সেপ্টেম্বরে চালু হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ দুই সড়ক

রেললাইনের ওপর ব্রিজের উচ্চতা নিয়ে কাটলো জটিলতা

হাসান আকবর | বৃহস্পতিবার , ১০ আগস্ট, ২০২৩ at ৪:৪১ পূর্বাহ্ণ

দুইটি রেলওয়ে ব্রিজের নির্মাণ কাজ শেষে আগামী সেপ্টেম্বরে চালু হতে যাচ্ছে চট্টগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ দুইটি সড়ক। উচ্চতার গ্যাড়াকলে পড়ে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ব্রিজ দুইটির কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়েছিল। এর মধ্যে একটি সড়ক ইতোমধ্যে চালু হলেও অপর সড়কটি চালু হলে নগরীর পতেঙ্গা এবং বিমানবন্দরমুখী যান চলাচলের ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে।

সূত্র জানিয়েছে, দেশের বিভিন্ন স্থানে রেললাইনের উপর শত শত ব্রিজ রয়েছে। এসব ব্রিজের জন্য রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ উচ্চতা নির্দিষ্ট করে দিয়ে অনুমোদন দিয়ে থাকে। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ব্রিজের উচ্চতা নিয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ে দুই বছর অন্তর নতুন নতুন নির্দেশনা জারি করায় দেশব্যাপী রেল লাইনের উপর ব্রিজ নির্মাণের কার্যক্রম নিয়ে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো বেকায়দায় পড়ে। এরমধ্যে উচ্চতার গ্যাড়াকলে পড়ে চট্টগ্রামের অতি গুরুত্বপূর্ণ দুইটি প্রকল্প মুখ থুবড়ে পড়ে।

এরমধ্যে পতেঙ্গা থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত আউটার রিং রোডের সাথে শহরের সংযোগ ঘটাতে ফিডার রোড৩ নির্মিত হচ্ছে সাগরিকা জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের পাশ দিয়ে। প্রায় দুই কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের রাস্তাটিতে ৮শ’ মিটারের মতো একটি ওভারপাস রয়েছে। এই ওভারপাসের নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ হয় দুই বছর আগে। ৭.৬ মিটার উচ্চতা নিশ্চিত করে নির্মিত এই ওভারপাসে মাত্র ৪০ ফুটের একটি স্প্যান বসানো হলেই কাজটি সম্পন্ন হয়ে যায়। অথচ রেলওয়ের কর্তৃপক্ষ রেল লাইনের উপর ৮.৫ মিটার উচ্চতা নিশ্চিত করা না হলে ব্রিজটির অনুমোদন দেয়া হবে না বলে জানিয়ে দেয়। দীর্ঘ এক বছরেরও বেশি সময় ধরে শুধুমাত্র ৪০ ফুটি একটি স্প্যানের জন্য ব্রিজটির কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। এতে করে পতেঙ্গা বা বিমানবন্দরে চলাচলকারী শহরের গাড়িগুলোকে ফৌজদারহাট হয়ে রিংক রোডে যেতে বা আসতে হচ্ছিল। এতে করে নগরী থেকে পতেঙ্গা কিংবা বিমানবন্দর যাওয়ার ক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় ছাড়াও যানজটসহ নানা ঝক্কি সামলাতে হচ্ছিল। ফৌজদারহাট পোর্ট টোল রোডের মুখেও রাতে দিনে যানজট লেগে থাকার ঘটনা ঘটছে।

অপরদিকে ফৌজদারহাটবায়েজিদ লিংক রোডের ফৌজদারহাট অংশে প্রায় ৮৫০ মিটার লম্বা একটি ব্রিজের কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালে। ওই সময় রেল লাইনের কোন ব্রিজ নির্মাণ করতে হলে কমপক্ষে ৭.৫ মিটার উচ্চতা নির্দিষ্ট করে রাখতে হতো। এর কম উচ্চতার কোন ব্রিজ নির্মাণে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ অনুমোদন দিতো না। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ব্রিজটি নির্মাণকালে রেল লাইনের উপর থেকে ৭.৬ মিটার উচ্চতা নিশ্চিত করে নির্মাণ কাজ শুরু করে। ব্রিজ নির্মাণের শেষ পর্যায়ে এসে রেলওয়ে ৮.৫ মিটার উচ্চতা নিশ্চিত করতে সিডিএকে পত্র দেয় এবং প্রকল্পটির কাজ বন্ধ করে দেয়। এতে করে ৮৫০ মিটার দীর্ঘ ব্রিজের মাত্র ৮০ মিটারের দুইটি স্প্যান স্থাপন করতে না পারায় পুরো ব্রিজটি মুখ থুবড়ে পড়ে থাকে। পুরানো ব্রিজের উপর দিয়ে সিঙ্গেল লাইনে এই রাস্তায় যান চলাচল করলেও চার লেনের ব্রিজটির কাজ শেষ করা সম্ভব হচ্ছিল না।

পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ হস্তক্ষেপে ব্রিজ দুইটি ৭.৬ মিটার উচ্চতায় নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার বিশেষ অনুমোদন পায় সিডিএ। এই অনুমোদনের পর জোরে শোরে কাজ শুরু করা হয়েছে। ইতোমধ্যে কাজ একেবারে শেষ পর্যায়ে। আগামী সেপ্টেম্বরে লিংক রোড থেকে নয়া রোড ধরে সাগরিকা স্টেডিয়ামের পাশ দিয়ে একে খান মোড়, অলংকার কিংবা পাহাড়তলী হয়ে শহরের গাড়ি পতেঙ্গায় যাতায়ত করতে পারবে। যা এতোদিনকার ভোগান্তির অবসান ঘটাবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। একইসাথে ফৌজদারহাট বায়েজিদ লিংক রোডের চার লেনের নয়া ব্রিজের কাজ সম্পন্ন হলে এই রাস্তায়ও যান চলাচলে গতিশীলতা তৈরি হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে, আউটার রিং রোড থেকে সাগরিকা স্টেডিয়ামের পাশ দিয়ে রাস্তাটি চালু হলে শহরের যান চলাচলের ক্ষেত্রে বড় ধরণের ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চিফ ইঞ্জিনিয়ার কাজী হাসান বিন শামস বলেন, ব্রিজ দুইটির নির্মাণকাজ একেবারে শেষ পর্যায়ে। আমরা আগামী সেপ্টেম্বরে এই দুইটি ব্রিজ চালু করে দিতে পারবো। সাগরিকা ওভারপাসের ব্রিজটি শহরের যান চলাচলে নয়া মাত্রা যোগ করবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআত্মীয়ের মাধ্যমে টাকা লেনদেন করেন মুছা
পরবর্তী নিবন্ধছিনতাই হওয়া ৬ স্বর্ণের বারসহ গ্রেপ্তার ৫