এক হাজার থেকে এক হাজার একশ কোটি বছর বয়সে তাপ হারাতে শুরু করবে আমাদের সূর্য; কিন্তু তাপ হারালেও বাড়তে থাকবে আকার। জীবদ্দশার শেষ পর্যায়ে গিয়ে রেড জায়ান্টে পরিণত হবে আমাদের সৌরজগতের একমাত্র নক্ষত্রটি।
‘রেড জায়ান্ট’ আদতে জীবনের শেষ পর্যায়ে পা দিতে যাওয়া একটি নক্ষত্র; এ পরিস্থিতিতে নক্ষত্রের পৃষ্ঠের তাপমাত্রা কমে আসে, কিন্তু বেড়ে যায় উজ্জ্বলতা। নিউক্লিয়ার ফিউশনের জন্য কোনো হাইড্রোজেনও অবশিষ্ট থাকে না এর কেন্দ্রে।
পুরো মিল্কি ওয়ে গ্যালাক্সির ম্যাপ আঁকার চেষ্টা করছে ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি (ইএসএ)। আর সেই প্রচেষ্টা থেকেই উঠে এসেছে আমাদের সৌরজগতের একমাত্র নক্ষত্রটির অন্তিম মুহূর্তের নানা তথ্য। খবর বিডিনিউজের। মহাকাশ গবেষকরা বলছেন, বয়সের হিসেবে মধ্যবয়স্ক বলা যেতে পারে সূর্যকে। আরও পাঁচশ থেকে সাতশ কোটি বছর পরে জীবনের শেষ প্রান্তে পৌঁছে যাবে নক্ষত্রটি। এর জ্বালানী হাইড্রোজেনও ফুরিয়ে আসবে। শীতল হয়ে আসবে সূর্য, হারাবে উজ্জ্বলতা; তারপর হয় একটি মহাজাগতিক মৃতদেহ অথবা শক্তির শেষটুকু একীভূত করে একটি ‘হোয়াইট ডোয়ার্ফ’ বা বামন নক্ষত্রে পরিণত হবে সূর্য।
ঘটনা প্রবাহ দুঃখজনক শোনালেও হলেও এর কোনোটিই আমাদের জীবদ্দশায় ঘটবে না। মহাকাশ গবেষকদের হিসাবে সূর্য এখন নিজের জীবনের ভরা যৌবন কাটাচ্ছে। বয়সও খুব একটা বেশি নয়, ৪৫৭ কোটি বছর! কিন্তু তারপরও সূর্যের ভবিষ্যৎ নিয়ে কৌতূহলী মহাকাশ গবেষকরা। তবে, প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট সিনেট জানিয়েছে, কৌতূহলী হলেও দূরের অন্য যে কোনো নক্ষত্রের তুলনায় আমাদের সৌরজগতের নক্ষত্রটি নিয়ে গবেষণা বেশ কষ্টসাধ্য কেবল এর উজ্জ্বলতার কারণেই। তাই এর ওপর নজর রাখতেও চাই বিশেষায়িত যন্ত্রপাতি।
এ প্রসঙ্গে ফরাসি মহাকাশ গবেষক ওরলাহ ক্রিভেহ’র মত, আমরা যদি আমাদের নিজের নক্ষত্রকেই বুঝতে না পারি যার ব্যাপারে আমরা অনেক কিছুই জানি না – তাহলে আমরা আমাদের গ্যালাঙির অন্য নক্ষত্রগুলো বোঝার আশা কীভাবে করবো?
ইএসএ’র মিল্কি ওয়ে গ্যালাঙির ম্যাপ আঁকার প্রকল্পে অংশ নিচ্ছেন ক্রিভেহ। ‘গায়্যা’ নামের প্রকল্পটির অংশ হিসেবে মহাকাশের প্রতিবেশীদের নিয়ে ডায়াগ্রাম বানাতে গিয়েই আমাদের সৌরজগতের নক্ষত্রটির ভবিষ্যৎ উদঘাটন করেছেন তারা। হিসাব অনুসারে, সূর্য্য তার সর্বোচ্চ তাপমাত্রায় পৌঁছাবে আটশ কোটি বছর বয়সে গিয়ে। তারপর তাপ হারাতে শুরু করবে নক্ষত্রটি, কিন্তু একই সঙ্গে বাড়তে থাকবে এর আকার।
গায়্যা’র তথ্য বলছে এক হাজার থেকে এক হাজার একশ কোটি বছর বয়সে গিয়ে একটি চোখ ধাঁধানো ‘রেড জায়ান্ট’-এ পরিণত হবে আমাদের সূর্য। তারপর জীবনের শেষ অংশে পা দেবে নক্ষত্রটি।
সিনেট জানিয়েছে, সূর্যের ভবিষ্যৎ নিয়ে জানতে ‘গায়্যা’ প্রকল্পের অংশ হিসেবে সংগৃহিত বিশাল তথ্যভাণ্ডার থেকে তথ্য নিয়েছিলেন গবেষকরা। তারপর সূর্যের সঙ্গে মাধ্যাকর্ষণ, রাসায়নিক গঠন, তাপমাত্রা, আকার ও ভরের হিসেবে মিল আছে এমন নক্ষত্রগুলোর সঙ্গে তুলনা বিচার করেছেন তারা। তবে, নানা বিষয়ে সূর্যের সঙ্গে মিল আছে এমন নক্ষত্র বাছাই করলেও একই বয়সের নক্ষত্র নির্বাচন করেননি গবেষকরা। বরং একই রকমের কিন্তু বিভিন্ন বয়সের নক্ষত্রের তথ্য বিশ্লেষণ করে একটি নক্ষত্রের পুরো জীবনের বিস্তারিত সময়রেখা আঁকার চেষ্টা করেছেন তারা।
ইএসএ জানিয়েছে, সূর্যের সঙ্গে মিল আছে এমন পাঁচ হাজার ৮৬৩টি নক্ষত্রের খোঁজ পেয়েছেন গবেষকরা। ‘গায়্যা’ প্রকল্পে অংশগ্রহণকারীরা বলছেন, এতে কেবল আমাদের সৌরজগতের নক্ষত্রটির ভবিষ্যৎ সম্পর্কে জানা যাচ্ছে- এমনটা নয়। বরং মহাকাশের অন্যান্য নক্ষত্র নিয়ে গবেষকদের নানা প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে গায়্যা প্রকল্পে অধীনে সংগৃহীত তথ্য উপাত্ত।