স্ক্র্যাপ করে বিক্রি হচ্ছে এলপিজির সিলিন্ডার

লিটন কুমার চৌধুরী, সীতাকুণ্ড | শনিবার , ২৭ এপ্রিল, ২০২৪ at ৮:৩৯ পূর্বাহ্ণ

সারা দেশে বেড়ে গেছে রডের দাম। ফলে চাহিদা বেড়েছে রড তৈরির অন্যতম উপাদান স্ক্র্যাপেরও। আর এ সুযোগে অবৈধভাবে ভর্তুকির সিলিন্ডার কেটে স্ক্র্যাপ বানিয়ে বিভিন্ন রোলিং মিলে বিক্রি করছেন সীতাকুণ্ডের বেশ কিছু স্ক্র্যাপ ব্যবসায়ী। তবে সিন্ডিকেটের সদস্যরা জানান, পুলিশ প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই এ ব্যবসা চলছে।

জানা যায়, গত দুই বছর আগে ভাটিয়ারী ইউনিয়নের তুলাতলি এলাকায় কুসুম নামের এক ব্যবসায়ীর গোডাউনে অভিযান চালায় পুলিশ। এ সময় প্রায় ১০হাজার এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার, স্ক্র্যাপ সিলিন্ডার এবং খালি বোতল কেটে স্ক্র্যাপ বানানোর মালামাল পুলিশ উদ্ধার করে। ওই সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে কুসুম ও তার সহযোগীরা পালিয়ে যান। পুলিশের সেই অভিযানের পর কুসুম দীর্ঘদিন আড়ালে চলে গেলেও কিছুদিন পর আবার নতুন করে সেখানে অপর একটি সিন্ডিকেট শুরু করে এ অবৈধ ব্যবসা। অভিযোগ আছেএ ব্যবসার সাথে কয়েকজন ইউপি সদস্যও জড়িত হয়েছেন। সেখানে বিশাল আকারের গোডাউন করেছেন। সীতাকুণ্ডের বিভিন্ন এলাকায় আলাদা আলাদা ডিপু করে নতুন নতুন এলপিজির সিলিন্ডার কিনে তা কেটে স্ক্র্যাপ বানিয়ে নিজে এবং স্ক্র্যাপ ব্যবসায়ীর মাধ্যমে সরবরাহ করছেন বিভিন্ন রড তৈরির কারখানাগুলোয়। আর তাতে এলপিজি ভর্তুকির সিলিন্ডার বিনিয়োগকারীদের হাজার হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ হুমকিতে পড়ছে। শুধু কুসুম না গত এক বছর ধরে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অনেকেই চোরাইভাবে এলপিজি সিলিন্ডার স্ক্র্যাপ করে বিক্রি করছে। বিশেষ করে সীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাট, ভাটিয়ারী, বারআউলিয়া, মদনহাট, কদমরসুল এলাকায় বেশ কয়েকটি সিন্ডিকেট রয়েছে। বর্তমানে প্রতিকেজি স্ক্র্যাপ লোহার মূল্য ৬৫থেকে ৭০টাকার বেশি। একটি সিলিন্ডার কাটলে সাড়ে ৭শ টাকার লোহা ও ৮০১০০ টাকায় বাল্বটি বিক্রি হয়। এতে একটি সিলিন্ডার কাটলে ২৫০ টাকার মতো লাভ হয় সিন্ডিকেটের।

জানা যায়, এলপিজির ১২কেজির একটি সিলিন্ডার তৈরিতে বিনিয়োগকারীদের খরচ আড়াই হাজার টাকা। বাজার ধরার জন্য ভর্তুকি দিয়ে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় এসব সিলিন্ডার বিক্রি করা হয় ডিলারডিস্ট্রিবিউটরদের কাছে। সামপ্রতিক আন্তর্জাতিক বাজারে লোহার দাম বেড়ে যাওয়ায় দেশে বাড়তে থাকে ইস্পাতের দাম। এ সুযোগে ভর্তুকির সিলিন্ডার স্ক্র্যাপ করে রোলিং মিলে বিক্রি করছে চট্টগ্রামের বেশ কয়েকটি সিন্ডিকেট।

এলপিজি সেক্টরের বিনিয়োগকারীরা বলছেন, সিলিন্ডার স্ক্র্যাপ করার মাধ্যমে বাজারে সিলিন্ডারের সঙ্কট তৈরি করে এলপিজির দাম অস্থির করার চেষ্টা করছে অসাধু সিন্ডিকেট। আর তাতে সিলিন্ডারের সঙ্কট তৈরি হলে ভোক্তা খাতে এলপিজির দাম বাড়বে। বর্তমানে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) দেশের গৃহস্থালি, হোটেল, রেস্তোরাঁয় জ্বালানি।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ঢাকাচট্টগ্রাম মহাসড়কের ভাটিয়ারী, সলিমপুর, সোনাইছড়ি বেড়িবাঁধ সংলগ্ন একাধিক গোডাউনে শত শত সিলিন্ডারের স্তুপ। ওই ওয়ার্কশপে গ্যাসের মাধ্যমে সিলিন্ডারগুলো কেটে স্ক্র্যাপ করা হচ্ছে। প্রথমে সিলিন্ডারের বাল্বগুলো খুলে রাখা হয়। পরে গ্যাস দিয়ে কাটা হচ্ছে। তাদের গোডাউনে কাটা অবস্থায় কয়েকশ সিলিন্ডার মজুদ অবস্থায় দেখা গেছে। কাটা সিলিন্ডারগুলোর মধ্যে অনেক ব্র্যান্ডের সিলিন্ডার রয়েছে।

সেখানে কর্মরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শ্রমিক জানান, সিলিন্ডার কেজি ৪৮টাকা করে কিনছি। আমরা চট্টগ্রামের সাগরিকা থেকে বাল্ব ছাড়া কিনেছি। একটি খালি সিলিন্ডার ১২ কেজি থেকে সাড়ে ১২ কেজি হয়। ১২ কেজি হলে ৫৫০৬৬০ টাকা দাম পড়ে।

এ বিষয়ে জেএমআই এলপিজির চট্টগ্রাম বিভাগের ম্যানেজার মামুনুর রশিদ বলেন, একটি সিলিন্ডার তৈরি করতে কোম্পানিগুলোর ২ হাজার ২০০টাকা খরচ হয়। ভবিষ্যতে লাভ করার আশায় কোম্পানিগুলো ভর্তুকিতে সিলিন্ডারগুলো বাজারে ছাড়ছে। বর্তমানে কোম্পানি থেকে নতুন সিলিন্ডার বাজারে দেওয়া হচ্ছে না। এখন পুরনো সিলিন্ডারগুলো স্ক্র্যাপ করা হলে বাজারে সিলিন্ডারের সঙ্কট তৈরি হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএক পরীতেই বাঘের ঘর আলোকিত
পরবর্তী নিবন্ধতীব্র গরমে সৈকতে স্বস্তির স্নান