৯৫ শতাংশ মৃত্যু ঝুঁকিপূর্ণভাবে রাস্তা ব্যবহারকারী তিন শ্রেণির লোকের

সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে গবেষণা

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ১৩ জুলাই, ২০২৩ at ৫:৫৬ পূর্বাহ্ণ

নগরের সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ক্ষেত্রে ৯৫ শতাংশ দায়ী তিনটি শ্রেণি, যাদের ঝুঁকিপূর্ণ রাস্তা ব্যবহারকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই তিন শ্রেণি হচ্ছে পথচারী, মোটরসাইকেল চালক এবং সাইকেল চালক। জন্স হপকিন্স ইন্টারন্যাশনাল ইনজুরি রিসার্চ ইউনিটের সহযোগী বৈজ্ঞানিক ডা. শিরিন ওয়াধানিয়ার গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।

গতকাল বুধবার টাইগারপাসস্থ চসিকের সম্মেলন কক্ষে রোড সাইড অবজারভেশনাল স্টাডি শীর্ষক এ গবেণার ফলাফল উপস্থাপন করা হয়। সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ বাংলাদেশের (সিআইপিআরবি) সহায়তায় চসিক এবং জন্স হপকিন্স ইন্টারন্যাশনাল ইনজুরি রিসার্চ ইউনিট যৌথভাবে অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে।

এ গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে নগরে ৯৫ জন নিহতের মধ্যে ৮২ শতাংশই ছিলেন পথচারী। আর ১১ শতাংশ মোটরসাইকেল চালক, ২ শতাংশ সাইকেল আরোহী এবং বাকি ৫ শতাংশ যানবাহন ব্যবহারকারী। ডা. শিরিন ওয়াধানিয়া জানান, গবেষণামতে শতকরা ৪০ ভাগ ক্ষেত্রে যানবাহনগুলো গতিসীমা অতিক্রম করে। আর গতি সীমা অতিক্রম করার প্রবণতা সর্বোচ্চ ৪৮ শতাংশ দেখা যায় বাসের ক্ষেত্রে। মোটরসাইকেল চালকদের মধ্যে যথাযথ নিয়মে হেলমেট ব্যবহারের হার মাত্র ৬৮ শতাংশ এবং আরোহীদের মধ্যে যথাযথ নিয়মে হেলমেট ব্যবহারের হার মাত্র ২০ শতাংশ।

অনুষ্ঠানে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করার অন্যতম শর্ত সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। আর সড়কসংঘর্ষ প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য দুর্ঘটনার সঠিক তথ্যউপাত্ত সংগ্রহ করতে হবে। সংশ্লিষ্ট অংশীজনরা এসব তথ্যউপাত্ত যথাযথভাবে কাজে লাগিয়ে সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে পারবে। তিনি সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চসিকের গৃহীত উদ্যোগসমূহ ও চলমান কার্যক্রমের কথা উল্লেখ করেন। বিআইজিআরএস এ অংশগ্রহণের মাধ্যমে চসিক সড়ক নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট নানাবিধ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে।

অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) ফয়সাল মাহমুদ বলেন, চট্টগ্রামের সড়ককে নিরাপদ ও সচল রাখতে সচেষ্ট রয়েছে। তবে, ট্রাফিক বিভাগের একার পক্ষে নিরাপদ সড়ক গড়া সম্ভব নয়, পুলিশের পাশাপাশি সকল অংশীজনকে নিয়ে সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। যানবাহন ব্যবহারকারীদের মধ্যে সিটবেল্ট ব্যবহারের হার মাত্র ১৫%। এছাড়া যাত্রী ও বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহৃত যানবাহন ব্যবহারকারীদের মধ্যে সিটবেল্ট ব্যবহারের প্রবণতা নেই বললেই চলে। ভারী যানবাহনের চালকদের ক্ষেত্রে সিটবেল্ট ব্যবহারের হার মাত্র ৩ শতাংশ। যানবাহনে যাতায়াতকারী শিশুদের মধ্যে কাউকেই চাইল্ডসিট তথা চাইল্ড রেস্ট্রিয়েন্ট ব্যবহার করতে দেখা যায়নি।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন চসিকের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মনিরুল হুদা, সিআইপিআরবির রোড সেফটি প্রজেক্টের ম্যানেজার কাজী বুরহান উদ্দিন। সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ, বাংলাদেশ এর পক্ষে ডা. সেলিম মাহমুদ চৌধুরী গবেষণার উদ্দেশ্যসমূহ তুলে ধরেন। এতে বিআরটিএ, ফায়ার ব্রিগেড, সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাগণ, যাত্রী কল্যাণ সমিতির প্রতিনিধি এবং বিআইজিআরএসের অংশীদার সংস্থার প্রতিনিধিরা এবং সুশীল সমাজের বিভিন্ন সংস্থাসমূহের প্রতিনিধিগণ অংশগ্রহণ করেন।

প্রসঙ্গত, ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রপিস ইনিশিয়েটিভ ফর গ্লোবাল রোড সেইফটির (বিআইজিআরএস) অংশ হিসেবে জন্স হপকিন্স ইন্টারন্যাশনাল ইনজুরি রিসার্চ ইউনিট তাদের স্থানীয় অংশীদার সিআইপিআরবি’র সাথে সড়ক নিরাপত্তার অবস্থা পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়নের অংশ হিসেবে চসিক এলাকায় পর্যায়ক্রমে রোডসাইড অবজারভেশনাল স্টাডি পরিচালনা করছে। মে ২০২২ সাল হতে চসিক আওতাভুক্ত নির্বাচিত এলাকা থেকে ইতোমধ্যে ২ রাউন্ড তথ্য সংগ্রহ সম্পন্ন হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজমে থাকা পানিতে মশার লার্ভা, ৯২ হাজার টাকা জরিমানা
পরবর্তী নিবন্ধস্ক্র্যাপে ফুটো হচ্ছে অসংখ্য ছোট গাড়ির চাকা