সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য বিবৃতি কাম্য নয় : হাই কোর্ট

কক্সবাজারের ধর্ষণ নিয়ে রিট আবেদনের শুনানি

| বুধবার , ৫ জানুয়ারি, ২০২২ at ১০:৪৪ পূর্বাহ্ণ

কোনো মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থার ভিন্ন ভিন্ন বিবৃতি বা বক্তব্য দেওয়ার প্রবণতাকে ‘দুঃখজনক’ বলেছে উচ্চ আদালত। কক্সবাজারে পর্যটক নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগের বিচারিক অনুসন্ধানের নির্দেশনা চেয়ে করা এক রিট আবেদনের শুনানির এক পর্যায়ে গতকাল মঙ্গলবার এ মন্তব্য আসে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাই কোর্ট বেঞ্চ থেকে।
শুনানিতে রিট আবেদনকারী আইনজীবী আবদুল্লাহ আল হারুন ভূইয়া রাসেল বলেন, কক্সবাজারের ঘটনায় ট্যুরিস্ট পুলিশ ও র‌্যাবের বক্তব্য অসামঞ্জস্যপূর্ণ। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে তাদের ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য এসেছে। এ নিয়ে এক ধরনের অসঙ্গতি তৈরি হয়েছে। তাছাড়া এ ধরনের স্ববিরোধী বিবৃতি-বক্তব্যের কারণে তদন্তের গ্রহণযোগ্যতাও থাকবে না। সাধারণ মানুষ তাদের ওপর আস্থা রাখতে পারবে না। খবর বিডিনিউজের। তিনি আরও বলেন, তদন্ত সম্পন্ন হওয়ার আগেই তারা যে বক্তব্য বা বিবৃতি দিচ্ছে, তাতে বোঝাই যাচ্ছে তারা কী চাচ্ছে। মনে হচ্ছে, তারা পণ করে নেমেছে ভুক্তভোগী নারীর চরিত্র তাদের মতো করে প্রতিষ্ঠিত করবে। ফলে তদন্ত প্রতিবেদন বিশ্বাসযোগ্যতা হারাবে। এজন্য গত ২২ ডিসেম্বরের ঘটনার বিচারিক অনুসন্ধানের নির্দেশনা চাচ্ছি।
তখন বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক ইনায়েতুর রহিম বলেন, একটা অনুসন্ধান চলছে। এর মধ্যে কি আমরা আরেকটা অনুসন্ধানের আদেশ দেব? তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থার ভিন্ন ভিন্ন বিবৃতি বা বক্তব্য বক্তব্য কাম্য নয়, এটি দুঃখজনক। ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য আসলে পরবর্তীতে সত্য ঘটনা উদঘাটন হলেও সাধারণ মানুষের মধ্যে নানা রকম ধারণা তৈরি হয়।
বিচারক আরও বলেন, মিডিয়া তথ্য খুঁজবেই, তাই মিডিয়াকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। গ্রেপ্তার-মামলা কিংবা তদন্তের স্বার্থে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি এজেন্সি আরেকটি এজেন্সিকে সহযোগিতা করতে পারে। আর তদন্ত চলাকালে তদন্ত কর্মকর্তাদের কথা কম বলাই ভালো।
এরপর আদালত শুনানি মুলতবি (স্ট্যান্ডওভার) রেখে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমারাকে নির্দেশ দেন, কোনো একটি ঘটনা বা মামলার তদন্ত চলাকালে কে কতটুকু কথা বলবে বা বলতে পারবে, এ নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে কথা বলতে।
একই সঙ্গে আদালত রিট আবেদনকারী আইনজীবীকে বলেন, কোনো একটি ঘটনার ‘বিচারিক অনুসন্ধান’ চাওয়ার বিধান কোন আইনে আছে, পরবর্তী শুনানির দিন সে বিষয়ে জেনে আসতে।
আইনজীবী আবদুল্লাহ আল হারুন ভূইয়া রাসেলের সঙ্গে আদালতে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী রাশিদা চৌধুরী নিলু। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।
কঙবাজারে স্বামী ও সন্তানকে আটকে রেখে এক পর্যটককে দল বেঁধে ধর্ষণের অভিযোগের বিচারিক অনুসন্ধান চেয়ে সোমবার হাই কোর্টে রিট আবেদনটি করেন আইনজীবী রাসেল। জেলা ও দায়রা জজ অথবা মুখ্য বিচারিক হাকিমের নেতৃত্বে এ ধর্ষণকাণ্ডের বিচারিক অনুসন্ধান করে ৩০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশনা চাওয়ার পাশাপাশি রুল চাওয়া হয় রিট আবেদনে। এ ধর্ষণকাণ্ডে জড়িত দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, জানতে রুল চাওয়া হয়।
২৫ বছর বয়সী ওই নারীর অভিযোগ, সংঘবদ্ধ একটি চক্র গত ২২ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় কঙবাজার সমুদ্র সৈকতের লাবণী পয়েন্ট থেকে তাকে তুলে নেয়। তার স্বামী-সন্তানকে জিম্মি করে এবং হত্যার হুমকি দিয়ে তাকে ‘কয়েক দফা ধর্ষণ করে’ তিনজন। পরে খবর পেয়ে জিয়া গেস্ট ইন নামের এক হোটেল থেকে ওই নারীকে উদ্ধার করে র‌্যাব। পরদিন ওই নারীর স্বামী চারজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজনকে আসামি করে কঙবাজার সদর থানায় মামলা করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমালিক, মাস্টার ও চালকের দায় পেয়েছে তদন্ত কমিটি
পরবর্তী নিবন্ধলোহাগাড়া থানার সাবেক ওসির বিরুদ্ধে দুদকের মামলা