সিসিটিভির বাইরে ৫ কেজি ওজনের মরা আঁইড়

মাদার্শায় হালদার বাঁকে ডলফিনের খেলা

রাউজান প্রতিনিধি | রবিবার , ৪ এপ্রিল, ২০২১ at ৬:২৯ পূর্বাহ্ণ

হালদা নদীর মাদার্শা রামদাশ মুন্সিরহাট পয়েন্টে ছোট-বড় ডলফিনের লাফালাফির দৃশ্য এখন নদীর পাড়ে বেড়াতে আসা দর্শনার্থীদের নজর কাড়ছে। এই এলাকায় নৌ পুলিশ স্থাপন করেছে বেশ কয়েকটি সিসি ক্যামেরা। এ কারণে এখানে এখন যান্ত্রিক নৌযান ও মাছ শিকারিদের উৎপাত বন্ধ হয়েছে। অপরদিকে সিসি ক্যামেরার আওতামুক্ত এলাকায় এখনো চুরি করে মাছ শিকার চলছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন। গতকাল শনিবার বেলা ১১টার দিকে হাটহাজারীর মধ্যম মাদার্শা বড়ুয়া পাড়ার কাছে একটি ৫ কেজি ওজনের মরা আঁইড় মাছ মরা পাওয়া গেছে। প্রায় এক সপ্তাহ আগে নদীর আমতুয়ার কাছে ৭ কেজি ওজনের আরেকটি আঁইড় মাছ ভাটার সময় পাথর ব্লকে আটকে পড়লে স্থানীয় এক জেলে তুলে নিয়ে যায় বলে স্থানীয়রা জানান। মধ্যম মাদার্শা এলাকায় পাওয়া মাছটি তুলে নেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার কাজে নিয়োজিত শিক্ষার্থীরা।
গতকাল বিকালে নদীর পাড়ে দেখা যায়, এই এলাকায় কয়েকশ নারী-পুরুষ শিশুদের নিয়ে জোয়ারের পানিতে পরিপূর্ণ হালদার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করছেন। কেউ কেউ নদীতে নৌকা ও সাম্পানে চড়ে উচ্ছ্বাসে মেতেছেন। এখানে নদীর ভাঙন রোধে প্রায় আড়াই কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বসানো হয়েছে পাথর ব্লক। বসার জন্য তৈরি করা ব্লকে বসে অনেকে নদীর বাঁকের জলরাশিতে ডলফিনের খেলা করার দৃশ্য উপভোগ করছেন। কেউ দাঁড়িয়েছেন ক্যামেরা হাতে।
ঘুরতে আসা মানুষের সাথে কথা বলে জানা যায়, এই বাঁকে জোয়ারের সময় ছোট-বড় ডলফিন খেলা করে। তা দেখতে বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ ছুটে আসে। এই স্পটে মানুষের আনাগোনা বেড়ে যাওয়ায় নদীর পাড়ে বসেছে একাধিক অস্থায়ী দোকান। দোকানিরা জানান, শুক্রবারসহ সরকারি বন্ধের দিনে এখানে বেড়াতে আসেন কয়েক হাজার মানুষ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নিয়ে নদী পরিদর্শন করছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক হালদা গবেষক ড. মঞ্জুরুল কিবরিয়া। তিনি ডলফিনের খেলা করার দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করেন।
তিনি আজাদীকে জানান, নদীর পাড়ে সিসি ক্যামেরা বসানোর সুফল পাওয়া যাচ্ছে। নিরাপদ স্থান পাওয়ায় ডলফিন এখন বংশবিস্তার ঘটাচ্ছে। বাচ্চা নিয়ে মা ডলফিন মনের আনন্দে মেতে উঠেছে।
তিনি বলেন, আগামীতে কালুরঘাট থেকে সর্তাঘাট পর্যন্ত হালদা নদীকে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনার সব প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। আশা করা হচ্ছে অল্প কিছুদিনের মধ্যে এ কাজ সম্পন্ন হবে।
নদীতে এখন প্রচুর মা মাছ বিচরণের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, প্রজনন মৌসুমে যাতে কেউ চুরি করে মা মাছ মারতে না পারে সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রেখেছে নদীপাড়ের মানুষ। তিনি নিজেও ঘন ঘন নদীতে নেমে পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। আঁইড় মাছ মারা পড়ার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, রুই, কাতলা, মৃগেল ও কালিবাউশ রক্ষা করা আমাদের টার্গেট। এছাড়া শুশুক (ডলফিন), চিংড়ি, আঁইড়সহ বিভিন্ন প্রজাতির জলজ প্রাণীদের রক্ষায়ও নজর রয়েছে। সকল জলজ প্রাণীর অভয়াশ্রম হচ্ছে এই হালদা। সরকার এই নদীকে বঙ্গবন্ধু হেরিটেজ ঘোষণা করেছে। সিসিটিভি লাগানো সম্পন্ন হলে সব ধরনের মাছ শিকার বন্ধ হবে।

মিজান নামে নদীপাড়ের এক বাসিন্দা বলেন, সিসি ক্যামেরার কারণে নদীতে জাল পাতা বন্ধ হলেও নদীর পূর্বপাড়ের ফাঁড়িরকুল (পশ্চিম বাড়িঘোনা) পুরনো হালদায় অনেকেই এখনো রাতে জাল পেতে মা মাছ মারছে। মাঝেমধ্যে হাত জালেও কেউ কেউ বড় মাছ উঠিয়ে নিচ্ছে। শিকার করা মাছ তারা গোপনে নোয়াপাড়া পথেরহাট ও শহরের দিকে নিয়ে বিক্রি করে দিচ্ছে।
মৌসুমি ডিম সংগ্রহ করার প্রস্তুতিতে থাকা নদীর পাড়ের মৎস্যজীবীরা বলেন, নদীতে মা মাছের বিচরণ দেখে তারা আশাবাদী। তাদের ধারণা, প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে না পড়লে এই মৌসুমে রেকর্ড সংখ্যক ডিম তারা সংগ্রহ করতে পারবেন। এমন আশার কথা জানিয়েছেন ড. মঞ্জুরুল কিবরিয়াও।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনৈরাজ্য ও অপচেষ্টার অপরাধে অপরাধী বিএনপি : তথ্যমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধমন জুড়ানো পরিবেশ শুরুতেই সাড়া