সৈয়দ খোরশেদুল আনোয়ার : একজন সোনার মানুষের চির বিদায়

মুসলেহ্‌উদ্দিন মুহম্মদ বদরুল | মঙ্গলবার , ১৯ জানুয়ারি, ২০২১ at ১০:৪৪ পূর্বাহ্ণ

সন্তানকে জন্ম দানের পর মাতা-পিতার প্রথম ও প্রধান কর্তব্য হচ্ছে সন্তানকে মানুষের মত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা। আর মানুষ গড়ার এই গুরু দায়িত্ব ন্যস্ত হয় শিক্ষকের ওপর। সেইজন্য, শিক্ষককে বলা হয়, ‘মানুষ গড়ার কারিগর’। পৃথিবীতে যত বড় বড় জ্ঞানী-গুণী, মনীষী, বৈজ্ঞানিক, দার্শনিক, কবি-সাহিত্যিকের জন্ম হয়েছে তাঁরা কিন্তু প্রথমেই শিক্ষকের চরণ তলে বসে শিখতে হয়েছে। মক্তব, পাঠশালায় যেতে হয়েছে। শিক্ষক অন্ধকার থেকে আলোর পথ দেখিয়েছেন। সেই আলোর পথে হেঁটেই সন্তান মানুষ হতে পেরেছে। তাই, জন্মদাতা মা-বাবার পরেই শিক্ষকের স্থান। শিক্ষক জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানও সর্বোচ্চ সম্মানের অধিকারী সেই বিষয়ে কবি কাজী কাদের নেওয়াজ তাঁর ‘শিক্ষাগুরুর মর্যাদা’ কবিতায় চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে গেছেন। কবি সেই কবিতায় শিক্ষককে যে সম্মান দেখিয়েছেন তা’ বলাই বাহুল্য। বাদশাহ আলমগীরের পুত্রকে পড়াতে গিয়ে একদিন ওযুর পানি আনতে বললেন তার শিক্ষক। বাদশাহ পুত্র সেই পানি আনন্দচিত্তে শিক্ষকের পায়ে ঢালছেন আর শিক্ষক নিজ হাত দিয়ে নিজের পা ধুয়ে মুছে পরিস্কার করছেন। কবি কবিতার সুরে বলেছেন, শিক্ষক শুধু নিজ হাত দিয়া নিজেরি পায়ের ধুলি ধুয়ে মুছে সব করিছেন সাফ্‌ সঞ্চারি অঙ্গুলি। এ দৃশ্য বাদশাহ দূর থেকে দেখে তাঁর মনে ক্ষোভের সৃষ্টি হলো। তাই পরদিন রাজমহলে শিক্ষককে ডেকে পাঠালেন বাদশাহ। নিজের অন্যায় মনে করে শিক্ষক মনে মনে অনুতপ্ত হলেন এবং ভয়ার্ত চিত্তে রাজ দরবারে উপস্থিত হন। না, জানি, ললাটে আজ কি লেখা আছে? কিন্তু মহান বাদশাহ আলমগীর ওস্তাদের শির চির উঁচু করে দিয়ে বললেন ‘পুত্র আমার আপনার কাছে সৌজন্যতা বোধ কি কিছু শিখেছে?’ যদি তাই না হয় তাহলে শুধু পানি ঢালবে কেন, নিজ হাতে পক্ষালনও (পরিস্কার) করে দিত আপনাকে। কবিতার শেষ পঙক্তি ছিল : ‘‘আজ হতে চির-উন্নত হল শিক্ষাগুরুর শির,/ সত্যই তুমি মহান উদার বাদশাহ্‌ আলমগীর।’ আজকের এই লেখার উদ্দেশ্য হল গত ১৫ জানুয়ারি ২০২১, শুক্রবার রাতে আমার স্কুল জীবনের আদর্শ শিক্ষক নানুপুর আবু সোবহান উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক, পরম শ্রদ্ধেয় সৈয়দ খোরশেদুল আনোয়ার স্যার ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহে…. রাজেউন)। আমাদের সময়ের শিক্ষকগণ ছিলেন নির্লোভ, নিরহংকারী, নীতিবান, আদর্শবান। যাঁদের জ্ঞানের আলোয় আমরা আলোর পথের সন্ধান পেয়েছিলাম সেই খাঁটি সোনার মানুষগুলো একে একে আমাদের কাছ থেকে হারিয়ে যাচ্ছেন। মহান রাব্বুল আলামিন মানুষ গড়ার এ মহান কারিগর, খাঁটি সোনার মানুষ সৈয়দ খোরশেদুল আনোয়ারকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসীব করুন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজরিমানার নামে সিটি কর্পোরেশনের সাপ্তাহিক টাকা আদায় প্রসঙ্গে
পরবর্তী নিবন্ধভালোবাসা এবং সৎ প্রচেষ্টাই আমাদের বাঁচিয়ে রাখতে পারে