সুখেন্দু চক্রবর্তী : নিষ্ঠাবান শিল্পীসত্তা

| বৃহস্পতিবার , ৭ জুলাই, ২০২২ at ৫:৫৯ পূর্বাহ্ণ

সুখেন্দু চক্রবর্তী।বিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে বাংলা সঙ্গীত জগতের খ্যাতিমান শিল্পী। সুরের আকাশে তিনি ‘খোকা চক্রবর্তী’ নামে সুপরিচিত ছিলেন। তিনি গীতিকার, সুরকার, পরিচালক ও কণ্ঠশিল্পী হিসেবে দীর্ঘ চার দশকেরও বেশি সময় ধরে সঙ্গীত চর্চার সাথে যুক্ত ছিলেন। সুখেন্দু চক্রবর্তীর জন্ম ১৯২৮ সালে কুমিল্লার ঠাকুরপাড়ায়। কুমিল্লার খ্যাতিমান সঙ্গীতজ্ঞ সমরেন্দ্র পালের কাছেই তার সঙ্গীতে হাতেখড়ি হয়। পরবর্তী সময়ে ‘রাম বাবু’ নামে খ্যাতিমান সঙ্গীতজ্ঞ অগ্রজ ভাই সত্য চক্রবর্তীর কাছে তালিম নেন। ওস্তাদ মোহাম্মদ হোসেন খসরুর কাছেও তিনি সংঙ্গীত বিষয়ে শিক্ষা নিয়েছেন। পাশাপাশি তিনি এস্রাজ, সেতার ও তবলাবাদনে পারদর্শীতা অর্জন করেন। রচনা করেছেন প্রচুর গণ সঙ্গীত ও আধুনিক গান। গীতিকার ফেরদৌস হাসান ভুঁইয়ার লেখা ‘ডিম পাড়ে হাসে, খায় বাঘডাসে’-এ জনপ্রিয় গানটির মধ্যদিয়ে ষাটের দশকে বাংলার স্বাধিকার আন্দোলনে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন। সুখেন্দু চক্রবর্তী সভাসম্মেলনে বহু সঙ্গীত পরিবেশন করেন। তিনি যেসব জনপ্রিয় গান গেয়ে খ্যাতি লাভ করেন, তার মধ্যে ‘বাংলার বুকে ওই মৃত্যুর কালো দূত’, ‘অন্ধকার থেকে আলোর পৃথিবী হাতছানি মেরে ডাকছে’, ‘আমাদের হাতের মুঠি তাদের পিষে দলবে’, ‘ওরা নাকি আমাদের ক্ষেত আর খামারের সবুজের স্বপ্ন কেড়ে নিতে চায়’, ‘মানিক তোমার যুদ্ধে যাবে মাগো বিদায় দাও’ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। তিনি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ঐতিহাসিক কাগমারী মহাসম্মেলনে, ঢাকায় অনুষ্ঠিত যুবসম্মেলনে ও কুমিল্লার ভিক্টোরিয়া কলেজের মহাসম্মেলনে সঙ্গীত পরিবেশন করে ব্যাপক সাড়া জাগান। তিনি খবরের কাগজওয়ালা, ফেরীওয়ালা, জেলে, কামার, কুমার, ছুতার ইত্যাদি পেশাজীবী মানুষের জীবনসম্পৃক্ত গান করেন।
তবে সুখেন্দু চক্রবর্তী গণসঙ্গীত-শিল্পী হিসেবে পরিচিতি লাভ করলেও অন্যান্য গানেও তাঁর সুরেলা কণ্ঠ ছিল। শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে তাঁর পারদর্শিতা এবং চিরায়ত বাংলা গানের সঙ্গে তাঁর নিবিড় সংযোগ, দুইই তাঁকে সঙ্গীতগুরুর মর্যাদা দান করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুননাহার হলে দীর্ঘদিন তিনি সঙ্গীত বিষয়ে শিক্ষকতা করেন। সুখেন্দু চক্রবর্তী ভাষা আন্দোলনের চেতনায় উদ্দীপ্ত ছিলেন। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের সময় তিনি সংগ্রামী চেতনার গান পরিবেশন করেন। এ চেতনার স্বতঃস্ফূর্ততা তাঁকে মুক্তিযুদ্ধে অনুপ্রাণিত করে। জনসাধারণকে সংগ্রামী চেতনায় উজ্জীবিত করা ছিল তাঁর সঙ্গীত-সাধনার এক প্রধান দিক। ১৯৮০ সালের ৭ জুলাই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএই্ দিনে
পরবর্তী নিবন্ধমাননীয় মেয়র মহোদয় সমীপে