সুখের সংসার ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি

মো. আবদুল মালেক | বুধবার , ১৯ অক্টোবর, ২০২২ at ৬:২৩ পূর্বাহ্ণ

গোল্ডেন জুবিলি। পঞ্চাশ বছরের বিবাহিত জীবনের মধুর সহাবস্থানের এক অধ্যায়। সেই অধ্যায় উদযাপনের জন্য দাওয়াত দিতে এসেছেন অনেক দিনের পুরনো বন্ধু নোয়েল মেন্ডেজ। অনুষ্ঠান উদযাপিত হবে পাঁচ তারকা হোটেল রেডিসনে। সুবর্ণজয়ন্তী বলে কথা। এর নিচে কোনো ভেন্যু ভাবাই যায় না। তারিখ ছিল ৭-৯-২২। বুঝতেই পারছেন তাঁরা লাকি সেভেন দেখেই বিয়ের দিন ঠিক করেছিলেন। সত্যিই লাক তাদের ফেভার করেছে।

আমি যখন কোনো বিবাহ আসরে যাই, তখন বর-কনের সঙ্গে ছবি তুলতে ডাকে। সেই সময় বর-কনের মা-বাবাকেও ডেকে নিই। কারণ আমার ছবি তাদের কাছে মূল্যবান না-ও হতে পারে। তবে তাদের মা-বাবা সঙ্গে থাকলে ছবিটা হয়তো তত মূল্যহীন মনে হবে না। তা অ্যালবামে স্থান পেতেও পারে।
বিবাহ আসরে গুরুজনেরা বর-কনেকে আশীর্বাদ করতে বলে। আমি বলি, সংসার সুখের হয় দুজনের গুণে। আমি বলি না, সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে। আসলে সংসার তো দুজনের; একজনের ওপর সব ভার চাপিয়ে দিতে আমি রাজি নই।

যাক, আমি ও কামরুন ৯টায় রেডিসনে হাজির হলাম। গিয়ে একটু আশ্চর্যই হলাম। কারণ হল প্রায় ভর্তি। প্রচণ্ড শব্দে শক্তিশালী সাউন্ড বক্সগুলোতে ইংরেজিতে গান হচ্ছে। গাইছেন ভারত থেকে আগত জনৈক শিল্পী; দরাজ গলায় ইংরেজি গান গাইছিলেন। কিছুক্ষণ শোনার পর আমিও একটা গানের রিকুয়েস্ট করেছিলাম, অন্ধ গায়ক স্টিভ ওয়ান্ডারের ‘ও ঔঁংঃ পধষষবফ ঃড় ংধু ও ষড়াব ুড়ঁ’. (আই জাস্ট কলড টু সে আই লাভ ইউ)। গানটি আমি তাঁর গলায় লাইভ শুনেছিলাম সত্তর দশকে লাসভেগাসের অনুষ্ঠানে। আমার অনুরোধে গানটি করল তাঁর ছেলে। মোটামুটি ভালো। মঞ্চের সামনে একটি নাচের আসর পাতা হয়েছে। দেখলাম, সেখানে গোল্ডেন কাপল গোল্ডেন গাউনের গোল্ডেন স্যুট পরে গান ও মিউজিকের তালে তালে নাচছেন। ভালো লাগল।

ভালো লাগল আমাদের চট্টগ্রাম শহরে প্রায় প্রতিষ্ঠিত খ্রিস্টান ও তার বন্ধু-বান্ধব মুসলমান ও হিন্দু সম্প্রদায়ের অনেককে দাওয়াত দিয়েছেন। সকলেই প্রায় উপস্থিত হয়েছেন। আসলে চট্টগ্রাম সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সবচেয়ে বড় উদাহরণ। আমি আমার জীবনে কখনো চট্টগ্রামে কোনো সাম্প্রদায়িক অসম্প্রীতির কথা শুনিনি।
এই সম্প্রীতির ওপর আমার একটু বক্তব্য আছে। ২০০৩ সালে আমাদের অফিসে ভারত থেকে কয়েকজন অতিথি এসেছিলেন। তাদের সাথে কলকাতার ডেপুটি মেয়রও ছিলেন। তাঁরা সম্পাদক খালেদ সাহেবের সঙ্গে দেখা করতে আজাদী অফিসে এসেছিলেন। তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে চলে যাচ্ছিলেন। তখন আমার সঙ্গে দেখা। তিনি আমার কাছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কথা জানতে চাইলে আমি বললাম, আমাদের চাটগাঁয় সম্প্রীতির কোনো অভাব ছিল না।

কিন্তু যেদিন থেকে ‘হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের’ জন্ম নিল সেদিন থেকেই ঐক্যে ফাটল ধরেছে। বলা যায় ভাঙন শুরু হয়েছে। কারণ, ঐক্য পরিষদ আমরা ৮০% মুসলমানকে বাদ দিয়ে ২০% কে নিয়েই ঐক্য করেছে। আমাদের বাইরে রেখে দিয়েছে। আমার মনে হয়, তাদের উচিত ছিল আমাকেও সঙ্গে নিয়ে ঐক্য পরিষদ গঠন করা। কারণ যে অনৈক্য সামাল দিতে ঐক্য পরিষদ করলেন তিন দল নিয়ে, তার অর্থ দাঁড়ায়, আপনারা ঐক্য করলেন বাকি ৮০% মানুষের বিরুদ্ধে। ব্যাপারটা কি তা দাঁড়ায় না? আমার কথার উত্তর দেওয়ার আগে তাঁদের সঙ্গে থাকা সমন্বয়কারী মহিউদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে অ্যাপয়েন্টমেন্টের কথা বলে তাঁদের নিয়ে দ্রুত চলে গেলেন।

আমি বলতে পারি, আমার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু কুণ্ডেশ্বরীর মালিক প্রয়াত পি আর সিনহা ও রূপম কিশোর বড়ুয়া। বড়ুয়া আমাকে তার বড় ভাই হিসাবে মানে। আমিও তাকে ছোট ভাই হিসেবে জানি। সম্প্রীতির উদাহরণ আর কী হতে পারে?

১০টায় ডিনার দেয়া হলো। খাওয়ার দরাজ আয়োজন। তাঁদের ৩ ছেলে। তারাও তাদের বৌ নিয়ে অনুষ্ঠানে হাজির। আর কথা না বলে চলুন খেতে বসে যাই।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরূপপুরের দ্বিতীয় চুল্লিপাত্রের কাজ উদ্বোধন আজ
পরবর্তী নিবন্ধফাঁসির আসামি দীন মোহাম্মদের মৃত্যু