স্বপ্নের মতো শুরু সাকিবদের

আফগানদের গুঁড়িয়ে বিশাল জয়

ক্রীড়া প্রতিবেদক | রবিবার , ৮ অক্টোবর, ২০২৩ at ৫:১৬ পূর্বাহ্ণ

যেন স্বপ্নের মতো করে বিশ্বকাপ শুরু করেছে টাইগাররা। ভারতে যাওয়ার আগে দেশে দল ঘোষণা নিয়ে যে একটা বিতর্ক দেখা গিয়েছিল সে সবকে সরিয়ে রেখে ক্রিকেটাররা মনোযোগী হয়েছেন মাঠের লড়াইয়ে।

গতকাল ধর্মশালায় বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই আফগানিস্তানকে গুঁড়িয়ে দিয়ে বিশাল জয় নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ। মেহেদি হাসান মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে বাংলাদেশ ৬ উইকেটে পরাজিত করে আফগানদের। ৩ উইকেট শিকারের পর ব্যাট হাতে ৫৭ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচ সেরা হন তিনি। এছাড়া দলের জয়ে গুরুত্বপুর্ণ অবদান রেখেছেন অপরাজিত ৫৯ রান করা নাজমুল হোসেন শান্ত। এছাড়া সাকিব আল হাসানের পর বাংলাদেশের দ্বিতীয় খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্বকাপের ম্যাচে ৩ উইকেট শিকার ও ৫০ রান করা খেলোয়াড় হলেন মিরাজ। ৯২ বল বাকী রেখেই টানা তিন বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে জয়ের স্বাদ পায় বাংলাদেশ। ২০১৫ ও ২০১৯ সালের বিশ্বকাপেও নিজেদের প্রথম ম্যাচে জয় পেয়েছিলো বাংলাদেশ।

টস জিতে প্রথমে বোলিং নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব। তবে শুরুতেই তিন পেসার তাসকিন আহমেদশরিফুল ইসলাম ও মোস্তাফিজুর রহমানকে দারুণভাবে সামাল দেন দুই আফগান ওপেনার রহমানুল্লাহ গুরবাজ ও ইব্রাহিম জাদরান। ৮ ওভারে বিনা উইকেটে ৪৭ রান করেন তারা। তিন পেসারের পর চতুর্থ বোলার হিসেবে নিজেই আক্রমণে আসেন অধিনায়ক সাকিব। ইনিংসের নবম ও নিজের দ্বিতীয় ওভারের দ্বিতীয় বলে বাংলাদেশকে প্রথম ব্রেকথ্রু এনে দেন সাকিব। তার বলে সুইপ করতে গিয়ে তানজিদ হাসানকে ক্যাচ দেন ২২ রান করা ইব্রাহিম। দলীয় ৪৭ রানে প্রথম উইকেট পতনের পর জুটি গড়ার চেষ্টা করেন গুরবাজ ও রহমত শাহ। ১৫ ওভার শেষে ১ উইকেটে ৮৩ রান পেয়ে যায় আফগানিস্তান। ১৬তম ওভারে সাকিবের বলে সুইপ করতে গিয়ে কাভারে লিটন দাসকে ক্যাচ দেন ১৮ রান করা রহমত। এরপর অধিনায়ক হাসমতুল্লাহ শাহিদিকে নিয়ে আফগানিস্তানের রান ১০০ পার করেন গুরবাজ। ২৫তম ওভারে শাহিদিকে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে তৃতীয় সাফল্য এনে দেন মিরাজ। শাহিদি ১৮ রান করেন। পরের ওভারে ৬২ বলে ৪৭ রান করা ব্যাটার গুরবাজকে ফেরান মোস্তাফিজ। ১১২ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে আফগানিস্তান। ২৯তম ওভারে নাজিবুল্লাহ জাদরানকে দারুন এক ডেলিভারিতে বোল্ড করেন সাকিব। পরের ওভারে মোহাম্মদ নবির উইকেট উপড়ে ফেলেন তাসকিন। ১২৬ রানে ষষ্ঠ উইকেটের পতন হয় আফগানিস্তানের। এ অবস্থায় সপ্তম উইকেটে ২৬ বলে ২৪ রান যোগ করে আফগানিস্তানের রান দেড়শতে নেন আজমতুল্লাহ ওমারজাই ও রশিদ খান। ৩৫তম ওভারে রশিদকে ব্যক্তিগত ৯ রানে বোল্ড করে দ্বিতীয় উইকেট শিকার করেন মিরাজ। রশিদ ফেরার পর আফগানিস্তান ইনিংসের শেষ ৩ উইকেট দ্রুতই তুলে নেন শরিফুল ও মিরাজ। ৩৭.২ ওভারে ১৫৬ রানে গুটিয়ে যায় আফগানিস্তান। ওমারজাইকে ২২ রানে এবং নাভিন উল হককে খালি হাতে বিদায় করেন শরিফুল। মুজিব উর রহমানকে রানের খাতা খুলতে দেননি মিরাজ। ধুকতে থাকা আফগানরা ৪৪ রানে শেষ ৬ উইকেট হারায়। সাকিব ৮ ওভারে ৩০ রানে ও মিরাজ ৯ ওভারে ২৫ রানে ৩টি করে উইকেট নেন। শরিফুল ৩৪ রানে ২টি, তাসকিন ৩২ রানে ও মোস্তাফিজ ২৮ রানে ১টি করে উইকেট শিকার করেন।

১৫৭ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ৪ ওভারে বিনা উইকেটে ১৯ রান তোলেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার তানজিদ হাসান ও লিটন দাস। পঞ্চম ওভারে দলীয় ১৯ রানে রান আউট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরেন ১৩ বলে ৫ রান করা তানজিদ। এরপর সপ্তম ওভারে প্যাভিলিয়নে তানজিদের সঙ্গী হন লিটন। ২টি চারে ১৮ বলে ১৩ রান করেন তিনি। ২৭ রানে ২ ওপেনারকে হারিয়ে কিছুটা চাপে পড়ে বাংলাদেশ। এ অবস্থায় জুটি বাঁধেন মিরাজ ও শান্ত। ফারুকির করা নবম ওভারের চতুর্থ বলে পয়েন্টে নজিবুল্লাহকে ক্যাচ দিয়ে ব্যক্তিগত ১৭ রানে জীবন পান তিন নম্বরে খেলতে নামা মিরাজ। ১২তম ওভার করা পেসার নাভিন উল হকের দ্বিতীয় ডেলিভারিতে আবারও জীবন পান মিরাজ। ডিপ থার্ডে মিরাজের ক্যাচ তালুবন্দি করতে পারেননি মুজিব। এবার ২৩ রানে জীবন পান মিরাজ। দু’বার জীবন পেয়ে শান্তর সাথে ২৩তম ওভারে বাংলাদেশের রান ১০০ তে পৌঁছে দেন মিরাজ। ঐ ওভারেই ওয়ানডেতে তৃতীয় হাফ সেঞ্চুরি করেন ৫৮ বল খেলা মিরাজ। এরপর ইনিংস তেমন বড় করতে পারেননি মিরাজ। নাভিনের বলে মিড অফে রহমতকে ক্যাচ দিলে ৫টি চারে ৭৩ বলে ৫৭ রান করা ডান হাতি এ ব্যাটারের ইনিংসের সমাপ্তি ঘটে। তৃতীয় উইকেটে শান্তমিরাজ ১২৯ বলে ৯৭ রানের জুটি গড়েন। মিরাজ যখন ফিরেন তখন জয় থেকে ৩৩ রান দূরে ছিলো বাংলাদেশ। সাকিবকে নিয়ে দলের জয় নিশ্চিত করার পথেই ছিলেন শান্ত। কিন্তু ৩৪তম ওভারে দলীয় ১৪৬ রানে ওমরজাইর শিকার হয়ে জয় থেকে ১৪ রান দূরে থাকতে প্যাভিলিয়নের ফেরেন সাকিব। শান্তসাকিব জুটি ২২ রান যোগ করেন। সাকিব ফেরার পর মুশফিকুর রহিমকে নিয়ে প্রয়োজনীয় ১১ রান তুলে ৩৫তম ওভারেই বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত করেন শান্ত। শান্ত শেষ পর্যন্ত ৩টি চার ও ১টি ছক্কায় ৮৩ বলে ৫৯ রানে অপরাজিত থাকেন। ২ রানে অপরাজিত থাকেন মুশফিক। আফগানিস্তানের ফারুকিনাভিন ও ওমরজাই ১টি করে উইকেট নেন। ধর্মশালায় আগামী ১০ অক্টোবর নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ।

আজকের খেলা : ভারতঅস্ট্রেলিয়া (চেন্নাই, বেলা.৩০টা)

পূর্ববর্তী নিবন্ধহিলভিউতে পিকআপের ধাক্কায় প্রাণ গেল ১২ বছরের শিশুর
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে আরো দুজনের মৃত্যু