‘সিগন্যাল শুরু হলে ঘুমাতে পারি না’

সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়িতে বেড়িবাঁধের ২শ মিটার বিলীন

লিটন কুমার চৌধুরী, সীতাকুণ্ড | সোমবার , ২৭ মে, ২০২৪ at ৮:০১ পূর্বাহ্ণ

ঘূর্ণিঝড়ের সিগন্যাল শুরু হলেই রাতে আর ঘুমাতে পারি না। গত দুদিন ধরে কারো চোখে ঘুম নেই। শুধু আমি না, ঘরের কেউ ঘুমাতে পারে না। সবার মধ্যে একটা আতঙ্ক তৈরি হয়। বাড়ির ছোট শিশুরাও ভয়ে থাকে। গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্রসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বস্তায় ভরে প্রস্তুত থাকি। অবস্থা খারাপ দেখলে ঘরবাড়ি ফেলে স্কুলের দিকে চলে যাই।

এভাবে নিজেদের অসহায়ত্বের কথা বলছিলেন সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি ইউনিয়নের ঘোড়ামরা এলাকার জেলেপাড়ার বাসিন্দা সুখময় দাস। ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে সুখময় ছাড়াও সোনাইছড়ি ইউনিয়নের উত্তর, দক্ষিণ ও মধ্যম ঘোড়ামরা গ্রামের প্রায় দুই হাজার পরিবারকে দুশ্চিন্তায় দিন কাটাতে হয়। কারণ, কয়েক বছর আগে ঘোড়ামরা এলাকায় বেড়িবাঁধের ২০০ মিটার অংশ বিলীন হয়ে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বলছে, ২০০ মিটার ওই বেড়িবাঁধ বিলীন হয়ে গেছে দুই বছর আগে। কিন্তু জেলেদের দাবি, পাঁচ থেকে ছয় বছর ধরে তারা এই দুর্ভোগে আছেন।

ঘূর্ণিঝড় রেমালের খবর শুনে উপকূলীয় এলাকার লোকজনের মাঝে আতংক সৃষ্টি হয়েছে। রেমাল গত রাতে উপকূলে আঘাত হেনেছে। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সাগর উত্তাল রয়েছে।

সুখময় বলেন, বেড়িবাঁধ না থাকায় ঘূর্ণিঝড়ের সিগন্যাল লাগে না। অমাবস্যা ও পূর্ণিমার জোয়ারেও বাড়িতে পানি উঠে যায়। বর্ষাকালে প্রতিদিন বাড়িতে জোয়ারের পানি ঢোকে। তখনো নিয়মিত দুর্ভোগ পোহাতে হয়।

একই এলাকার বাসিন্দা সুজন দাস বলেন, পাঁচ বছর ধরে এই দুর্ভোগ পোহালেও কেউ আমাদের জন্য এগিয়ে আসেননি। খালের উপর স্লুইচগেট আছে, কিন্তু বেড়িবাঁধ নেই।

সোনাইছড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মনির আহমেদ বলেন, বেড়িবাঁধটি রক্ষণাবেক্ষণ না করা ও জাহাজ ভাঙা ইয়ার্ডগুলোতে বড় বড় স্ক্র্যাপ জাহাজ বিচিং করার কারণে বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সম্প্রতি প্রবল জোয়ারে বেড়িবাঁধের ৪শ মিটারের অধিক ভেঙে গিয়ে জোয়ারের পানি লোকালয়ে ঢুকে তিনটি গ্রাম পুরো প্লাবিত হয়। লবণাক্ত পানির কারণে কৃষি জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। বেড়িবাঁধটি সংস্কার করা না হলে এ এলাকায় কয়েশ একর কৃষি জমি অনাবাদি থাকবে।

বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শওকত আলী জাহাঙ্গীর বলেন, আমার এলাকায় বেড়িবাঁধের বিশাল অংশ ভেঙে গেছে। ঘূর্ণিঝড় রেমালের কারণে বাসিন্দাদের মধ্যে আতংক দেখা দিয়েছে। তবে উপজেলা প্রশাসনের দিকনির্দেশনায় রেমাল মোকাবিলায় প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।

সীতাকুণ্ডের ইউএনও কে এম রফিকুল ইসলাম বলেন, ২২ কিলোমিটারের ওই বেড়িবাঁধের ২০০ মিটার অংশ বিলীন হয়ে আছে, সেটা জানতাম না। স্থানীয় বাসিন্দারা কেউ জানায়নি। এখন ২০০ মিটারের জন্য সীতাকুণ্ড উপকূল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে আছে। বেড়িবাঁধটি দ্রুততম সময়ে সংস্কার বা পুনর্নির্মাণের জন্য ব্যবস্থা নিতে পাউবোর উপসহকারী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

উপজেলা পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী এস এম তারেক বলেন, তিন বছর আগে বেড়িবাঁধটি একেবারে বিলীন হয়ে গেছে। এরপর ছোট আকারের একটি প্রকল্প দিয়ে টাকা বরাদ্দ নিয়েছিলাম। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দারা তাদের জমি থেকে মাটি দিতে রাজি হয়নি। ফলে বেড়িবাঁধটি আর করা হয়নি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদুর্যোগ মোকাবিলায় রেড ক্রিসেন্ট স্বেচ্ছাসেবকরা সর্বদা প্রস্তুত: পেয়ারুল
পরবর্তী নিবন্ধবঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগ মহানগর শাখার সভা