সোরেন কিয়ের্কেগার্ড : অস্তিত্ববাদের জনক

| শুক্রবার , ১১ নভেম্বর, ২০২২ at ৮:১৩ পূর্বাহ্ণ

সোরেন কিয়ের্কেগার্ড। বিখ্যাত ড্যানিশ দার্শনিক। অস্তিত্ববাদী দর্শনের প্রবক্তা হিসেবে তিনি বেশ সুপরিচিত। অস্তিত্ববাদ বিংশ শতাব্দীর একটি শীর্ষ স্থানীয় দার্শনিক মতবাদ। অস্তিত্ববাদের কথা, নীতিমালা মানুষের কাছে একটা সময়ে কর্তব্য হিসেবে গৃহীত হয়েছে। বিশেষ করে সাধারণ মানুষের কাছে, যেখানে উনিশ শতকের জীবন দর্শন অভিজাত শ্রেণির জন্যই শুধুমাত্র সীমাবদ্ধ ছিল। এ মতবাদ তাত্ত্বিক বিষয়ের বিপরীতে জাগতিক বিষয় সম্বন্ধে আলোচনা করে। অস্তিত্ববাদ মানব অবস্থার অন্তর্নিহিত সমস্যাগুলি, অস্তিত্বের অর্থ, সত্তার তাৎপর্য এবং স্বাধীনতা এবং স্বতন্ত্র দায়বদ্ধতার প্রকৃতি বোঝাতে চায়।
বিখ্যাত ড্যানিশ দার্শনিক। সমসাময়িক জার্মান দার্শনিক হেগেলের বস্তুবাদী দর্শনের বিরোধিতা করে সোরেন ব্যক্তির অস্তিত্বশীল সত্তাকে অধিক গুরুত্ব দিয়েছেন। সোরেন কিয়ের্কেগার্ডের জন্ম ১৮১৩ সালে ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেনে। তাঁর শৈশব কেটেছে অনেকটা নিরানন্দে পরিবারের অদ্ভুত, বিষণ্ন, নিঃসঙ্গ পরিবেশে। তবে তাঁদের বাড়িতে ছিল বুদ্ধিজীবীদের আনাগোনা, আলোচনা, তর্ক-বিতর্ক। শৈশব থেকেই পিতার সাথে সোরেন সেইসব আলোচনা-আড্ডায় অংশ নিতেন। পিতার প্রেরণা আর সেইসব তুখোড় আলোচনা-সমালোচনায় তাঁর মেধা শাণিত হয়, প্রখর হয় কল্পনাশক্তি। ভবিষ্যতে একজন পরিপূর্ণ দার্শনিক হয়ে ওঠার পেছনে এ-ই ছিল তাঁর মূল্যবান রসদ।
সোরেনের মতে, প্রচলিত ধর্ম, সংস্কৃতি, মূল্যবোধ মেনে নিয়ে নিজের সত্তাকে নির্ধারণ করা যায় না। ঐতিহ্যগতভাবে ধর্মবিশ্বাস করে হওয়া যায় না সত্যিকারের ধার্মিক। চারপাশের লোকজন যেভাবে বিশ্বাস করছে সেভাবে বিশ্বাস স্থাপন করার অর্থই হচ্ছে বিষয়গততা। এ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে, হতে হবে ‘বিষয়ীগত’। নিজের অস্তিত্বের স্বরূপ অর্থহীনতা, অনিশ্চয়তা প্রভৃতি উপলব্ধি করে বিষয়ীগতভাবে ঈশ্বরে বিশ্বাসের মাধ্যমেই মোক্ষলাভ সম্ভব। প্রচলিত খ্রিষ্টান ধর্ম ও চার্চের দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোরেন ছিলেন সোচ্চার কণ্ঠ। খ্রিষ্টধর্ম সম্পর্কে তিনি অনেকগুলো গ্রন্থ রচনা করেছেন। শুধু ধর্ম নয়, মানুষের চিন্তা, স্বাধীনতা, জ্ঞান, ইতিহাস প্রভৃতি বিষয়েও তিনি বুদ্ধিবাদী দর্শনের প্রকাশ ঘটিয়েছেন যার উৎস ব্যক্তি মানুষ ও বাস্তব জীবন। ১৮৫৫ সালের ১১ নভেম্বর সোরেন কিয়ের্কেগার্ড মৃত্যুবরণ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅ্যাঙ্গোলার স্বাধীনতা দিবস
পরবর্তী নিবন্ধকবে থামবে আর্তনাদ!