সোনার বাংলায় বড় প্রাপ্তি

মেহের আফরোজ হাসিনা | শুক্রবার , ১৮ জুন, ২০২১ at ৬:০৬ পূর্বাহ্ণ

স্বাধীনতা মানে মুক্ত হাওয়া। শিক্ষা ও উন্নত দেশ গড়ার অধিকার। মানুষের দুর্জেয় মন থেকেই মানুষের মানসিকতার উৎপত্তি। মন আর মানসিকতা দু’ভাবে কাজ করে। ইংরেজদের শাসন আমল যদি এখনও থাকতো তাহলে বাঙালি আজও অশিক্ষিত অবহেলিত মানুষ হিসেবে দাস হয়ে থাকতো। নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা যেমন বাঙালির জন্য একটি মাইলফলক ছিলেন, তার সঙ্গে ২৪ ঘণ্টায় যারা জড়িত ছিল তারাই তাকে মেরে ইংরেজদের হাতে বাংলাকে তুলে দিল। পাকিস্তানি শাসকরা বাংলার নাম মুছে দিয়ে পূর্ব পাকিস্তান নামটি বসিয়ে দিয়েছিল। আল্লাহ রহমতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম হয়েছিল ১৯২০ সালে ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ায়। শৈশবেই তিনি পরিবার থেকে মানবিকতাবোধ, বিবেকবোধ এবং সহজসরল জীবনযাপন, আত্মত্যাগ, জনসেবার মাধ্যমে দেশপ্রেমিক হয়ে উঠেছিলেন। চিন্তার বিচক্ষণতা সম্মোহনী ক্ষমতার কারণে সমাজে বঙ্গবন্ধু নামে মহানায়ক হয়েছিলেন। আমরা যেন নতুন করে আবার নবাব সিরাজ-উদ-দৌলাকে পেলাম। পুনর্জন্ম হলো নবাবের। ১৯৭১এর ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণার মাধ্যমে জাতির মুক্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয় স্বাধীন বাংলাদেশ। স্বাধীনতা অর্জনের এক বছরের কম সময়ের মধ্যে ১৯৭২ সালে ৪ঠা নভেম্বর বাংলাদেশের সংবিধান জাতীয় সংসদে গৃহীত হয় এবং ১৬ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হয়। ছোটবেলায় দেখেছি বাবার সাথে আড্ডা দিতেন গুণীজনরা। ইংরেজ শাসন নিয়ে, বাংলার ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা করতেন তাঁরা। বাবার পাশে বসে আমিও তা শুনতাম।
৭ই মার্চে প্রদত্ত শেখ মুজিবুর রহমানের অগ্নিঝরা বক্তৃতা অতি নিরীহ জনকেও বিদ্রোহী করে তোলে, বুকের ভেতরে আগুন জ্বলে উঠলো যেন দেশে। রক্তে জ্বলে উঠে আগুনের ফুলকি। কবি অন্নদাশঙ্কর রায় একটি কবিতার পঙ্‌ক্তিমালা লক্ষ কোটি বাঙালির হৃদয় ছুঁয়ে গেছে- বাঙালি তুমি অস্ত্র ধর, তলোয়ার ভেঙ্গে গেছে ক্ষতি নাই, তবুও যেন বুকের বল যেন নাহি ভাঙ্গে। বাঁচার প্রয়োজনে যদি করতেই হয় মরণ-বরণ, মৃত্যু যদি সত্যিই আসে, বীরের লাশ বনভূমিতে রক্ত স্রোতেই ভাসে, সে হবে মহামৃত্যু। সে মৃত্যুর তুলনা নাই।
যতদিন রবে পদ্মা যমুনা, গৌরী মেঘনা বহমান
ততদিন রবে কীর্তি তোমার, শেখ মুজিবুর রহমান।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে বাঙালির মীরজাফররা। নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা যেন আরেকবার সাথীদের হাতে নিহত হলেন। তবুও তিনি যে আদর্শ, তিনি বাঙালির চেতনাবোধে উত্তপ্ত করে গেছেন তা জাতির আগামী দিনের। তিনি বর্তমানের নতুন প্রজন্মের চলার পথের দিক নির্দেশক হিসেবে চিরঅম্লান হয়ে থাকবেন। তাই বঙ্গবন্ধুবিরোধীদের কাছে মৃত বঙ্গবন্ধু জীবিত বঙ্গবন্ধুর চেয়ে অনেক শক্তিশালী ও ভয়ংকর। কারণ তিনি ‘বঙ্গবন্ধু’ খেতাব এমনি এমনি পাননি, তিলতিল করে অর্জন করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর সপরিবারে নিহত হওয়ার ঘটনাটি নৃশংসতার ইতিহাসেও অদ্বিতীয়। দীর্ঘ ২১ বছর পর জাতির পিতার শাহাদতবার্ষিকীর দিনটি জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালিত হয়।
