স্বল্পসময়ের জন্য পূর্ণাঙ্গ কমিটি হচ্ছে মহানগর ছাত্রদলে

অবশেষে বিবাহিতরাও পাচ্ছেন সাংগঠনিক পরিচয়

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ১৭ নভেম্বর, ২০২০ at ৯:৪৫ পূর্বাহ্ণ

স্বল্পসময়ের জন্য পূর্ণাঙ্গ করা হচ্ছে ছাত্রদলের চট্টগ্রাম মহানগর কমিটি। আগামী সাতদিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করার কথা রয়েছে। বিবাহিত ও ২০০৫ সালের আগে এসএসসি পাস করা কর্মীদের সাংগঠনিক পরিচয় দেয়াই এর উদ্দেশ্য। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নেতারা বিষয়টি দৈনিক আজাদীকে নিশ্চিত করেছেন। তারা জানিয়েছেন, গতকাল সোমবার কেন্দ্র ও চট্টগ্রামের নেতারা রাজধানীর গুলশানস্থ বিএনপি চেয়ারপার্সন কার্যালয়ে বৈঠক করে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের ২১ জুলাই নগর ছাত্রদলের ১১ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, গত জুলাই মাসে নগর ছাত্রদলের কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। এজন্য ৩২৬ জনের জীবনবৃত্তান্ত সংগ্রহ করে কেন্দ্র। ওই সময় কেন্দ্রীয় নেতারা সিদ্ধান্ত নেন, ‘বিদ্যমান কমিটি বিলুপ্ত করে ৩১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হবে। কমিটিতে বিবাহিত ও ২০০০ সালের পূর্বে যারা এসএসসি পাস করে তাদের বাদ দেয়া হবে। এরপর এ আহ্বায়ক কমিটি তিন মাসের মধ্যে ২০০৩ সাল থেকে এসএসসি উত্তীর্ণ এবং অবিবাহিতদের দিয়ে সম্মেলনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করবে।’
তখন বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর আন্দোলন শুরু করেন ছাত্রদলের বিবাহিত নেতারা। কমিটিতে রাখার দাবিতে ১৫ জুলাই নগর বিএনপির সভাপতিসহ শীর্ষ নেতাদের প্রায় দেড় ঘণ্টা দলীয় কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে রাখেন তারা। পরবর্তীতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানসহ সিনিয়র নেতাদের স্মারকলিপিও দেন। গণস্বাক্ষরও সংগ্রহ করেন। কমিটিতে রাখার দাবি হিসেবে তাদের যুক্তি ছিল, বিগত বছরগুলোতে তারা দলের প্রতিটি কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন। এজন্য রাজনৈতিক মামলার আসামিও হতে হয়েছে। মাঝখানে দীর্ঘ সাত বছর কমিটি হয়নি বলে তারা কোনো পদ পাননি এবং এ কমিটি করতে না পারার ব্যর্থতাও তাদের নয়। কাজেই বিবাহিত বলে তাদের বাদ দেয়ার সুযোগ নেই।’
পরবর্তীতে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমানের দেয়া একটি সিদ্ধান্তে অনিশ্চিত হয়ে পড়ে কমিটি গঠনের বিষয়টি। ২০ আগস্ট বিবাহিত রাতে তারেক রহমান ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক টিমের সাথে র্ভাচুয়াল সভা করেন। এতে তিনি সিদ্ধান্ত দেন, ‘প্রথমে চট্টগ্রাম মহানগরের আওতাধীন কলেজ ও থানা কমিটিগুলো এবং এরপরই যেন মহানগর কমিটি গঠন করা হয়।’ কিন্তু এসব থানা ও কলেজ কমিটি গঠনের দীর্ঘর্সূত্রিতাই অনিশ্চয়তা তৈরি হয় নগর কমিটি গঠনে।
