নগরের সিঙ্গাপুর–ব্যাংকক মার্কেটের এক ব্যবসায়ীকে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) স্টেট অফিসার রেজাউল করিম ও প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা কমান্ডার লতিফুল হক কাজমীসহ সংস্থাটির স্ট্রাইকিং ফোর্সের সদস্যরা মারধর করছেন এমন একটা ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। মারধরের শিকার মনির হোসেন বাপ্পি নামে ওই ব্যবসায়ী সিঙ্গাপুর ব্যাংকক মার্কেট দোকান মালিক সমিতির প্রচার সম্পাদক।
২ মিনিট ৭ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, মার্কেটের অফিস কক্ষের চেয়ারে বসা বাপ্পী আঙুল নেড়ে কথা বলছেন। অপর একটি চেয়ারে বসা লতিফুল হক কাজমীও একই ভঙ্গিতে কথা বলছেন। এক পর্যায়ে প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা দাঁড়িয়ে যান। তার পাশে থাকা রেজাউল করিমও দাঁড়িয়ে যান। এসময় একজন এসে বাপ্পীর হাত ধরে ফেলেন। তখন রেজাউল করিম এসে থাপ্পর মারতে থাকেন। এক পর্যায়ে প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা বাপ্পীকে থাপ্পর দেন। আরো কয়েকজন এসে তাকে চেয়ার থেকে টেনে তুলে ফেলে বাইরে নিয়ে যায়। এসময় চসিকের স্ট্রাইকিং ফোর্সের আরো সদস্যরা তাকে লাঠি দিয়ে মারতে থাকেন। ভিডিতে বাপ্পীর পাশে থাকা আরেকজনকে দেখা গেছে, সবাইকে নিভৃত করার চেষ্টা করছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাপ্পী আজাদীকে বলেন, আমাকে মারধরের ঘটনা বৃহস্পতিবার দুপুর ১২ টার। কর্পোরেশনের সাবেক মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার তার ৩৭১ নং দোকানটি ভাড়া দেন। দোকান ভাড়া নিয়ে যিনি ব্যবসা করে আসছিলেন, মালামাল ক্রয় বাবদ ও ব্যাংক লোন নিয়ে প্রায় দুই কোটি টাকার দেনা হয়।
এ ক্ষেত্রে ব্যবসায়ী সমিতির নিয়ম অনুযায়ী যদি কোনো দোকানদার দেনা রেখে পালিয়ে যান, তাহলে দোকান মালিককে ওই দোকানদারের সালামি বা অগ্রিম টাকা মালিক সমিতিকে জমা দিতে হবে। আমরা মালিক সমিতির পক্ষ থেকে দোকান মালিককে এ কথা জানালে তিনি তা দিতে অস্বীকৃতি জানান। গত বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে চসিকের স্টেট অফিসার ও প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা আমাদের অফিসে এসে আমার ওপর অতর্কিত হামলা চালান। এ ঘটনায় মালিক সমিতির পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার রাতেই মেয়র মহোদয়কে জানিয়েছি। তিনি আমাদের সোমবার দেখা করতে বলেছেন এবং এ ঘটনার যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন। এ বিষয়ে জানার জন্য একাধিকবার মোবাইলে কল দিলেও চসিকের স্টেট অফিসার রেজাউল করিম ফোন রিসিভ করেননি।
চসিকের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা কমান্ডার লতিফুল হক কাজমী আজাদীকে বলেন, ‘এক ভদ্রলোক সিটি কর্পোরেশনে চাকরি করতেন। উনি তার মেয়ের নামে একটি দোকান বরাদ্দ নিয়েছেন। সেটা এক লোককে ভাড়া দিয়েছিলেন। প্রায় ৮ মাস আগে ভাড়াটিয়া চলে গেছেন। এখন মালিক ভাড়া পাচ্ছেন না। মার্কেট কমিটি ওনাকে ঘুরাচ্ছেন। কমিটির কাছে গেলে বলে, আজ আসেন, কাল আসেন। সেলামি বাবদ টাকাটা ওরা ধান্দা করে খেয়ে ফেলতে চাচ্ছেন। এ বিষয়ে মেয়র মহোদয়কে একটা অ্যাপ্লিকেশন দেওয়া হয়েছে, মেয়র মহোদয় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছেন, আমরা গেলাম।’
তিনি বলেন, ‘আমরা মার্কেটের সেক্রেটারির সঙ্গে কথা বলছিলাম, সেখানে সে (যে মার খেয়েছে) এসে তর্ক–বিতর্ক শুরু করে দিয়েছে। আমি ইউনিফর্ম পরা আছি। স্টেট অফিসার সিটি কর্পোরেশনের সমস্ত স্টেটের মালিক, তিনি সব বরাদ্দ দেন। তার সঙ্গে হাত তুলে তুলে তর্ক–বিতর্ক শুরু করেছে। আমরা উচ্ছেদে গিয়েছিলাম, তখন হয়তো সে বেয়াদবি করায় দুয়েকটা চড় থাপ্পর দিছে। আর কিছু না।’
সিঙ্গাপুর ব্যাংকক মার্কেট দোকান মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক আনিছুর রহমান চৌধুরী আজাদীকে বলেন, ‘ব্যাংকক মার্কেটের একটি দোকানের মালিক কর্পোরেশনের সাবেক এক কর্মকর্তা। তার দোকান তিনি এগারো লাখ টাকা জামানতে এক ব্যবসায়ীকে ভাড়া দিয়েছিলেন। ওই ব্যবসায়ী অনেকের টাকা পয়সা নিয়ে পলাতক। এরপর মার্কেটের ব্যবসায়ী সমিতি ওই দোকান বন্ধ রাখে। এগারো লাখ টাকা দোকানের মালিক কর্পোরেশনের সাবেক কর্মকর্তাকে দেয়ার জন্য বলে। কিন্তু নিয়ম নীতি না মেনে ওই কর্মকর্তা টাকাও দিবেন না আবার তার দোকানও খুলতে চান। তাই তিনি প্রভাব খাটিয়ে কর্পোরেশনের লোকজন নিয়ে আসেন। তার কথামতো কাজ না করায় এস্টেট অফিসার সাবেক কর্মকর্তার হয়ে মার্কেটের প্রচার সম্পাদককে মারধর করে হুমকি দিয়ে যান।’