আমি আমার এক সিনিয়র স্যারের কাছে শুনি, ইউনিভার্সিটির ফার্স্ট ক্লাস সেকেন্ড হয়ে উনি শিক্ষকতায় আর লাস্টের দিকের অনেকেই সেরা প্রফেশনে আছেন। ভীষণ মন খারাপ করা একটা অপ্রাপ্তি দেখেছি তার চোখে মুখে! অথচ আপনারাই বলেন, শিক্ষকতা নোবেল প্রফেশন, শিক্ষক জাতির কারিগর। কিন্তু আপনার ছেলেকে আপনিও চাইবেন ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার বানাতে, কোনোভাবেই শিক্ষক না। একটা ক্লাসে যখন আমি জানতে চাই, কে কী হবে বড় হয়ে, প্রায় সবাই চায় হয়তো ডাক্তার নতুবা ইঞ্জিনিয়ার। আচ্ছা এইবার বলেন তো কেন আপনি কিংবা আপনার বাচ্চারা শিক্ষকতাকে প্রফেশন হিসেবে চান না?
উত্তরটা সহজ, আপনি আমি সবাই জানি। বাংলা সিনেমায় ছোটোবেলা থেকে দেখতাম ভিলেনের হাতে খুন হওয়া প্রায় ক্যারেক্টারগুলো হতো শিক্ষক চরিত্র। আনোয়ার হোসেন সাহেবের শিক্ষক চরিত্রের ডায়ালগ থাকতো, ‘আমেনার মা’ বলেই বুক চেপে হার্ট ফেল করা একজন মাস্টার (শিক্ষক কিংবা স্যার না!)
আমরা যে সমাজে আছি এই সমাজটা ভীষণ রকম শিক্ষা অবান্ধব, এই সমাজ জ্ঞানের কদরের চাইতে আর্থিক সক্ষমতা আর ক্ষমতার ব্যবহারকে সমীহ করে। এই সমাজে পড়াশোনা করানো হয় আর্থিক কারণে, সমাজে শেখানো হয় বিসিএস দিয়ে শিক্ষকতায় না গিয়ে অন্য ক্যাডারে যাওয়া ভীষণ ভালো। কারণ একটাই ‘পাওয়ার’! এ এমন এক সমাজ যেইখানে একজন শিক্ষক ও তার প্রফেশনকে গ্লানি মনে করেন! সরকারি শিক্ষকরা যা বেতন আর সুযোগ পান, বেসরকারি পর্যায়ে অবস্থা ভীষণ খারাপ। আমি স্থানীয় কেজি স্কুলে শিক্ষকের বেতন দেড় দুই হাজার আর দারোয়ানের (সকল পেশাকে সম্মান রেখেই বলছি) বেতন পাঁচ ছয় হাজার টাকা হতে দেখেছি! আমার গ্রামের স্কুলের (এমপিও ভুক্ত) স্যারদের কখনো আমি দামি পোশাকে দেখিনি। নির্দিষ্ট একটা দুইটা সার্টের বেশি কখনো গাঁয়ে উঠতে দেখিনি। সকাল ১০টা থেকে বিকেল চারটা পাঁচটা পর্যন্ত ক্লাস নিয়ে তাদেরকে আবার দেখেছি হোম টিউশনে যেতে! আমি শিক্ষক। আমি জেনে বুঝে, আমার প্যাশন শিক্ষকতাকে প্রফেশন হিসেবে নিয়েছি। আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি টিচিং উইল বি এ্য ট্রেন্ড। একটা সময় আসবে সেরা স্টুডেন্টরা ভালোবেসেই শিক্ষকতায় আসবে। স্বপ্নের ফেরিওয়ালা মাস্টারমশাই এইটুক আশা তো করতেই পারি।