‘সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করলে দুর্ঘটনা অর্ধেকে নামিয়ে আনা সম্ভব’

| সোমবার , ১১ অক্টোবর, ২০২১ at ৬:২১ পূর্বাহ্ণ

ব্যতিক্রমী একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে দৈনিক আজাদীতে। গত ৯ অক্টোবর ‘জরুরি বিভাগে বেশি রোগী সড়ক দুর্ঘটনার’ শীর্ষক সংবাদটি সুধীসমাজের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের মাঝে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত রোগীর সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। চিকিৎসা সেবা আর দুর্ঘটনার বিচিত্র তথ্য উপস্থাপিত হয়েছে এতে। জরুরি বিভাগে চিকিৎসা সেবা সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করে সংবাদটি রচিত হয়েছে। হাসপাতাল সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়- এক বছরে (২০২০ সালের জানু-ডিসেম্বর পর্যন্ত) মোট ১ লাখ ৬১ হাজার ৮৮০ জন রোগী জরুরি বিভাগে চিকিৎসা সেবা নিয়েছেন। এর মাঝে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে চিকিৎসা নেয়া রোগীর সংখ্যা ২৭ হাজার ৫১৯ জন। যা মোট রোগীর ১৭ শতাংশ। চিকিৎসা সেবা গ্রহণে এরপরই রয়েছে বুকের ব্যথা, তলপেটে ব্যথা ও শ্বাসতন্ত্রের জটিল তা নিয়ে আসা রোগীরা। এক বছরে বুকের ব্যথা (চেস্ট পেইন) জটিলতায় এখানে চিকিৎসা নিয়েছেন ২৪ হাজার ২৮২ জন। যা মোট রোগীর ১৫ শতাংশ। তলপেট ব্যথা (এবডোমেন পেইন) জটিলতায় সেবা নেয়া রোগীর সংখ্যা ২১ হাজার ৪৪ জন। শতকরা হিসেবে এটি মোট রোগীর ১৩ শতাংশ। আর শ্বাসতন্ত্রের জটিলতা নিয়ে চিকিৎসা সেবা নেয়া রোগীর হার মোট রোগীর ১০ শতাংশ। সংখ্যায় যা ১৬ হাজার ১৮৮ জন। এছাড়া করোনা উপসর্গ নিয়ে ১০ শতাংশ (১৬ হাজার ১৮৮ জন), ডায়রিয়া ও মূত্রনালীর জটিলতায় ৭ শতাংশ (১১ হাজার ৩৩১ জন) করে, বিষ খাওয়া ৫ শতাংশ (৮ হাজার ৯৪ জন), পানিতে ডুবে এবং সাপে কাঁটা ১ শতাংশ (১ হাজার ৬১৮ জন) করে রোগী এক বছরে সেবা নিয়েছেন জরুরি বিভাগে। সড়ক দুর্ঘটনায় আহত রোগী বেশি আসার কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সড়ক দুর্ঘটনা বা যে কোন দুর্ঘটনায় আহতদের হাসপাতালগুলোতে ‘অস্বাভাবিক’ রোগী হিসেবে দেখা হয়। এসব রোগীর কাগজপত্রে ‘পুলিশ কেইস’ উল্লেখ করা থাকে। আর এক্ষেত্রে পুলিশি জটিলতাসহ বাড়তি ঝামেলার আশঙ্কায় অন্যান্য হাসপাতালগুলো এধরনের রোগী ভর্তি নিতে চায় না।
প্রকাশিত এ সংবাদের মাধ্যমে এই খবরটাই গুরুত্ব বহন করে যে সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, আমাদের সড়ক-মহাসড়কের সর্বত্রই চলছে বিশৃঙ্খলার মহোৎসব। এতে প্রাণ যাচ্ছে একের পর এক। সড়ক দুর্ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ায় জনমনে প্রশ্ন, এভাবেই কি দেশের সড়ক-মহাসড়কগুলোতে মানুষের মৃত্যুর বিভীষিকা চলতে থাকবে? কোনভাবেই যেন তা রোধ করা যাচ্ছে না। সড়ক দুর্ঘটনা বন্ধের জন্য সরকারি ও বেসরকারিভাবে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হলেও তা বাস্তবে কার্যকর করা যাচ্ছে না। আমাদের দেশের গাড়ি চালকের সঠিক প্রশিক্ষণ না থাকা, অতি দ্রুত গতিতে গাড়ি চালানো, ওভারটেক করাসহ বিভিন্ন কারণে দেশে সড়ক দুর্ঘটনার হার বেড়ে যাচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। আর এই দুর্ঘটনার শিকার হয়ে আমাদের দেশে প্রতি বছর অসংখ্য মানুষের প্রাণহানি হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মূলত তিন কারণে সড়ক দুর্ঘটনা হচ্ছে। ওভারস্পিড, ওভারটেকিং, যান্ত্রিক ও রাস্তার ত্রুটি। এছাড়া সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাস না পাওয়ার পেছনে রয়েছে নানা কারণ। চালকের লাইসেন্স প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে যানবাহনের ফিটনেস সনদ, গাড়ির অনুমোদন, সড়কের ত্রুটি, সঠিক তদারকির অভাবসহ সকল ক্ষেত্রেই রয়েছে গলদ।
সড়ক দুর্ঘটনা রোধে বিভিন্ন সময়ে নানামুখী পরিকল্পনা নেয়া হলেও বাস্তবায়নের গতি খুবই শ্লথ। এ নিয়ে প্রতি বৈঠকে হইচই হয়। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না। বিশেষজ্ঞরা বলেন, রাজনৈতিক স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে কাজ করলে কখনই সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাস পাবে না।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি বলেছে, মোট সড়ক দুর্ঘটনার ৫৩ শতাংশ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী বেপরোয়া গতি। সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত ও পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করলে বাংলাদেশের সড়ক দুর্ঘটনা অর্ধেকে নামিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে তারা দাবি করেছে। উন্নত দেশগুলোয় সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে যেসব পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় তা খুবই সুনির্দিষ্ট হয়। কিন্তু বাংলাদেশে পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন প্রায় দায়সারা গোছের। বছরে কী পরিমাণ দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটছে, তা বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত ও পরিকল্পনা নেওয়া প্রয়োজন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে