মো. নুরুন নবী। সীতাকুণ্ডের বারৈয়াঢালা ইউনিয়নের টেরিয়াইল গ্রামের এ কৃষক মৌসুম ভেদে নানান ফসল চাষ করেন। শীত মৌসুমে তিনি চাষ করেছেন লাউ, শিম, টমেটো ইত্যাদি। নবী জানান, এবার এক একর জমিতে লাউ চাষ করেছেন তিনি। আশ্বিন মাসের দিকে লাউ চাষের জন্য বীজ, সার, বাঁশের কঞ্চি, শ্রমিক মজুরি ও অন্যান্য খরচ মিলিয়ে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার টাকা। ইতোমধ্যে লাউ বিক্রি করেছেন প্রায় লাখ টাকার মতো। সামনে আরো অন্তত ৫০ হাজার টাকার লাউ বিক্রির ব্যাপারে আশাবাদী তিনি।
অপর কৃষক মো. আলী বলেন, বাজারে লাউয়ের চাহিদা ব্যাপক। মৌসুমের শুরুতে একটি লাউ ৬০ থেকে ৮০ টাকায়ও বিক্রি হয়েছিল। এখন প্রতিটি লাউ বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকায়।
তিনি জানান, সীতাকুণ্ডে বিপুল পরিমাণ সবজি আবাদ হওয়ায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পাইকাররা প্রতি হাটের দিনে এখানে এসে সবজি কিনে নিয়ে যান। তাদের হাত ধরেই লাউ চলে যায় ঢাকা, চট্টগ্রাম থেকে শুরু করে বিভিন্ন অঞ্চলে। এভাবে মানুষের খাদ্যের চাহিদা পূরণে অবদান রাখছেন এই চাষিরা। সীতাকুণ্ডের বারৈয়াঢালা ইউনিয়নের টেরিয়াইল ব্লকের দায়িত্বে থাকা উপ–সহকারী কৃষি কর্মকর্তা পিপাস কান্তি চৌধুরী জানান, শুধু তার ইউনিয়ন এলাকায় এ বছর ১৫ হেক্টর জমিতে ১০০ জনের বেশি কৃষক লাউ চাষ করেছেন। প্রত্যেকেরই ভালো ফলন হয়েছে। কৃষকরা বাজারে পেয়েছেন ন্যায্য মূল্যও। ফলে প্রায় সবাই দুই থেকে তিনগুণ লাভ করছেন।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার তিন হাজার কৃষক লাউচাষ করে থাকেন। এখানে পাহাড়, সমতল ভূমি কিংবা সাগর উপকূলের সর্বত্রই প্রচুর লাউয়ের চাষ হয়। কৃষকরা নিজেরা যেমন এ সবজি খান তেমনি বিক্রি করে বিপুল পরিমাণ অর্থ আয় করেন। স্থানীয় কৃষকরা জানান, সাধারণ মানুষ যেন বিষমুক্ত সবজি পেতে পারেন সেই লক্ষে তারা ক্ষেতে কিটনাশক ব্যবহার না করে করেন ফেরোমন ফাঁদ। ক্ষেতের ক্ষতিকর পোকারা এই ফাঁদে আটকা পড়ে মারা যায়। স্থানীয় এনজিও ইপসা একটি প্রকল্পের মাধ্যমে অসংখ্য কৃষককে ফেরোমন ফাঁদ স্থাপন করে দিয়েছেন।
এনজিও সংস্থা ইপসার কৃষি বিষয়ক কর্মকর্তা সুমন দেবনাথ জানান, চলতি মৌসুমে বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনে তারা পল্লি কর্ম–সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) অর্থায়নে উপজেলায় প্রায় দুই হাজার ফেরোমান ফাঁদ বিনামূল্যে বিতরণ করেছেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ বলেন, এখানে লাউয়ের উৎপাদন ভালো হওয়ায় কৃষকরা ক্রমশ লাউ চাষের ব্যাপারে আগ্রহী হচ্ছেন। তারা সবাই প্রায় দ্বিগুণ লাভ করছেন। জৈব পদ্ধতিতে বিষমুক্ত লাউ উৎপাদন হচ্ছে এখন। চলতি বছর উপজেলায় ২০০ হেক্টর জমিতে তিন হাজারের বেশি কৃষক লাউ চাষ করে লাভবান হয়েছেন বলে জানান তিনি।