বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ভুয়া ওয়েবসাইট খুলে মিথ্যা ঘোষণায় আমদানি করা পণ্য খালাসে জালিয়াতির ঘটনায় সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠানের মালিকসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, চট্টগ্রামে সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠান খান এন্টারপ্রাইজের মালিক গোলাম মওলা খান, তার ছোট ভাই গোলাম রসুল খান ও মন্ত্রণালয়ের ভুয়া ওয়েবসাইটের ডেভেলপারকারী আবুল খায়ের পারভেজ। গত রোববার ও সোমবার পৃথক অভিযানে নগরীর চট্টেশ্বরী ও মোগলটুলী এলাকা থেকে তাদের ২য পৃষ্ঠার ৩য় কলাম
গ্রেপ্তার করে সিআইডি। এ ঘটনায় গতকাল গ্রেপ্তার তিনজনই আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন বলে জানান সিআইডি চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিশেষ পুলিশ সুপার মুহাম্মদ শাহনেওয়াজ খালেদ। জবানবন্দি শেষে পরে আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বলে জানান তিনি।
জানা গেছে, চলতি বছরের শুরুতে ১৩ হাজার ৫২০ কেজি চীনাবাদাম ও ৪ হাজার ৫১০ কেজি জলপাই আমদানির ঘোষণা দিয়ে ঢাকার চকবাজারের মেসার্স সিয়াম এন্টারপ্রাইজের পণ্যের একটি চালান চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছে। পণ্যটি খালাসের জন্য সিয়াম এন্টারপ্রাইজের মনোনীত সিএন্ডএফ প্রতিষ্ঠান খান এন্টারপ্রাইজ ২৩ এপ্রিল কাস্টমসে বিল অব এন্ট্রি দাখিল করে। কিন্তু গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তথ্য পেয়ে কাস্টমসের এআরআই শাখা চালানটির খালাস স্থগিত করে শতভাগ কায়িক পরীক্ষা করেন। এতে ওই চালানে চীনা বাদাম ও জলপাইয়ের বদলে উচ্চশুল্কের ২১ হাজার ৬০ কেজি শিশুখাদ্য গুঁড়োদুধ নিয়ে আসার বিষয়টি ধরা পড়ে। এসময় ঘোষণার বাইরে পণ্য আনার অভিযোগে আমদানিকারককে শুল্ক বাবদ ৬৫ লাখ টাকা, শতভাগ জরিমানা বাবদ ৬৬ লাখ টাকা এবং ১০ লাখ টাকা বিমোচন জরিমানার আদেশ দেয় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।
গত ১১ অক্টোবর আমদানিকারকের পক্ষ থেকে সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠান খান এন্টারপ্রাইজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি ছাড়পত্র সনদ কাস্টমসে দাখিল করে। ১৩ অক্টোবর এ সংক্রান্ত বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি চিঠিও দাখিল করে প্রতিষ্ঠানটি। তাতে বিএসটিআইর ছাড়পত্র এবং কাস্টমসের আরোপিত জরিমানা ও শুল্ক পরিশোধ সাপেক্ষে চালানটি ছাড় দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। কাস্টমসের এআরআই শাখা যাচাই-বাছাই করে দেখতে পায়, পণ্যছাড়ের জন্য জমা দেওয়া ক্লিয়ারেন্স পারমিটে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যে ওয়েবসাইটের ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে সেটি ছিল ভুয়া।
এই ঘটনায় গত ২৯ অক্টোবর নগরীর বন্দর থানায় চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজের সহকারী শুল্ক কর্মকর্তা সুজয় দেবনাথ বাদী হয়ে আমদানিকারক ও সিএন্ডএফ প্রতিষ্ঠানের মালিকের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলা সিআইডি তদন্ত করে তিনজনকে গ্রেপ্তারের পাশাপাশি জালিয়াতির রহস্য উদঘাটন করে। সিআইডি জানায়, সিএন্ডএফের মালিক গোলাম মওলা খানকে গ্রেপ্তারের পর সে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে তার ভাই গোলাম ফারুক খান প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসায়িক কার্যক্রম দেখাশোনা করেন। খান এন্টারপ্রাইজের লাইসেন্স ব্যবহার করে রাসেল ও রানা নামে দু’জন ব্যবসায়ী চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য ছাড় করানোর ব্যবস্থা করেন।
রাসেল ও রানাকে খুঁজতে গিয়ে সিআইডি কর্মকর্তারা নগরীর মোগলটুলি এলাকার বাসিন্দা আবুল খায়ের পারভেজের সন্ধান পায়। আবুল খায়ের বন্দর-কাস্টমস ভিত্তিক ভূয়া নথিপত্র সৃজন করে জালিয়াতির সাথে জড়িত বলে সিআইডি জানায়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ভুয়া ওয়েবসাইটটিও সে তৈরি করেছে।
পারভেজকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ওয়েবসাইট তৈরি করলেও তার কাছে তথ্য আপলোড করার জন্য কোনো ডোমেইন ছিল না। তিনি নগরীর ও আর নিজাম রোডের ইশতিয়াক টেকনোলজি নামে একটি প্রতিষ্ঠান থেকে ২ হাজার আটশ টাকায় ডোমেইন রেজিস্ট্রেশন করেন। এরপর আগ্রাবাদে ক্লিক সফট বিডি নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক মাহবুবুর রহমানের কাছ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকায় হোস্টিং স্পেস ভাড়া নেন। পরে সেই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ভূয়া ছাড়পত্র সনদ তৈরি করে দেওয়া হয় রাসেল ও রানাকে।
পুলিশ সুপার শাহনেওয়াজ খালেদ জানান, রাসেল ও রানা এর আগেও পারভেজকে দিয়ে কাস্টমসে দাখিলের জন্য ভুয়া নথিপত্র তৈরি করেছে। এরা তিনজনই মূলত জালিয়াতির হোতা। পারভেজ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রী এবং বাণিজ্য সচিবের ছবি ব্যবহার করে এই ভুয়া ওয়েবসাইট তৈরি করে। আমরা রাসেল ও রানাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালাচ্ছি।