সত্যেন্দ্রনাথ বসু ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম বীর বিপ্লবী। অসীম সাহসী এই যোদ্ধা ভারতবর্ষে ব্রিটিশ উপনিবেশবিরোধী আন্দোলন বেগবান করার লক্ষ্যে গুপ্ত বিপ্লবী সংগঠন তৈরি, গণজাগরণের জন্য বিপ্লবী ইশতেহার বিলি, সশস্ত্র আক্রমণ সহ নানাভাবে সক্রিয় ছিলেন। মাত্র ছাব্বিশ বছর বয়সে তরুণ সত্যেন্দ্রনাথ বসুর ফাঁসি কার্যকর করে ব্রিটিশ সরকার। আজ তাঁর ১১০তম মৃত্যুবার্ষিকী।
সত্যেন্দ্রনাথ বসুর জন্ম ১৮৮২ সালের ৩০ জুলাই মেদিনীপুরে। বাবা অভয়াচরণ বসু এবং খ্যাতিমান পণ্ডিত রাজনারায়ণ বসুর ভ্রাতুষ্পুত্র সত্যেন্দ্রনাথ ১৮৯৯ সালে মেদিনীপুর কলেজ থেকে এফ.এ পাস করেন। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে তাঁর সক্রিয় অংশগ্রহণ ১৯০২ সালে মেদিনীপুরে একটি গুপ্ত বিপ্লবী সংগঠনে যোগদানের মাধ্যমে। পরবর্তী সময়ে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের বিরোধিতা করে সত্যেন্দ্রনাথ মেদিনীপুরে গড়ে তোলেন ‘ছাত্রভাণ্ডার’ নামের একটি সংগঠন। তাঁত বস্ত্র তৈরি, ব্যায়াম চর্চা ইত্যাদির আড়ালে মূলত ছাত্রভাণ্ডার ছিল বিপ্লবীদের ঘাঁটি। সত্যেন্দ্রনাথ বসুর সংস্পর্শেই বীর ক্ষুদিরাম বিপ্লবী দলের সাথে সম্পৃক্ত হন। সক্রিয় স্বদেশী আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিভিন্ন সময়ে বিপ্লবে নেতৃত্ব দেন সত্যেন্দ্রনাথ। ১৯০৮ সালে কিংসফোর্ড হত্যা প্রচেষ্টায় ক্ষুদিরাম বসু গ্রেফতার হলে বাড়িতে অবৈধ অস্ত্র রাখার অপরাধে গ্রেফতার করা হয় সত্যেন্দ্রনাথকেও। পরবর্তীসময়ে আলীপুর বোমা হামলা মামলায় আসামি দেখিয়ে তাঁকে কলকাতার আলীপুর জেলে নিয়ে যাওয়া হয়। এই মামলায় সহযোদ্ধা নরেন গোঁসাই বিশ্বাসঘাতকতার আশ্রয় নিয়ে রাজসাক্ষী হলে জেলে থেকেই নরেনকে হত্যার পরিকল্পনা করেন সত্যেন্দ্রনাথ ও বন্দি বিপ্লবী হেমচন্দ্র। অপর বিপ্লবী বন্দি কানাইলালও তাঁদের সাথে যোগ দেন। সত্যেন্দ্রনাথ গোপনে অস্ত্র সংগ্রহ করে নরেন গোঁসাইকে জেলে ডেকে আনেন এই ছলে যে, তিনিও রাজসাক্ষী হতে চান এবং এ ব্যাপারে নরেনের সাথে তাঁর পরামর্শ প্রয়োজন। ১৯০৮ সালের ৩১ আগস্ট নরেন জেলখানায় এলে সত্যেন্দ্রনাথ তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়েন। আহত অবস্থায় পালিয়ে যাবার সময় কানাইলালের গুলিতে মৃত্যু হয় নরেনের। বিচারে দুজনেরই ফাঁসি হয়।
১৯০৮ সালের ২১ নভেম্বর বিপ্লবী বীর সত্যেন্দ্রনাথ বসুর ফাঁসি কার্যকর করে ব্রিটিশ সরকার। সেদিন জেলগেটের বাইরে বিপুল জনসমাবেশ দেখে ভীত হয়ে ব্রিটিশ সরকারের নির্দেশে জেল কর্তৃপক্ষ জেলের ভেতরেই শবদাহ করেন। তাঁর দেহভস্মও জেলের বাইরে নেবার অনুমতি মেলেনি।