সেই বাসচালক ও হেলপার গ্রেপ্তার

চলন্ত বাসে তরুণীকে ধর্ষণের চেষ্টা

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ২৭ মে, ২০২২ at ৪:৫৪ পূর্বাহ্ণ

নগরীর বাকলিয়ায় চলন্ত বাসে তরুণীকে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগে সেই বাসের চালক ও হেলপারকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত বুধবার রাতে হাটহাজারী উপজেলার পশ্চিম কুয়াইশ থেকে বাসচালক এবং নগরীর সিএন্ডবি এলাকা থেকে হেলপারকে গ্রেপ্তার করে বাকলিয়া থানা পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন চালক আনোয়ার হোসেন টিপু (২৪) ও হেলপার জনি (১৮)। উভয়ের বাসা নগরীর চান্দগাঁও থানার সিএন্ডবি এলাকায়। এদের মধ্যে হেলপার জনি আদালতে ঘটনার দায় স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। অন্যদিকে চালক টিপুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিএমপির অতিরিক্ত উপ কমিশনার (দক্ষিণ) নোবেল চাকমা। এদিকে ধর্ষণের চেষ্টার সময় বাস থেকে লাফিয়ে পড়ে আহত তরুণী হাসপাতাল ছাড়লেও এখনও পুরোপুরি সুস্থ হতে পারেননি।

বিভীষিকাময় এই ঘটনায় তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন। ২০ বছর বয়সী ঐ তরুণী নগরীর কালুরঘাট বিসিক শিল্প এলাকায় একটি পোশাক কারখানায় কর্মরত আছেন। নগরীর বহদ্দারহাট মোড়ের আগে চান্দগাঁও এলাকায় তার বাসা।

গত ১৯ মে রাতে নগরীর বাকলিয়া থানার রাহাত্তারপুল এলাকা থেকে ওই তরুণীকে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় উদ্ধার করে স্থানীয়রা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। জানতে পেরে পুলিশ তরুণী কীভাবে আহত হলেন, এ নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করে। তবে পাঁচদিন ধরে সংজ্ঞাহীন ছিলেন ওই তরুণী। মঙ্গলবার (২৪ মে) তার জ্ঞান ফেরে। বুধবার তাকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। এরপর ওই তরুণী নগরীর বাকলিয়া থানায় মামলা দায়ের করেন। এরপর টানা ছয় ঘণ্টার অভিযানে পুলিশ চালক ও হেলপারকে গ্রেপ্তারের পাশাপাশি বাস জব্দ করে।

পুলিশী জিজ্ঞাসাবাদে তরুণী জানান, শ্রমিকদের জন্য নির্ধারিত কারখানার বাসে তরুণী প্রতিদিন আসা-যাওয়া করেন। ১৯ মে রাত ৯টার দিকে কারখানা ছুটি হয়। তিনি বাসায় ফেরার জন্য একই কারখানার আরও ১০-১২ জন শ্রমিকদের সঙ্গে বাসে ওঠেন। বাস বহদ্দারহাট এলাকায় পৌঁছার পর অন্য শ্রমিকরা দ্রুত নেমে যান। পেছনের আসন থেকে এগিয়ে নামার সময় তাকে নিয়ে বাস দ্রুত রাহাত্তার পুলের দিকে এগিয়ে যায়। বাসের চালকের আসনে ছিলেন সহকারী। আর চালক দরজায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। বাস যখন বহদ্দারহাট থেকে রাহাত্তার পুলের দিকে যেতে থাকে, তখন চালক তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। এ সময় চলন্ত বাস থেকে লাফিয়ে নিচে পড়ে জ্ঞান হারান ওই তরুণী।

অতিরিক্ত উপ কমিশনার (দক্ষিণ) নোবেল চাকমা আজাদীকে বলেন, হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর ওই তরুণী এখন নিজের বাসায় অবস্থান করছেন। তার কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়ার পর আমরা রাহাত্তার পুল এলাকার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করি। ফুটেজ থেকে বাসটি শনাক্ত করা হয়। এরপর খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, বাসটি ভাড়ায় নিয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের আনা-নেওয়া করত। বাস শনাক্তের পর চালক ও সহকারীর পূর্ণাঙ্গ তথ্য আমরা সংগ্রহ করে তাদের গ্রেপ্তার করি। সিএন্ডবি এলাকা থেকে বাসটি জব্দ করা হয়েছে।

এদিকে গতকাল আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে হেলপার জনি জানায়, আমি বাসের হেলপার। ড্রাইভারের নাম টিপু। আমাদের বাসে গার্মেন্টসের কর্মীদের আনা নেওয়া করা হয়। গত ১৯ মে আমরা বহদ্দারহাটে গার্মেন্টস কর্মীদের নামিয়ে দেই। ড্রাইভার টিপু একজন গার্মেন্টস কর্মী মেয়েকে সিগন্যাল দেয়। সব মেয়েরা নেমে গেলেও ওই মেয়েটা নামে নাই। টিপু আমাকে বলে গাড়ি চালাতে। আমি প্রথমে রাজি হইনি, পরে ধমক দেওয়াতে রাজি হই এবং গাড়ি চালাতে থাকি। টিপু মেয়েটাকে গাড়ির পেছনে নিয়ে যায়। মেয়েটার সাথে হাতাহাতি হয়। তখন মেয়েটা টিপুকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে গাড়ি থেকে লাফ দেয়। মেয়েটা রাস্তায় পড়ে অজ্ঞান হয়ে যায়। টিপু মেয়েটার হাতব্যাগ রাস্তায় ফেলে দেয়। এরপর আমাকে সরিয়ে নিজে চালকের আসনে বসে গাড়ি ঘুরিয়ে সিএনডবি মোড়ে নিয়ে আসে। আমাকে বেতন বাবদ ৩০০ টাকা দিয়ে টিপু গাড়ি রেখে চলে যায়। আমি ভুল করেছি। ক্ষমা চাই।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনগরীতে মালয়েশিয়া শিক্ষা মেলা শুরু হচ্ছে কাল
পরবর্তী নিবন্ধবখাটের ছুরিকাঘাতে স্কুলছাত্রী রক্তাক্ত