বাংলার পাশে এসে দাঁড়ালেন তাঁরই কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা এসেও দেখতে পেলেন দেশে কত রক্ত, কত যন্ত্রণা। বাবার দেশ কাঁদছে যেন। হাল ধরলেন শেখ হাসিনা। সবকিছু পেরিয়ে অর্জন করে আনলেন একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের মায়ের ভাষা বাংলা, ভাষা দিবস। আমরা বাংলায় কথা বলি, আমাদের রক্তে মিশে আছে বাংলা, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারাবিশ্বে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে জয় করে এনেছেন এটা আমাদের অনেক বড় অর্জন, বাঙালি জাতির জন্য এটা বিশাল প্রাপ্তি।
১৯৭১ সালে মার্চ মাসের ২৬ তারিখে স্বাধীনতার ঘোষণা করা হয়। ৯ মাস পরে ১৬ই ডিসেম্বর যুদ্ধের মাধ্যমে বাঙালি জাতি মুক্তি পায়। আমরা স্বাধীন, আমরা মুক্ত, সামনে রইল একটি নাম জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
তাঁরই কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ পরিচালনার দায়িত্ব তুলে নেন। অনেক কষ্টে দেশকে দাঁড়ানোর জন্য জীবনবাজি রাখলেন। সেই দেশ আজ সারাবিশ্বে প্রশংসিত।
২০২১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করছে। শেখ হাসিনার হাতে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় আগের চেয়ে চারগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। যা আমাদের জন্য বিস্ময়কর। পূর্বের বাংলাদেশের চেয়ে আজকের বাংলাদেশ অনেকগুণ বেশি উন্নত। ভবিষ্যতে আমরা আশা করছি, এইভাবে উন্নয়নের পথে চললে বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হিসেবে বাংলাদেশ পরিণত হবে। স্বাধীনতা লাভ করার পর অল্প বাজেট নিয়ে নতুন করে শুরু করা দেশটি সারাবিশ্বে পরিচিতি পেয়েছে। বাংলাদেশ আর পিছিয়ে নেই। সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। শেখ হাসিনা দেশের মাইলফলকের ছবি দেখিয়ে দিয়েছেন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সন্তানকে দেখলে আমার নবাব সিরাজ-উদ-দৌলাকে মনে পড়ে। জয়ের চেহারা, চোখ, কাঠামো, দৈর্ঘ্য সবকিছুতে যেন নতুন করে নবাবের পুনর্জন্ম হয়েছে। হবে না কেন, তিনি যে জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের নাতি। রক্তে তাঁর দেশের মাটি জড়িয়ে আছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভবিষ্যত বাংলাদেশের জন্য পুনর্জন্ম দিয়েছেন জয়কে। আমরা দেশ নিয়ে আশাবাদী। বাংলাদেশ একদিন বৃহত্তম দেশ হিসেবে পরিচিত হবে সারাবিশ্বে। ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবেন জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁরই সঙ্গে রাজনীতিতে জড়িয়ে থাকবেন শেখ হাসিনা এবং সবশেষে আমরা হয়ত দেখবো শেখ মুজিবের দৌহিত্র, শেখ হাসিনার সন্তান জয়কে।
আমরা আশাবাদী, আরো দেখবো গৃহহীন মানুষেরা সবাই গৃহে বসবাস করছে। সোনার বাংলায় এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি কী হতে পারে! সারাবিশ্বে বাংলাদেশ একটি রোড মডেল হয়ে থাকবে।
লেখক : শিক্ষক, প্রাবন্ধিক, সংগঠক

পূর্ববর্তী নিবন্ধনারী নয় মানুষ হয়ে বাঁচতে চাই
পরবর্তী নিবন্ধজুম্‌’আর খুতবা