ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কে চলাচলকারী ছোট গাড়িগুলোর বড় মাথাব্যথা হয়ে উঠেছে বিভিন্ন ধরনের ধাতব পণ্য। প্রায় প্রতিদিনই রাস্তায় অসংখ্য গাড়ির চাকা পাংচার হওয়ার ঘটনা ঘটছে। প্রচলিত নিয়ম কানুন না মেনে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ঢাকা পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদিনই স্ক্র্যাপের শিকার হচ্ছে ছোট গাড়ি। একের পর এক দুর্ঘটনা ছোট গাড়িগুলোর জন্য বড় ধরনের হুমকির সৃষ্টি করছে।
সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রাম নারায়নগঞ্জসহ দেশের নানা অঞ্চলে গড়ে উঠা স্টিলমিলগুলো বিশ্বের নানা দেশ থেকে স্ক্র্যাপ আমদানি করে। স্ক্র্যাপ হিসেবে এক সময় শুধু শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডের জাহাজের লোহা ব্যবহৃত হলেও এখন এমন কোন ধাতব পণ্য নেই যা স্ক্র্যাপ হিসেবে আমদানি হচ্ছে না। স্ক্র্যাপের ভেতরে গাড়ি থেকে শুরু করে অচল বোমা পর্যন্ত সবই দেয়া হচ্ছে। বিভিন্ন ধাতবপণ্যকে স্ক্র্যাপে পরিণত করতে ভাংচুর করায় ধারালো হয়ে উঠে। টিনসহ নানা ধরণের ধারালো পণ্য স্ক্র্যাপের চালানে এসে খালাস হয়। চট্টগ্রাম বন্দরে খালাসের পর এসব স্ক্র্যাপ সড়কপথে নিয়ে যাওয়া হয় কারখানায়। যেখানে স্ক্র্যাপ গলিয়ে এবং পরিশোধন করে তৈরি করা হয় স্টিল। যা পরবর্তীতে রড এ্যাঙেলসহ নানা ধরণের স্টিল পণ্য উৎপাদনে ব্যবহৃত হচ্ছে।
প্রচলিত নিয়মানুযায়ী স্ক্র্যাপ পণ্য ট্রাকে পরিবহন করতে হলে ত্রিপল দিয়ে ঢেকে পরিবহন করার নিয়ম। এছাড়া কাভার্ডভ্যান বা কন্টেনারে বোঝাই করে স্ক্র্যাপ পরিবহন করার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু এসব নিয়মের কোন তোয়াক্কা না করে ট্রাকসহ বিভিন্ন ধরণের গাড়িতে উন্মুক্ত অবস্থায় স্ক্র্যাপ পরিবহন করা হচ্ছে। দ্রুত গতিতে গাড়ি চলার সময় ট্রাক বা ট্রলি থেকে বাতাসের তোড়ে অনেক সময় স্ক্র্যাপ উড়ে এসে রাস্তায় পড়ে। খানাখন্দকে ধাক্কা খেয়েও গাড়ির উপর থেকে ছিটকে স্ক্র্যাপ রাস্তার উপর পড়ে। এছাড়া বিভিন্ন সময় গাড়ি জ্যামে পড়লে কিছু টোকাই জাতীয় কিশোর গাড়ির উপর থেকে স্ক্র্যাপ চুরি করে। এই সময় কিশোরেরা যা নেয় তার থেকে ঢের বেশি স্ক্র্যাপ রাস্তায় ছিটকে পড়ে।
ধাতব এসব পণ্য রাস্তার উপর মরণফাঁদ তৈরি করে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করে সূত্র বলেছে, ধারালো লোহাসহ নানা ধরণের ধাতবপণ্য ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কে চলাচলকারী গাড়ির চাকা ফুটো করে দিচ্ছে। বড় গাড়ির বিশালাকৃতির চাকাগুলো রক্ষা পেলেও প্রাইভেট কার বা জিপ জাতীয় গাড়ির চাকা হরদম ফুটো হচ্ছে। যা আরোহীদের জীবন হুমকির মুখে ফেলছে। ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদিন অসংখ্য গাড়ির টায়ার পাংচার হওয়ার ঘটনা ঘটছে বলে স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে। পাংচার হওয়ার চাকার ভেতরে ধারালো বিভিন্ন ধাতবপণ্য আটকে থাকে। উন্মুক্ত অবস্থায় স্ক্র্যাপ পরিবহন ছোটগাড়ির চালক এবং মালিকদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি করছে। তারা বলেন, পুলিশের রহস্যজনক উদাসীনতায় দিনের পর দিন উন্মুক্ত স্ক্র্যাপ পরিবহন ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের জন্য ‘কাল’ হয়ে উঠছে।
বিষয়টি নিয়ে হাইওয়ে পুলিশের একাধিক কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা বলেন, বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অবশ্যই এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে। পুলিশের পক্ষ থেকে স্ক্র্যাপ পরিবহনের সময় ট্রাক এবং ডাম্প ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহনকে ত্রিপল দিয়ে ঢেকে নেয়ার জন্যও সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
এই ব্যাপারে সীতাকুণ্ড এলাকার বড় একটি স্টিল মিলের শীর্ষস্থানীয় একজন কর্মকর্তা বলেন, স্ক্র্যাপগুলো আমাদের কারখানায় আনা হলেও এর পরিবহনের সাথে কারখানার খুব বেশি সম্পর্ক নেই। এগুলো পরিবহন ঠিকাদারেরাই এনে থাকেন, নির্দিষ্ট অংকের বিল নেন। তারা ত্রিপল দিয়ে ঢেকে আনলে আমাদের যেমন কোন অসুবিধা নেই, তেমনি বাড়তি বিল দেয়ারও ব্যাপার নেই। সংশ্লিষ্ট গাড়ির চালক এবং সহকারী কষ্ট না করার জন্য উন্মুক্ত অবস্থায় স্ক্র্যাপ নিয়ে আসে। বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অবশ্যই এই ব্যাপারে সকলের সতর্ক থাকা উচিত।