পরবর্তীতে গত মাসে ২০০৫ সালে যারা এসএসসি পাশ করেছে এবং অবিবাহিতদের নিয়ে কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করে কেন্দ্রীয় নেতারা। এবার হস্তক্ষেপ করেন কেন্দ্রীয় বিএনপির চট্টগ্রামের নেতারা। এর কারণ হিসেবে জানা গেছে, একজন সাবেক মন্ত্রী নগরে আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব করার জন্য যাদের সুপারিশ করেন তারা এসএসসি পাস করেন ২০০৩ সালে। কিন্তু উত্তর জেলা বিএনপির আরেক নেতা নিজের পছন্দের কর্মীকে আহ্বায়ক করার জন্য তদবির করেন এবং ওই কর্মী এসএসসি পাস করেছেন ২০০৫ সালে। কৌশলে নিজের কর্মীকে পদে আনার জন্য উত্তর জেলার ওই নেতা ২০০৩ সালের পরিবর্তে ২০০৫ সাল থেকে এসএসসি উত্তীর্ণ ও অবিবাহিতদের দিয়ে কমিটি করার জন্য ম্যানেজ করেন কেন্দ্রীয় নেতাদের। এরপ্রেক্ষিতে কমিটিও প্রায় চূড়ান্ত হয়ে যায়। ঘোষণার আগ মুহূর্তে সাবেক ওই মন্ত্রী এবং বিএনপির সিনিয়র নেতাদের হস্তক্ষেপে তা আটকে যায়। এদিকে বিবাহিতরাও তাদের কমিটিতে রাখার দাবি আরো জোরালো করেন।
সর্বশেষ কয়েকদিন আগে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশনা দেন, সব কর্মীকে যেন মূল্যায়ন করা হয়। এরপ্রেক্ষিতে ছাত্রদলের চট্টগ্রাম বিভাগীয় টিম নগর কমিটিকে ঢাকায় জরুরি তলব করে। গতকাল বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত তারা গুলশানস্থ বিএনপি চেয়ারপার্সন কার্যালয়ে বৈঠক করেন। এতে সিদ্ধান্ত হয়, স্বল্পসময়ের জন্য বিদ্যামান কমিটিকে পূর্ণাঙ্গ করা হবে। আকার হবে ১৭১ সদস্য। সর্বোচ্চ এক মাসের মধ্যে এ কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন আহ্বায়ক কমিটি করা হবে। ওই আহ্বায়ক কমিটিতে বিবাহিতদের স্থান দেয়া হবে না।
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহ-সভাপতি ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় টিমের প্রধান শফিউল মোসাব্বির শাফি দৈনিক আজাদীকে বলেন, বিদ্যমান কমিটিই পূর্ণাঙ্গ করা হবে। বিবাহিত-অবিবাহিত সকলকেই এখানে স্থান দেয়া হবে।
নগর ছাত্রদলের সভাপতি গাজী সিরাজ দৈনিক আজাদীকে বলেন, তৃণমূল কর্মীদের মূল্যায়নের জন্যই পূর্ণাঙ্গ করা হবে। নতুন করে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করতে গেলে বিবাহিত ও পরীক্ষা পাসের সনের জন্য অনেকে বাদ যাবেন। যদিও তারা মাঠে সক্রিয় ছিলেন। দীর্ঘদিন রাজনীতি করেও তাদের সাংগঠনিক পরিচয় থাকবে না, সেটা মানা যায় না। তাই তারা যেন পদ পান সে লক্ষ্যেই পূর্ণাঙ্গ করা হচ্ছে।
নগর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন বুলু দৈনিক আজাদীকে বলেন, শর্ট টাইমের জন্য কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হবে এবং সপ্তাহের মধ্যেই ঘোষণা করা হবে। এর মাধ্যমে ত্যাগীদের মূল্যায়ন এবং রাজনৈতিক স্বীকৃতি বা সাংগঠনিক পরিচয় দেয়া হবে।
দীর্ঘদিন ধরে বিবাহিতদের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে রাখার দাবিতে আন্দোলনরত আলিফ উদ্দিন রুবেল দৈনিক আজাদীকে বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন সবাইকে সাংগঠনিক পরিচয় দেয়ার যে উদ্যোগ নিয়েছেন সেজন্য আমরা কৃতজ্ঞ। এ সিদ্ধান্তকে আমরা সাধুবাদ জানাই।
উল্লেখ্য, সর্বশেষ ২০১৩ সালে ঘোষিত নগর ছাত্রদলের ১১ সদস্যের কমিটিতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং চারজন সহসভাপতি, চারজন যুগ্ম সম্পাদক এবং একজনকে সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়। কেন্দ্র থেকে এ কমিটিকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল পরবর্তী তিন মাসের মধ্যেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করার। কিন্তু গত সাত বছরেও পূর্ণাঙ্গ হয়নি এ কমিটি। দীর্ঘ এ সময়ে কমিটির একজন মারা গেছেন। বাকিদের মধ্যে নয়জনই যোগ দিয়েছেন বিএনপিসহ অন্য অঙ্গসংগঠনগুলোতে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসাকিবের ক্ষমা প্রার্থনা
পরবর্তী নিবন্ধমডার্নার টিকা ৯৪.৫% কার্যকর