সীতাকুণ্ডে জাহাজভাঙা ইয়ার্ডে ৪৮ দুর্ঘটনায় নিহত ৪, আহত ৫৮

বাৎসরিক দুর্ঘটনার প্রতিবেদন উপস্থাপন

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ at ১০:৫৭ পূর্বাহ্ণ

সীতাকুণ্ড উপকূলে গড়ে উঠা জাহাজভাঙা শিল্পে ২০২৫ সালের শ্রমিক দুর্ঘটনার প্রতিবেদন গতকাল আঞ্চলিক অংশীজনদের সামনে উপস্থাপন করা হয়েছে। নগরীর আগ্রাবাদস্থ একটি হোটেলে বাৎসরিক দুর্ঘটনার প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। প্রতিবেদনে জানানো হয়, ২০২৫ সালে জাহাজভাঙা ইয়ার্ডগুলোতে ৪ জন শ্রমিক নিহতসহ মোট ৪৮টি দুর্ঘটনায় ৫৮জন শ্রমিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এসব দুর্ঘটনার মধ্যে ৩০টি ছিল মারাত্মক, ১৪টি হালকা এবং ৪টি ঘটনায় একাধিক শ্রমিক একসঙ্গে আহত হয়েছেন।

উপস্থাপিত তথ্য অনুযায়ী, দিনের বেলায় সংঘটিত দুর্ঘটনার সংখ্যা ২৯টি, যা মোট দুর্ঘটনার প্রায় ৬০ শতাংশ। এসব দুর্ঘটনার প্রধান কারণ ছিল ভারী লোহার কাজ, কাটিং ও লোডিং কার্যক্রম। অপরদিকে, রাতের বেলায় ১৯টি দুর্ঘটনা (প্রায় ৪০ শতাংশ) ঘটেছে, যেখানে আলো স্বল্পতা, শ্রমিকদের অতিরিক্ত ক্লান্তি এবং পর্যাপ্ত তদারকির অভাবকে প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, মোট দুর্ঘটনার প্রায় ৬৩ শতাংশে শ্রমিকদের হাতপা কাটা বা থেঁতলে যাওয়া, হাড় ভাঙা, মাথা, চোখ ও বুকে গুরুতর আঘাত, আগুন ও বিস্ফোরণে দগ্ধ হওয়া এবং স্থায়ী অঙ্গহানির মতো ঘটনা ঘটেছে। দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণে দেখা যায়, ভারী লোহা বা গার্ডার পড়ে আঘাতের ঘটনা সবচেয়ে বেশি (প্রায় ৩৫ শতাংশ)। এরপর আগুন ও গ্যাস বিস্ফোরণ ২০ শতাংশ এবং উচ্চতা থেকে পড়ে যাওয়া ও যন্ত্রপাতিজনিত দুর্ঘটনা প্রত্যেকটি প্রায় ১৫ শতাংশ। সভায় বক্তারা জানান, মোট দুর্ঘটনার ৭০ শতাংশের বেশি ঘটেছে কাটার হেলপার, কাটারম্যান, ফিটারম্যান ও ওয়্যার গ্রুপের শ্রমিকদের মধ্যে। বিশেষ করে জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত বর্ষা মৌসুম এবং কাজের চাপ বৃদ্ধির সময় দুর্ঘটনার সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। অধিকাংশ ইয়ার্ডে পর্যাপ্ত ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম যেমন হেলমেট, গগলস ও গ্লাভসের ঘাটতি, ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় কাটিং কার্যক্রম, গ্যাস ও অক্সিজেন লাইনের ত্রুটি, প্রশিক্ষিত শ্রমিকের অভাব এবং রাতের কাজে পর্যাপ্ত আলো ও সুপারভিশন না থাকাকে দুর্ঘটনার প্রধান কারণ হিসেবে তুলে ধরা হয়।

সভা থেকে একাধিক সুপারিশ উত্থাপন করা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, লাইসেন্সবিহীন ও অদক্ষ ঠিকাদারের অধীনে শ্রমিক নিয়োগ বন্ধ করা, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী রাত্রিকালীন কাজ বন্ধ রাখা, শ্রমিকদের জন্য বিশেষায়িত হাসপাতাল স্থাপন, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রাথমিক চিকিৎসা টিম ও পর্যাপ্ত অ্যাম্বুলেন্স নিশ্চিত করা, ন্যূনতম ৩৬ হাজার টাকা মাসিক মজুরি নির্ধারণ, নিয়োগপত্র ও পরিচয়পত্র প্রদান, দৈনিক ৮ ঘণ্টার বেশি কাজ না করানো এবং উচ্চতায় কাজের সময় বাধ্যতামূলক সেফটি বেল্ট ও হেলমেট ব্যবহার নিশ্চিত করা।

সভায় সভাপতিত্ব করেন জাহাজভাঙা শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ফোরামের আহ্বায়ক তপন দত্ত এবং সঞ্চালনা করেন ফোরামের সদস্য সচিব ও বিলসএর সেন্টার কোঅর্ডিনেটর ফজলুল কবির মিন্টু, জাহাজভাঙা শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ফোরামের যুগ্ম আহ্বায়ক ও জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এ এম নাজিম উদ্দিন, শ্রম দপ্তরের উপপরিচালক রোমানা আক্তার, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক কুলসুম আক্তার সোমা, ইপ্সার কোঅর্ডিনেটর মো. আলী শাহীন, বিএমএসএফ নেতা নুরুল আবসার, বিএমএফএর যুগ্ম সম্পাদক মো. আলী এবং সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ও আজকের পত্রিকার ব্যুরো চিফসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধতারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে স্বাগত মিছিল
পরবর্তী নিবন্ধমীরসরাইয়ে ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার