সৌদি ফেরত যাওয়ার জটিলতা কাটল

বিমানকে নিয়মিত ফ্লাইট চালুর অনুমতি, বাড়ছে ভিসা ও ইকামার মেয়াদও

| বৃহস্পতিবার , ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০ at ৫:১৫ পূর্বাহ্ণ

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে দেশে এসে বিমান জটিলতায় আটকে পড়ে চাকরি নিয়ে উৎকণ্ঠিত সৌদি আরব প্রবাসীদের বিড়ম্বনার অবসান ঘটছে। ফিরতি টিকেট পেতে দুই মন্ত্রণালয় ও দুই বিমান সংস্থাকে কেন্দ্র করে প্রবাসীদের তিন দিনের বিক্ষোভের পর গতকাল বুধবার রাতে তাদের জন্য স্বস্তির খবর নিয়ে এসেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে এ আব্দুল মোমেন। তিনি বলেছেন, সৌদি আরব সরকার ভিসা ও ইকামার মেয়াদ বৃদ্ধির পাশাপাশি বিমান বাংলাদেশকে নিয়মিত ফ্লাইট পুনরায় চালুর অনুমতি দিয়েছে। রাত ৯টার দিকে এক ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, সৌদি আরব প্রবাসী যাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়েছে, সেদেশের সরকার তাদের মেয়াদ বাড়িয়ে দেবে। ‘সৌদি সরকারকে অ্যাপ্রোচ করেছিলাম মেয়াদ বাড়ানোর জন্য, যাদের মেয়াদ অতিক্রান্ত হয়েছে। তারা এতে সাড়া দিয়েছে। রোববারে সৌদি মিশন খুলবে। যাদের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে, তারা বাড়িয়ে নিতে পারবে। খবর বিডিনিউজের।
অন্যদিকে, আরবি সফর মাসে যাদের ইকামার মেয়াদ শেষ হবে, তাদের ইকামার মেয়াদও ভ্যালিড বলে গণ্য হবে বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট স্বাভাবিকভাবে চলার অনুমতিও সৌদি সরকার দিয়েছে বলে জানান তিনি। এসব সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, আমাদের প্রবাসীরা এখন নিশ্চিন্তে সৌদি আরবে ফিরে যেতে পারবে।
জানা যায়-মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ দেশ সৌদি আরবে ২০ লাখের বেশি বাংলাদেশি বিভিন্ন পেশায় কাজ করেন। ২০১৯-২০ অর্থবছরে যে এক হাজার ৮২০ কোটি ৫০ লাখ ডলারের রেমিটেন্স দেশে এসেছে, তার মধ্যে ৪০১ কোটি ৫১ লাখ ডলারই সৌদি প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন। করোনাভাইরাস মহামারীকালে সৌদি আরব প্রবাসী যারা দেশে এসেছিলেন, দেশটির সরকার বিমান চলাচল পুনরায় শুরু করলেও বাংলাদেশ থেকে যাওয়ায় দেখা দেয় বিপত্তি। সৌদি আরবের অনুমতি না মেলায় সেদেশে নিয়মিত বাণিজ্যিক ফ্লাইট পুনরায় চালু করতে পারেনি বিমান। ফলে সৌদিতে কর্মরত অনেক বাংলাদেশি বিমানের টিকেট কেটে রেখেও যেতে পারছিলেন না। অন্যদিকে ফ্লাইট কম থাকায় সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইন্সও এত যাত্রীর চাপ নিতে পারছে না। এই পরিস্থিতিতে সৌদি প্রবাসী কর্মীরা নামেন বিক্ষোভে। তারা বিমান ও সৌদি এরাবিয়ান এয়ারলাইন্স অফিসের সামনে দুদিন বিক্ষোভের পর বুধবার প্রবাসী কল্যাণ ভবনের সামনেও বিক্ষোভ করেন। বুধবার সকাল ৯টার দিকে কয়েকশ প্রবাসী কারওয়ান বাজারে সোনারগাঁও হোটেলের সামনে সড়কে অবস্থান নেন, যেখানে সৌদি এরাবিয়ান এয়ারলাইন্সের অফিস। এতে কিছু সময়ের জন্য সড়কে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এরপর বেলা ১১টার দিকে তারা ইস্কাটনে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ঘেরাও করে বিক্ষোভ শুরু করেন। তাদের আরেকটি দল বেলা ১২টার দিকে মতিঝিল থেকে মিছিল নিয়ে প্রেস ক্লাবের সামনে দিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সামনে গিয়ে অবস্থান নেন। তারা বলছিলেন, এ মাসের মধ্যে সৌদি আরব যেতে না পারলে অনেকেই চাকরি হারাবেন। সে কারণে তাদের দ্রুত ফেরার ব্যবস্থা করা জরুরি। ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর ব্যবস্থা করার পাশাপাশি সেখানে যাওয়ার টিকেটও লাগবে তাদের।
দুপুরের পর বিক্ষুব্ধ সৌদি প্রবাসীদের ছয়জন প্রতিনিধির সঙ্গে আলেচনায় বসেন মন্ত্রী ইমরান আহমেদসহ প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধতন কর্মকর্তারা। মন্ত্রীর আশ্বাসে মন্ত্রণালয়ের সামনে থেকে অবরোধ তুলে দেন প্রবাসীরা। এর মধ্যে প্রবাসীদের অবস্থা নিয়ে এক আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক হয় এবং পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারের উপর ভরসা রাখার আহ্‌বান জানান সরকারের মন্ত্রীরা। রাত ৯টার দিকে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে আসেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন। বিমানের ফ্লাইট চালুর পাশাপাশি ভিসা ও ইকামার মেয়াদ বৃদ্ধির মাধ্যমে জটিলতার অবসান হতে চলেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। ইকামার মেয়াদ বৃদ্ধি প্রসঙ্গে মোমেন বলেন, ইকামা বা ওয়ার্ক পারমিট ব্যক্তিগত, তার নিয়োগকর্তা দেয়। নিয়োগকর্তা তা দিলে তাদের স্পেসিফিক ডিপার্টমেন্ট সেটার অনুমোদন করে। এ সময়ে যেতে না পারার কারণে যদি ওয়ার্ক পারমিট বাতিল হয়, তাহলে কি হবে? ওনারা বললেন, এই আরবি মাস সফরের মাস, এই সফরের মাসে আমরা ইকামাটা ভ্যালিড বলে গণ্য করব। মোমেন বলেন, বিমান ও সৌদিয়া এয়ারলাইন্স বন্ধ থাকায় যারা যেতে পারেননি, এ সিদ্ধান্তের মাধ্যমে তাদের যাওয়ার রাস্তা খুলে গেল। গত কয়েক বছর ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সৌদি আররের সঙ্গে যে সুসম্পর্ক বজায় রেখেছেন, তার কারণে সৌদি সরকার এই সুপারিশগুলো গ্রহণ করেছে বলে মন্তব্য করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৪ অক্টোবর থেকে শুরু হচ্ছে ওমরাহ
পরবর্তী নিবন্ধসাড়ে তিন হাজার গার্ডার স্থাপন আজ থেকে