, ইঞ্জি. সেলিম মো. জানে আলম, রোটারিয়ান জসিম উদ্দিন, ইঞ্জিনিয়ার মো. ওসমান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধলটারিতে প্রায় ৩ কোটি টাকা জিতলেন দুবাই প্রবাসী বাংলাদেশি
পরবর্তী নিবন্ধবাঁশখালী ও কুতুবদিয়ায় পুকুরে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু