অনিয়ন্ত্রিত জীবন সমাজে ক্রমাগত সমস্যা সৃষ্টি করে বিধ্বস্তির পথ ডেকে আনে।সহজ,সরল জীবন ও উচ্চ চিন্তা তা নিয়ন্ত্রণ পূর্ব্বক সুখী ও সমৃদ্ধশালী করে তুলে দেশ ও জাতিকে। মানুষ তা বুঝেও বুঝতে চায় না সুনিয়ন্ত্রিত জীবন কতখানি শ্রেয়।ব্যষ্টি,সমাজ,রাষ্ট্রের প্রতিটি ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ অতীব জরুরী।নিয়ন্ত্রিত উন্নতি মানুষের জীবনকে শান্তি ও তৃপ্তিতে ভরে তোলে।প্রবৃত্তির অশুভ ধারায় জীবন পরিচালিত হলে সমাজ ও রাষ্ট্রে ধ্বংস ও বিপর্যয় নেমে আসে।সুনিয়ন্ত্রিত জীবনধারায় উন্নতি লাভে মানুষের দুটি পথ।একটা বীর্য্যোকর্ষ,আর একটা তপস্যা। দুইদিকে নজর না থাকলে তাহলে কিছুই হবে না।উন্নততর গুণগুলি এত বেশী আয়ত্ত করতে হবে যাতে সেগুলি সন্তান সন্ততির মধ্যে সহজভাবে ঢুকে যায় অর্থাৎ বর্তায়।উচ্চ স্তরের চরিত্র ও যোগ্যতা-সম্পন্ন মানুষ জন্ম দেবার শক্তি যদি সমাজে না বাড়ে,তাহলে অবস্হার পরিবর্তন হবে না।সর্ব্বোচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে বড় বড় ডিগ্রী নিয়ে বড় বড় অন্যায় কাজ অবলীলায় করে যাচ্ছি আমরা।তার মূলে কিন্তু জন্মগত অশুদ্ধতা। মানুষের উন্নয়ন আর সুপ্রজনন নিয়ে আমাদের ভাবনা বা গবেষণা নিতান্ত নেই বললে চলে।অথচ গরু- ঘোড়ার বেলায় আমরা কত করি।মানুষের বেলায়ও যে কিছু করবার আছে, তা যে আমাদের মাথায় ঢোকে না।পশুদের প্রজননের বেলায় বংশ পরিচয় দেখে তাদের সুসঙ্গত মিলন ঘটাই। কিন্তু মানুষের মিলনের বেলায় আমরা যা খুশি তাই করি।কোন পর্যায়ে, কোন পরিবেশে,কোন বংশে বা চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য এসব বিষয় চিন্তার চেতনায় না নিয়ে সত্তা বিধ্বংসী বিয়ে তা দিয়ে দিচ্ছি। তার মানে আমরা মানুষকে জন্তু-জানোয়ারের চেয়েও কম মূল্যবান মনে করি বা তা’কে জন্তু জানোয়ার থেকেও অধম করে তুলতে গররাজী নই। আমাদের পশু সুলভ প্রবৃত্তির চাহিদা মিটলেই হলো।সমাজ বাঁচুক আর মরুক তা’তে কী?আজকের আধুনিক সভ্যতার উৎকর্ষ সাধনে জ্ঞান বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় নিয়ত পরীক্ষা নিরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছি।বিশ্বকে হাতের মুঠোয় নিয়ে আসতে অনেকখানি সফল। তথ্য প্রযুক্তির ছোঁয়ায় নিমিষেই সবকিছু হাতের নাগালে।অথচ এই তথ্য প্রযুক্তির উৎকর্ষতা জীবনকে সুনিয়ন্ত্রিত করে উন্নতি ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেওয়ার কাজে ব্যবহার না করে তা’কে জীবন ধ্বংসের কাজে ব্যবহার পূর্বক হীনস্বার্থ চরিতার্থ করার এক অশুভ প্রচেষ্টায় লিপ্ত।মানুষ কেন তার মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটাতে এগিয়ে আসছে না, কেন বা সে মনুষ্যত্বের অবদমন করে পশুত্বের দিকে পা বাড়াচ্ছে। তা আজ গবেষণার দাবী রাখে।সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে মানুষরূপী পশুদের অবাধ বিচরণ সমাজ ও রাষ্ট্রের উন্নতিকে ব্যাহত করছে পলে পলে।চারদিকে এক ভয়ংকর অস্িহরতা।অসম প্রতিযোগিতার নিষ্ঠুর নির্মম শিকারে বিপর্যস্ত মানবিকতা। ভালো কিছু সৃজন,পরিপালন ও পরিপোষণে কেমন জানি এক ধরণের অনীহা।যে কোন সংক্ষিপ্ত উপায়ে অমানুষ হওয়ার প্রচেষ্টা।তাই সময় এখন ফিরে দেখা।কোথায় আমাদের গলদ।যতক্ষণ পর্য্যন্ত আমাদের প্রচেষ্টা থাকবে না মান-হুঁশ সৃষ্টির, ততক্ষণ আমাদের বিবিধ দুর্ভোগ পোহাতে হবে অবিরত।বিবাহ সংস্কার মান-হুঁশ সৃষ্টির অন্যতম নিয়ামক।জন্মগত শুদ্ধতা না আসা পর্য্যন্ত আমাদের ভোগ করতে হবে বিবিধ দুর্যোগ আর দুর্ভোগ।সত্তাকে সংবর্ধিত করতে পারাই হচ্ছে জীবনের মূল লক্ষ্য।সত্তার বিনিময়ে যা করি তাই প্রবৃত্তি। সত্তাকে যদি হারায়,তবে প্রবৃত্তিকে সুনিয়ন্ত্রিত উপভোগ করা যাবে না।সত্তাকে আশ্রয় করেই তো প্রবৃত্তি।তাই প্রবৃত্তিগুলিকে এমনভাবে ভোগ করতে হবে যাতে তারা সত্তাপোষনে ব্যাঘাত না জন্মায়। আর এখানেই আসে আত্মসংযমের কথা। প্রবৃত্তি যখন আমাদের সত্তাকে শোষণ করে তখন আমাদের তা নিরোধ করতে হবে। নিরোধ করতে তখনই আসে শুদ্ধ জন্মের কথা।সংযম,পবিত্রতা আর প্রার্থনায় থেকে পরম সত্তার প্রতি একনিষ্ঠ সক্রিয় টান নিয়ে যখন সন্তান জন্মদানে প্রবৃত্ত হবে তখনই সেখানে শুদ্ধ আত্মার সংযোগে সুসন্তান জন্মদান সম্ভব হয়ে দাঁড়াবে।আদর্শের প্রতি নিষ্ঠা নন্দিত সক্রিয় টান, তাঁকে ভালোবাসা, সেবা করা, তাঁকে প্রীত ও তৃপ্ত করতে যখন মন ব্যাকুল হয়ে উঠবে তখনই স্বর্গসুখ অনুরণিত হবে প্রাণে প্রাণে।সৎ প্রবৃত্তির বিকাশ ঘটবে প্রতি জনে সৎ প্রবৃত্তি যখন স্রষ্টাভিমুখী হয়ে ক্রিয়া করতে থাকবে,কু-প্রবৃত্তি তখন দুরে সরে যাবে। মনে আর বাসা বাঁধতে পারবে না।