কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে ফের ভেসে এলো শত শত মরা জেলিফিশ। গতকাল শুক্রবার ভোর সাড়ে ৬টা থেকে সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টা ধরে শহরের কলাতলী বেইলি হ্যাচারি পয়েন্ট থেকে সুগন্ধা পয়েন্ট পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার সৈকতজুড়ে সামুদ্রিক জোয়ারের সাথে এই জেলিফিশ ভেসে আসার দৃশ্য চোখে পড়ে। খবর পেয়ে বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইন্সটিটিউটের একদল বিজ্ঞানী ঘটনাস্থলে গিয়ে মৃত জেলিফিশ পরীক্ষা করেন।
তারা জানান, কক্সবাজার সৈকতে যে প্রজাতির জেলিফিশটি ভেসে এসেছে, এটি ক্ষতিকর প্রজাতির নয়। বরং খাওয়ার উপযোগী। এরআগে গত ৩ আগস্টও একই সৈকতে একই প্রজাতির শতাধিক জেলিফিশ ভেসে এসেছিল। তবে এবার অনেক বেশি জেলিফিশ ভেসে এসেছে।
বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইন্সটিটিউটের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) ও সমুদ্রবিজ্ঞানী সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দর বলেন, আমরা শুক্রবার ভোর সাড়ে ৬টার দিকে কলাতলী সৈকতে জেলিফিশ ভেসে আসার খবর পেয়ে সাথে সাথে ঘটনাস্থলে যাই এবং সেখানে হাজার খানেক মৃত জেলিফিশ দেখতে পাই। এরপর মৃত জেলিফিশগুলো পরীক্ষা করে দেখি, এগুলো ক্ষতিকর প্রজাতির নয়। বরং বিশ্বের যে ১১টি প্রজাতির জেলিফিশ খাওয়ার উপযোগী তার মধ্যে কক্সবাজার সৈকতে ভেসে আসা জেলিফিশটিও অন্যতম। তিনি খালি হাতে এই জেলিফিশটি ধরে দেখান এবং এই জেলিফিশ নিয়ে পর্যটকসহ স্থানীয়দের আতংকিত না হতে অনুরোধ করেন।
তিনি জানান, শুক্রবার কক্সবাজার সৈকতে ভেসে আসা জেলিফিশটি স্থানীয় ভাষায় ধলা নুইন্না এবং বৈজ্ঞানিক ভাষায় লবনেমইডেস রোবাস্টাস (Lobonemoides robustus) নামে পরিচিত। বিশ্বে প্রায় ৫.৬০ বিলিয়ন ডলারের বাজার রয়েছে এই জেলিফিশের। এর আগে গত ৩ আগস্ট বুধবার রাতে শহরতলীর দরিয়ানগর সৈকতে ভেসে আসে শতাধিক মরা জেলিফিশ। সমুদ্র গবেষণা ইন্সটিটিউটের বিজ্ঞানীরা এই জেলিফিশের নমুনা সংগ্রহ করেছেন। গত ফেব্রুয়ারিতে কুয়াকাটা সৈকতেও শত শত জেলিফিশ ভেসে আসে। তবে কক্সবাজার সৈকতে ইতোপূর্বে একসঙ্গে এত জেলিফিশ ভেসে আসার ঘটনা ঘটেনি বলে দাবি স্থানীয়দের। এর আগে গত জুনের শুরুতে কক্সবাজার সৈকতের নাজিরারটেক মোহনায় অসংখ্য মরা রাজকাঁকড়া ভেসে আসে। গত ২০ মার্চ টেকনাফ সৈকতে ভেসে আসে একটি মরা ডলফিন। একই মাসের তৃতীয় সপ্তাহে দরিয়ানগর-হিমছড়ি পয়েন্টে সৈকতের প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে নানা ধরনের বর্জ্য ভেসে আসে, যেখানে প্লাস্টিকের জুতা, স্যান্ডেল, ব্যাগ, দড়ি, জাল, ককসিট, কাঠ, বাঁশ এবং প্লাস্টিকের টুকরা ছাড়াও মরা কচ্ছপ, সাপ ছিল। ২০২০ সালের এপ্রিল মাসের শুরুতেও টেকনাফ সৈকতে দুটি মরা ডলফিন ভেসে আসে। এর কয়েকদিন আগে ডলফিন দুটিকে কক্সবাজার শহরের কলাতলী সৈকতে খেলা করতে দেখা যায়। গত বছর এপ্রিল মাসে পরপর দুইদিনে দুটি মরা তিমি ভেসে আসে হিমছড়ি সৈকতে। একই সৈকতে ২০২০ সালের জুলাই মাসে দুই দফায় বর্জ্য-বন্যা দেখা দিলে বর্জ্যের সাথে মরা কচ্ছপ, সাপসহ আরো বিভিন্ন সামুদ্রিক প্রাণির মৃতদেহ ভেসে আসে।
বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইন্সটিটিউটের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) ও সমুদ্রবিজ্ঞানী সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দর বলেন, সাগরের পানির তাপমাত্রার তারতম্যের কারণে সাম্প্রতিককালে বঙ্গোপসাগরে ‘জেলিফিশ ব্লুম’ (অনুকূল পরিবেশে ব্যাপকমাত্রায় বংশবৃদ্ধি ঘটা) ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে বঙ্গোপসাগরে যে জাতের জেলিফিশের ব্লুম ঘটেছে তা ক্ষতিকর না হয়ে উপকারী হওয়ায় দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে এই অপ্রচলিত পণ্যটির ব্যবহার জরুরি।
তিনি বলেন, এই জাতের জেলিফিশটি খাদ্য ছাড়াও ওষুধ ও প্রসাধনী সামগ্রী তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। আর বোরি’র বিজ্ঞানীরা সেই প্রযুক্তি অর্জনের জন্য এখন জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন।