ছিনতাই হওয়া ৬ স্বর্ণের বারসহ গ্রেপ্তার ৫

ঋত্বিক নয়ন | বৃহস্পতিবার , ১০ আগস্ট, ২০২৩ at ৪:৪২ পূর্বাহ্ণ

ওষুধ ও স্বর্ণের পাইকারি বাজার বলা হয় নগরীর হাজারী গলিকে। ঘিঞ্জি বাজার হওয়ায় এক ব্যবসায়ীর হাঁড়ির খবর অন্যজনে জানতে পারেন খুব সহজেই। জয়ন্ত বণিক (৪৮) তেমনই একজন। আগে ছিলেন স্বর্ণের কারিগর, ধীরে ধীরে হয়ে উঠেন স্বর্ণ ব্যবসায়ী। আর সেই স্বর্ণ ব্যবসার আড়ালে প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলের সন্ত্রাসী হিসেবে ছোট ভাই ও তার সহযোগীদের ব্যবহার করেন স্বর্ণ ছিনতাই কাজে। পরে আবার ছিনতাইয়ের শিকার দোকানীদের সঙ্গে মধ্যস্ততা করে টাকার বিনিময়ে পাইয়ে দেন সেই সোনা।

চট্টগ্রামে সোনার বার ছিনতাইয়ের একটি ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ এই দুই সহোদরের সন্ধান পায়। ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ছিনতাই ও পরিকল্পনায় জড়িত চারজন এবং লুট করা সোনা হেফাজতে রাখার অভিযোগে এক নারীকে গ্রেপ্তার করে ছয়টি বার ও স্বর্ণ বিক্রির ছয় লাখ টাকা উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার পাঁচজন হলেন জয়ন্ত বণিক (৪৮), তার ছোট ভাই প্রবীর বণিক (৪৪), জয়ন্তের স্ত্রী শ্রাবণী বণিক (৩৪), আব্দুর রউফ (৫২) ও মাঈনুদ্দীন হাসান তুষার (৩৮)

কোতোয়ালী থানার ওসি জাহিদুর কবীর আজাদীকে বলেন, গত ৬ আগস্ট ভোরে হাজারী গলির মুখ থেকে পুলিশ পরিচয়ে এক ব্যক্তির কাছ থেকে ১৪টি সোনার বার (১৪০ ভরি) জোরপূর্বক নিয়ে লালদিঘীর পাড়ের দিকে দৌঁড়ে পালিয়ে যায় ছিনতাইকারী। এ ঘটনায় কোতোয়ালী থানায় অভিযোগের পর পুলিশ তদন্ত শুরু করে ছিনতাইয়ের পরিকল্পনাকারী হিসেবে জয়ন্ত ও প্রবীরের নাম জানতে পারে। এ ঘটনায় চার জনকে গ্রেপ্তারের পর হাজারী গলির এনডিসি আতিক অর্কিড ভবনে জয়ন্ত বণিকের বাসায় অভিযান চালিয়ে গতকাল বুধবার তার স্ত্রীর কাছ থেকে ছয়টি সোনার বার ও ছয় লাখ ৩০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।

ওসি জানান, এক সময় হাজারী গলিতে সোনার দোকানে কাজ করতেন জয়ন্ত। এখন নিজেই ব্যবসায় জড়িত। যার কারণে কোন ব্যবসায়ী কোথায় সোনা আনা নেয়া করেন সেগুলো তার জানা ছিল। বিভিন্ন সময়ে ছোট ভাই প্রবীর কিংবা অন্যদের মাধ্যমে সোনা ছিনতাই করাতেন তিনি। আবার যে ব্যবসায়ীর স্বর্ণ ছিনতাই হত, পরবর্তীতে জয়ন্ত তার সাথে বিভিন্নভাবে যোগাযোগ করে মধ্যস্থতা করতেন এবং টাকার বিনিময়ে ছিনতাই হওয়া স্বর্ণ ফিরিয়ে দিতেন। ছিনতাই বা চুরির বিষয়টি ব্যবসায়ীরা পুলিশকে না জানিয়ে নিজেরাই মধ্যস্থতা করে ফিরিয়ে নেন। আবার অনেক সময় ছিনতাই বা চুরির বিষয়টি গোপন রাখেন, যার কারণে বিভিন্ন সময় জয়ন্ত এ ধরনের ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটালেও কেউ বুঝতে পারত না।

পুলিশ জানায়, হাজারী গলির পিয়াসী মার্কেটের বনলতা কাটিং সেন্টার নামে একটি অলঙ্কার তৈরির কারখানার ব্যবস্থাপক কনক ধর গত ৬ আগস্ট ১৪টি স্বর্ণের বার নিয়ে ঢাকা যাবেন; এই তথ্য জেনে গিয়েছিলেন জয়ন্ত। ৬ আগস্ট ভোরে দামপাড়া বাস কাউন্টারে যাওয়ার পথে হাজারী গলির মুখে বনফুলের সামনে পুলিশ পরিচয় দিয়ে তার বারগুলো ছিনিয়ে নেয়া হয়।

সূত্র জানায়, চট্টগ্রামে থাকলেও জয়ন্তের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া। সেখানেও তার ব্যবসা আছে। গত ৫ আগস্ট ছোট ভাই প্রবীরকে ছিনতাইয়ের তথ্য দিয়ে তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া চলে যান। ছিনতাইয়ের ঘটনা সফল হওয়ার বিষয়টি জানতে পেরে দ্রুত চলে আসেন। কিন্তু ততক্ষণে চোরের ওপর বাটপারির মতো প্রবীর সাতটি বার বিক্রি করে ক্যাশ করে ফেলেন। বাকি সাতটি তার দীর্ঘদিনের অপরাধ জগতের সাথী টেরিবাজার রঘুনাথ বাড়ির লিটনের কাছে রাখতে দেন। জয়ন্ত চট্টগ্রাম এসে বিষয়টি জানতে পেরে প্রবীরের ওপর রেগে যান। প্রবীরকে তিনি বলেন, পুলিশের সাথে আমার ‘লাইনভাঁজ’ হয়ে গেছে। বাকি বারগুলো নিয়ে আয়। প্রবীর লিটনের কাছে সাতটি বার ফেরত চাইলে লিটন একটি বার নিজের কাছে রেখে বাকি ছয়টি প্রবীরকে দেয়। প্রবীর সেই ছয়টি বার তার বড় ভাই জয়ন্তকে এনে দিলে তিনি তার স্ত্রীর কাছে সেগুলো রেখে আবার চলে যান।

পুলিশ জানায়, এ ঘটনায় পুলিশ আশপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে ছিনতাইয়ে জড়িতদের বিষয়ে খোঁজ পায়। মঙ্গলবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে মূল পরিকল্পনাকারী জয়ন্তকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার দেয়া তথ্যে রাতে নগরীর ঘাটফরহাদবেগ থেকে প্রবীরকে এবং বাকলিয়া থেকে রউফ ও তুষারকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের তথ্য মতে বুধবার (গতকাল) হাজারী গলিতে জয়ন্তের বাসা থেকে সোনার বারগুলো উদ্ধার করা হয়। বাকী বার উদ্ধার ও ঘটনায় জড়িত আরো দুই জনকে ধরতে গ্রেপ্তারদের রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে। আদালত আগামী রোববার রিমান্ড শুনানির দিন রেখে গ্রেপ্তার পাঁচজনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসেপ্টেম্বরে চালু হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ দুই সড়ক
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে বন্যা দুর্গতের জন্য ৭০ লাখ টাকা ও ১০০ টন চাল বরাদ্দ