চলতি মৌসুমে দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে দৈনিক দুই হাজার পর্যটক যাওয়ার অনুমতি দিয়েছে সরকার। কিন্তু চাহিদা রয়েছে পাঁচগুণেরও বেশি। এই প্রেক্ষাপটে দুই হাজারের বাইরে আরো পর্যটক গমনের অপচেষ্টা চলছে। তাই জায়িলাতির মাধ্যমে ভুয়া টিকেট সংগ্রহ সেন্টমার্টিন যেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পর্যটকরা। আর জালিয়াতির টিকেট বিক্রি করতে চেষ্টা করছে জাহাজের সাথে সংশ্লিষ্ট লোকজন।
এমন প্রেক্ষাপটে যাত্রার প্রথম দিনই ভুয়া টিকেটে যাত্রী ধরা পড়ে ট্যুরিস্ট পুলিশের হাতে। এরপর জালিয়াতি রোধে উপজেলা প্রশাসন ও ট্যুরিস্ট পুলিশের যৌথ উদ্যোগে নজরদারি জোরদার করে। তারপরও ঠেকানো যায়নি জালিয়াতি। তাই এবার জালিয়াতি ঠেকাতে কঠোর উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন। মন্ত্রণালয়ের এক সভার সিদ্ধান্তের আলোকে পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসনের দল প্রতিদিন ঘাটে অবস্থান করে কঠোরভাবে নজরদারি করবে। তারই অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার থেকে নিয়মিত এই কঠিন যৌথ নজরদারি শুরু হয়।
এই ব্যাপারে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পক্ষে জানানো হয়েছে, নানা বিধিনিষেধের মধ্যেই জাহাজের টিকিট নিয়ে তৈরি হয়েছে নানা বিড়ম্বনা। পাশাপাশি জালিয়াতি চক্র সক্রিয় থেকে আরো বেশি জালিয়াতি বাড়ানোর অপচেষ্টা করছে। এসব জালিয়াতি ঠেকাতে টিকিটে উল্লিখিত নামধারীর জাতীয় পরিচয়পত্রের হার্ডকপি অথবা নিবন্ধিত মোবাইল নম্বর যাচাই বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যাচাই ছাড়া কোনো যাত্রীকে সেন্টমার্টিন ভ্রমণের অনুমতি দেওয়া হবে না। বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সিদ্ধান্তের পর বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) থেকেই এ নির্দেশনা কঠোরভাবে কার্যকর করা হচ্ছে। এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নে সার্বক্ষণিক নজরদারি করবে ট্যুরিস্ট পুলিশ ও কক্সবাজার সদর উপজেলা প্রশাসন।
এই সিদ্ধান্তের পর গত বৃহস্পতি ও গতকাল শুক্রবার দুইদিনই কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়া বিআইডব্লিউটিএ ঘাটে নজরদারি জোরদার করেন ট্যুরিস্ট পুলিশের কক্সবাজার রিজিয়নের প্রধান ও অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ ও কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানজিলা তাসনিম। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সি ক্রুজ অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর জানান, মধ্য জানুয়ারি পর্যন্ত সব জাহাজের টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। এমভি কর্ণফুলী জাহাজের টিকিট আগামী ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত অগ্রিম বুকিং রয়েছে। আগে প্রতিদিন গড়ে ৭ থেকে ১২ হাজার পর্যটক সেন্টমার্টিনে যেতেন এবং মৌসুম ছিল প্রায় পাঁচ মাস। এবার মাত্র দুই মাসে দৈনিক সর্বোচ্চ দুই হাজার পর্যটকের অনুমতি রয়েছে। অথচ প্রতিদিন গড়ে ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার মানুষ টিকিট সংগ্রহের চেষ্টা করছেন। এতে দ্রুত সব টিকিট বিক্রি হয়ে যাচ্ছে।
এদিকে একাধিক পর্যটক অভিযোগ করেছেন, নির্ধারিত দামের বাইরে অতিরিক্ত টাকা দিলে জাহাজের টিকিট পাওয়া যাচ্ছে। অর্থাৎ সীমিত সংখ্যক টিকিট ঘিরে কালোবাজারি গড়ে উঠেছে। তবে এ বিষয়ে হোসাইন ইসলাম বাহাদুর বলেন, প্রশাসনের কঠোর নজরদারি রয়েছে। প্রতিদিন ঘাটে প্রশাসনের লোকজন থাকছেন। এনআইডি, ভ্রমণ পাস ও কিউআর কোড ছাড়া টিকিট কার্যকর নয়। সরাসরি কালোবাজারের সুযোগ নেই। তবে একটি চক্র বিভিন্ন এনআইডি ব্যবহার করে অগ্রিম টিকিট সংগ্রহ করে অতিরিক্ত দামে বিক্রি করছে– এমন কিছু প্রমাণ পাওয়া গেছে। অনেকে ভ্রমণ পাস বা অন্যান্য জটিলতায় শেষ মুহূর্তে ভ্রমণ বাতিল করছেন। সেই টিকিট ফেরত দিলে কিছু টাকা কেটে নেওয়া হয়। ওই বাতিল হওয়া টিকিট দালালরা কিনে নিয়ে বেশি দামে বিক্রি করছে। এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
এ ব্যাপারে অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, আমরা জাহাজ চলাচল শুরুর পর থেকে পর্যটকদের নিরাপত্তা ও সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে সব ধরনের সহযোগিতা করে আসছি। ইতোমধ্যে জালিয়াতির বেশ কিছু ঘটনা সামনে আসায় গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। কালোবাজারির মাধ্যমে পর্যটক হয়রানি কঠোরভাবে দমন করা হবে।
কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানজিলা তাসনিম বলেন, আমাদের টিম ভোর থেকেই প্রতিদিন দুই প্রান্তের ঘাটে (কক্সবাজার ও সেন্টমার্টিন) নিয়োজিত রয়েছে। জালিয়াতি রোধে কঠোরভাবে নজরদারি করা হচ্ছে। এছাড়া আগত পর্যটকদের পরিবেশ সংক্রান্ত নির্দেশনা মেনে চলতে উৎসাহিত করার পাশাপাশি অভিযোগ–অনিয়ম তদারকি করা হচ্ছে এবং কোন অনিয়মের প্রমাণ পেলে সাথে সাথে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।












